চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

করোনাকালেও চেম্বার খোলা রেখে রোগীর সেবা করে গেছেন ডা. মঈন

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৫ এপ্রিল, ২০২০ | ১:৫১ অপরাহ্ণ

করোনার প্রাদুর্ভাবের পরও হাসপাতাল এবং চেম্বারে চিকিৎসা দিয়ে আসছিলেন তিনি। করোনাক্রান্তিকালে রোগীদের অসহায়ত্বের কথা ভেবে তাঁর চেম্বার খোলা রেখেছিলেন।হ্যাঁ তিনি ডা. মঈন।নি:স্বার্থভাবে সাহসিকতার সাথে রোগীসেবা দানের সময় করোনা আক্রান্ত হন তিনি। গতমাসের শেষ সপ্তাহ থেকেই করোনাভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কায় নিজে থেকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকেন। আজ বুধবার (১৫ এপ্রিল) সকাল ৭টা বেজে ৫০ মিনিটে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃতুবরণ করেন।

জানা যায়, আক্রান্ত হওয়ার পরে প্রথমে সিলেটের শহীদ শামসুদ্দিন আহমেদ হাসপাতালে এবং তারপর ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সর্বশেষে শারীরিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় তাকে আইসিইউতে নেয়া হয়। সেখানেই লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থা। ডা. মঈন সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিসিন বিভাগের কনসালটেন্ট ছিলেন দীর্ঘদিন। এরপর ২০১৭ সালে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে দক্ষিন সুরমা থেকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজে যোগদান করেন। সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে তাঁর অসীম সাহসিকতা, মানবিকতা ও ত্যাগের কথা উল্লেখ করে পোস্ট দিয়েছেন ডা. মঈন এর সহকর্মী,ছাত্র ও শুভানুধ্যায়ীরা।

ফেসবুকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজের তার এক সহকর্মী ডা. সাঈদ এনাম লিখেন, ‘আমি গত ডিসেম্বরে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি নিয়ে সিলেট ওসমানী মেডিকেলে যোগদান করলে সেখানে নিয়মিত ডা. মঈন ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হত। মানুষ হিসেবে মানুষের মধ্যে অনেক দুর্বলতা থাকে কিন্তু ডা. মঈন ভাইকে আমরা এমন একজন মানুষ হিসেবে দেখেছি জেনেছি যিনি আসলেই আপাদমস্তক একজন ভালো মানুষ এবং একজন ভালো মেডিসিন ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ। আর ভালো মানুষ বলেই তিনি করোনা-ক্রান্তিকালে রোগীদের অসহায়ত্বের কথা ভেবে তার চেম্বার খোলা রেখেছিলেন। কিন্ত নিতান্ত দুঃখজনক ভাবে তিনি করোনাভাইরাস সংক্রমিত হয়ে যান।’

ডা. মঈনের ছাত্র, ডা. ইমাম হোসাইন মামুন লেখেন, ‘ডা. মঈন স্যার আমার দেখা ঠাণ্ডা মাথার মানুষদের একজন। এত মোলায়েম-কোমল গলায় কথা বলতেন! কখনো রাগতেও দেখিনি স্যারকে। করোনা প্রাদুর্ভাব-পরবর্তী সময়েও হাসপাতাল ও চেম্বারে চিকিৎসা দিয়ে গেলেন। সম্মুখ সমরে থেকে আক্রান্ত হলেন। স্যারের হাত দুটো আর কখনো ব্যাসিক লাইফ সাপোর্ট ট্রেনিং প্রোগ্রামে আমাদের সিপিআর দেয়া শেখাবে না। আর কখনো এ হাত এগজামিনেশন শেখাবে না ক্লাসে। স্যার আর কখনো শেখাবেন না জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে কিভাবে সারভাইভ করতে হয়। আর কখনো ওয়ার্ডে সবক দেবেন না, সঠিক উপায়ে ব্লাড প্রেশার মাপা শেখাবেন না। রাউন্ড দিতে গিয়ে সিম্পটম অ্যানালাইসিস করবেন না প্রিয় ছাত্রদের সঙ্গে।

সিলেট ওসমানী মেডিকেলের সাইকিয়াট্রি বিভাগের রেসিডেন্ট ডা বাপ্পা আজিজুল লিখেন, ডা. মঈন স্যারকে আমি সিলেট মেডিকেলে পেয়েছি। নিপাট ভদ্রলোক। অমায়িক। স্কলার, একাডেমিক ও ছাত্রবান্ধব। গতবছর ডেঙ্গু প্রকোপের সময় নিরলস পরিশ্রম করেছেন। করোনা যোদ্ধা ডা. মঈন স্যারকে নিয়ে আমরা অত্যন্ত গর্বিত। আল্লাহ তাকে শহীদ হিসাবে কবুল করুন। তাকে জান্নাতের সর্বোচ্চ মর্যাদা দান করুন।’

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

পূর্বকোণ/এম

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট