চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

করোনায় কমেছে অপরাধ!

শিবুকান্তি দাশ, ঢাকা অফিস

৯ মে, ২০২০ | ৫:৪৬ অপরাহ্ণ

করোনা ভাইরাসের প্রভাবে কমেছে অপরাধ প্রবণতা। এ প্রবণতা ধরে রাখতে পারলে অদূর ভবিষৎ বাংলাদেশ বিশ্বে নজির স্থাপন করবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, থানায় মামলা রেকর্ডের হার অনেক কম। চট্টগ্রাম ও রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সর্বত্রই এমন অবস্থা বিরাজমান। ধর্ষণসহ নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনাও কমে এসেছে। তবে ঘরবন্দী থাকায় পারিবারিক সহিংসতা বেড়েছে। করোনা ভাইরাসজনিত উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এমন চিত্র বেরিয়ে এসেছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, অপরাধের মাত্রা বিশ্ব জুড়েও হ্রাস পেয়েছে।
তবে এমন পরিস্থিতি কতদিন বজায় থাকবে সেটা নিয়েও সন্দিহান সমাজ বিজ্ঞানী ও অপরাধ বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, সারাদেশে সাধারণ ছুটি চলছে। চলছে অঘোষিত লকডাউন। ফলে ঘরবন্দী বেশির ভাগ মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে বাইরে মানুষের চলাফেরা কম এবং বেশির ভাগ সময় ঘরে থাকায় অপরাধে জড়িয়ে পড়ার মানসিকতায় পরিবর্তন এসেছে। তবে ঘরে অবস্থানের ফলে নারী ও শিশুর প্রতি পারিবারিক সহিংসতা বেড়েছে।
তারা আরো বলছেন, করোনাকালে কর্মহীন হয়ে পড়ছে বিপুলসংখ্যক মানুষ। তাই সার্বিক অবস্থার উন্নতি না হলে অপরাধ প্রবণতা কমে যাওয়ার এই চিত্র যে কোনো সময় পাল্টে যেতে পারে।
গণমাধ্যম থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, গত বছর ঢাকায় ২০৮টি খুনের ঘটনা ঘটে। এ বছরের প্রথম দুই মাসে ঘটেছে ২১টি খুনের ঘটনা। আর করোনাকালে মার্চে ১৭টি ও এপ্রিলে ৮টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। একইভাবে ২০১৯ সালে ডাকাতি ও দুস্যুতার ঘটনা ঘটেছিল ১৭৬টি। কিন্তু এ বছরের প্রথম তিন মাসে ৫৩টি ডাকাতি ও দস্যুতা সংঘটিত হয়েছে। এপ্রিলে এই সংখ্যা কমে এসেছে ৬টিতে।
এছাড়া ২০১৯ সালে অস্ত্র, বিস্ফোরক, মাদকদ্রব্য ও চোরাচালান উদ্ধারের ঘটনায় ১৭ হাজার ১৬৬টি মামলা হয়েছিল। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ৩ হাজার ৭২৯টি মামলা হয়। এপ্রিল মাসে হয়েছে ১২৩টি উদ্ধারজনিত মামলা। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে চুরির ঘটনা ঘটেছে ৫৪৯টি। আর এপ্রিলে ৪৬ চুরির ঘটনা ঘটেছে। ধর্ষণসহ নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনাও কমে এসেছে। গত বছর ধর্ষণ, এসিড নিক্ষেপ, নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটে ২ হাজার ৪০৮টি। এ বছরে এপ্রিলে ঘটেছে ৪৯টি। তবে করোনা পরিস্থিতিতে নারী ও শিশুর প্রতি বেড়েছে পারিবারিক সহিংসতা। বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন পরিচালিত এক জরিপে বলা হয়েছে, এপ্রিল মাসে ৪ হাজার ২৪৯ জন নারী ও ৪৪৬ জন শিশু এই সহিংসতার শিকার। এর মধ্যে ১ হাজার ৬৭২ জন নারী ও ৪২৪ জন শিশু নতুন এই পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন। এছাড়া বাল্যবিবাহের ঘটনা ঘটেছে ৩৩টি।
এদিকে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, আমেরিকার অন্যতম সহিংস শহর শিকাগোতে গত কয়েক সপ্তাহের মাদক সংক্রান্ত অপরাধ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪২ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। শহরটিতে অন্যান্য অপরাধও কমেছে প্রায় সমহারে। ল্যাটিন আমেরিকা জুড়ে দশকের পর দশক ধরে চলা অপরাধও হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে গেছে। এল সালভাদোরে গত বছরও ৬০০ খুনের ঘটনা ঘটে। তবে করোনা ভাইরাসে সেই পরিস্থিতি বদলে গেছে। একই দৃশ্য ভারতসহ আরো অনেক দেশে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট