চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

সন্তানের লাশ নিয়ে মায়ের ২১ ঘণ্টার আহাজারি

পূর্বকোণ ডেস্ক

১০ এপ্রিল, ২০২০ | ১০:৪৫ অপরাহ্ণ

নড়িয়া উপজেলার কলারগাঁও গ্রামের সুশান্ত কর্মকার (৩৪) পা ফোলা ও জ্বর-সর্দি ও শ্বাসকষ্টে মঙ্গলবার (৭ এপ্রিল) দুপুরে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি হন। করোনা আক্রান্ত সন্দেহে তাকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হলেও পরদিন বুধবার ( ৮ এপ্রিল) দুপুরে তিনি মারা যান। বৃহস্পতিবার ( ৯ এপ্রিল) করোনায় আক্রান্ত নয় বলে নিশ্চিত করেন সিভিল সার্জন অফিসের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের চিকিৎসক ‌মো. আবদুর রশিদ।

এদিকে, করোনা সংক্রমণের ভয়ে যুবকটি মারা যাওয়ার পর স্বজন, গ্রামবাসী ও আত্মীয়রা কেউই দেখতে আসেননি। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া করার জন্যও কেউ এগিয়ে আসেননি। ছেলের লাশের পাশে মা গঙ্গা রানি কর্মকার আর্তনাদ করে যাচ্ছিলেন আর ফোনে স্বজন, অন্য সন্তান আর গ্রামবাসীকে ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করছিলেন। কিন্তু কেউ তার আর্তনাদে সারা দেয়নি। এমনকি সুশান্তর বড় ভাই, চার বোন ও বোনের পরিবারের সদস্যরাও ফিরে তাকায়নি।

তখন শরীয়তপুর জেলা পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক রাজন পাল উদ্যোগ নেন। তিনি ওই গ্রামবাসী ও ডিঙ্গামানিক শ্রীশ্রী সত্য নারায়ণের সেবা মন্দিরের কমিটি নিয়ে সভা করেন। সিদ্ধান্ত নেয়া হয় মন্দিরের শ্মশানে ওই যুবককে দাহ করা হবে। কিন্তু একাজে যুক্ত হতে কেউ রাজি হচ্ছিলেন না।

এ সময় রাজনের সঙ্গে যোগ দেন জেলা পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সহসভাপতি ত্রিনাথ ঘোষ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিহির চক্রবর্তী, সদস্য দিলীপ ঘোষ, নড়িয়া উপজেলা পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সভাপতি চন্দন ব্যানার্জি। তারা বৃহস্পতিবার সকালে ওই গ্রামবাসী ও যুবকের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন। কিন্তু লাশের কাছে কেউ আসতে রাজি হচ্ছিলেন না।

এমন পরিস্থিতিতে পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের নেতারা বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ভেদরগঞ্জ উপজেলার দুই যুবক ও নড়িয়া উপজেলার তিন যুবক দাহ কাজ করতে রাজি হন। দুপুর পৌনে ১টার দিকে নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্সে করে ছেলের লাশ নিয়ে ডিঙ্গামানিকে শ্রীশ্রী সত্য নারায়ণের সেবা মন্দিরে রওনা হন বৃদ্ধ গঙ্গা রানি।

মৃত সুশান্ত কর্মকারের মা গঙ্গা রানি বলেন, জীবনের শেষ বয়সে ছেলের লাশের ভার আমাকে এভাবে একা বইতে হবে তা ভাবতে পারিনি। এভাবে মানুষের মানবতা হারিয়ে গেল? কি হবে এ পৃথিবীতে বেঁচে থেকে। কিসের জন্য বেঁচে থাকা। মানুষের কল্যাণের জন্যই যদি কাজ না করতে পারি। কেউ আমার আর্তনাদ শুনল না- সন্তান, স্বজন, গ্রামবাসী কেউ না। আমার মতো এমন পরিণতি কাউকে যেন দেখতে না হয়।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সত্য নারায়ণের সেবা মন্দিরে ওই যুবকের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার কাজ শেষ করা হয়। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার কাজ সম্পন্ন করেছেন, ভেদরগঞ্জ উপজেলার রামভদ্রপুর গ্রামের পরিমল বাড়ৈ, রণজিৎ মণ্ডল, নড়িয়ার বাড়ৈ পারা গ্রামের উত্তম পাল, ঘড়িসার গ্রামের অনুকূল ঘোষ ও চাকধ গ্রামের সঞ্জয় বণিক।

 

 

 

পূর্বকোণ-আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট