চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

করোনায় ১৪ ভাগ মানুষের ঘরে নেই খাবার : ব্র্যাক

নিজস্ব প্রতিবেদক

১০ এপ্রিল, ২০২০ | ১০:২৭ অপরাহ্ণ

করোনাভাইরাসের কারণে কর্মহীন হয়ে পড়েছে মানুষ। দেশের ৮৯ শতাংশ মানুষ উপার্জনহীন হয়ে দরিদ্রসীমার নিচে নেমে গেছেন । ব্র্যাকের এক জরিপে জানা গেছে, উপার্জনহীন দেশের ১৪ ভাগ মানুষের ঘরে নেই কোন খাবার। আজ শুক্রবার (১০ এপ্রিল) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এমন তথ্য জানিয়েছে ব্র্যাক।

ব্র্যাকের জরিপে বলা হয়, নিম্নআয়ের মানুষ জীবিকায় করোনাভাইরাস প্রতিরোধের পদক্ষেপের মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৮৯ শতাংশ দারিদ্র্যরেখার নিম্নসীমার নিচে নেমে গেছেন। করোনাভাইরাসের পূর্বে আয়ের ভিত্তিতে জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ২৪ শতাংশ ছিলেন দারিদ্র্যরেখার নিম্নসীমার নিচে এবং ৩৫ শতাংশ ছিলেন দারিদ্র্যরেখার ঊর্ধ্বসীমার নিচে। অর্থাৎ বর্তমান পরিস্থিতে চরম দারিদ্র্য আগের তুলনায় ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

করোনা মহামারির আগে জরিপে অংশ নেয়া ২ হাজার ৬৭৫ জনের গড় আয় ছিল ১৪ হাজার ৫৯৯ টাকা। যাদের মধ্যে ৯৩ শতাংশ জানিয়েছে এই করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর তাদের আয় কমেছে। মার্চ ২০২০ এ এসে তাদের গড় আয় দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৭৪২ টাকায়। অর্থাৎ তাদের পারিবারিক আয় ৭৫ শতাংশের মতো কমে এসেছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম (৮৪ শতাংশ), রংপুর (৮১ শতাংশ) এবং সিলেট বিভাগের (৮০ শতাংশ) মানুষের আয় কমেছে সবচেয়ে বেশি। সরকারি ছুটি বা সামাজিক দূরত্বের কারণে ৭২ শতাংশ মানুষ কাজ হারিয়েছেন বা তাঁদের কাজ কমে গেছে। ৮ শতাংশ মানুষের কাজ থাকলেও এখনো তারা বেতন পাননি। কৃষিকাজে সম্পৃক্তদের (৬৫ শতাংশ) তুলনায় অ-কৃষিখাতের দিনমজুর বেশি (৭৭ শতাংশ) ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ৫১ শতাংশ রিকশাচালক, ৫৮ শতাংশ কারখানা শ্রমিক, ৬২ শতাংশ দিনমজুর, ৬৬ শতাংশ হোটেল/রেস্তোরাঁকর্মী জানান- চলতি মাসে তাঁদের আয় নেমে এসেছে শূন্যের কোঠায়। ১৪ ভাগ মানুষের ঘরে কোনো খাবারই নেই। ২৯ শতাংশের ঘরে আছে ১ থেকে ৩ দিনের খাবার।

ব্র্যাকের জরিপে বলা হয়, দেশের ৬৪ জেলায় ২ হাজার ৬৭৫ জন নিম্নআয়ের মানুষের মধ্যে জরিপ পরিচালনা করা হয়। গত ৩১শে মার্চ থেকে ৫ই এপ্রিলের মধ্যে এ জরিপ পরিচালিত হয়। করোনাভাইরাসের স্বাস্থ্যগত দিকগুলো সম্পর্কে নিম্নআয়ের মানুষের উপলব্ধি এবং এর অর্থনৈতিক সংকট সম্পর্কে ধারণা পেতে জরিপটি পরিচালিত হয়।

ব্র্যাকের এ জরিপে সরকারের পদক্ষেপের বিষয়েও মানুষ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। ৬৮ শতাংশ মানুষ করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারের সাধারণ ছুটির ঘোষণাকে সমর্থন করেন এবং শতকরা ৭ ভাগ তা সমর্থন করেন না। ছুটি বিষয়ে সাধারণ মতামত হলো, সরকারি ছুটি গড়ে ২২ দিন হতে পারে। এর মধ্যে ৬৪ ভাগ মানুষ ১৪ দিনের বেশি ছুটির পক্ষে।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সরকারের ভূমিকা যথেষ্ট বলে মনে করেন ৬৪ শতাংশ মানুষ। বাকিদের মধ্যে ৩১ শতাংশ গ্রামের মানুষ এবং ৪০ ভাগ শহরের মানুষ এই ধারণাকে সমর্থন করেননি। মাত্র ৪ শতাংশ মানুষ (যাদের বেশির ভাগের বাস শহরে) জরুরি ত্রাণ পেয়েছেন বলে জানান (৫ এপ্রিল পর্যন্ত)। এ পরিস্থিতিতে সরকারের খাদ্য সহায়তা জরুরি বলে মনে করেন ৪৭ শতাংশ মানুষ। যেখানে শতকরা ২০ ভাগ চান নগদ অর্থ সহায়তা । শহরের মানুষের (৪৪ শতাংশ) চেয়ে গ্রামের মানুষেরাই (৫০ শতাংশ) খাদ্য সহায়তার পক্ষে বেশি মত দেন।

এই পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক সংকটের সঙ্গে কীভাবে মানিয়ে নিতে হবে তা জানে না ৩৬ শতাংশ মানুষ। ২৩ শতাংশ আশা করেন (যার মধ্যে নারী ৩৮%) এই পরিস্থিতি আরও দীর্ঘায়িত হলে সরকার তাঁদের সহায়তা করবে। শহরের মানুষ গ্রামের মানুষের চেয়ে সরকারি সহায়তার ব্যাপারে বেশি আশাবাদী। যদি পরিস্থিতি খুব সহসাই স্বাভাবিক না হয়, তাহলে ধার দেনার চিন্তা করছেন ১৯ ভাগ মানুষ।

জরিপে উঠে আসা অবস্থার প্রেক্ষিতে ব্র্যাক কিছু সুপারিশ করেছে:

  • টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর মাধ্যমে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে এর ব্যবস্থাপনার জন্য করণীয় সম্পর্কে পৃথক, বড় আকারের প্রচারাভিযান চালাতে হবে।
  • সামাজিক দূরত্বের পদক্ষেপ সঠিক বাস্তবায়নের জন্য দেশব্যাপী খাদ্য সংকটে পড়া মানুষের কাছে দ্রুতই খাদ্য পৌঁছাতে হবে নয়তো তাঁদের ঘরে রাখা সম্ভব হবে না। জীবিকা অর্জনে তাঁরা বাইরে বের হতে বাধ্য হবেন।
  • শহর থেকে বিপুলসংখ্যক মানুষ গ্রামে ফিরে গেছেন যাঁরা গ্রামকেন্দ্রিক সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতাভুক্ত নন। তাঁদের কাছে জরুরি খাদ্যসামগ্রী পৌঁছানোর জন্য দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি।

 

 

 

 

 

 

পূর্বকোণ-আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট