চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

আজ পবিত্র শবে বরাত

রায়হান আজাদ

৯ এপ্রিল, ২০২০ | ২:৩০ পূর্বাহ্ণ

আজ পবিত্র শবে বরাত। যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও গভীর ভক্তি-শ্রদ্ধা সহকারে মুসলিম উম্মাহ এ রাতকে উদযাপন করে। শব ফার্সি শব্দ, এর অর্থ রাত আর বরাত মানে ভাগ্য বা অদৃষ্ট। সুতরাং শবে বরাত অর্থ হচ্ছে ভাগ্য রজনী; অবশ্য ইসলামে এ পরিভাষার যথার্থ ভিত্তি পাওয়া যায় না। অধিকাংশ ইসলামী চিন্তাবিদগণ এর নাম ‘লাইলাতুল বারাআহ’, ‘শবে বারাআহ’ বা ‘নি®কৃতির রাত’-গুনাহ থেকে ‘মুক্তির রাত’ বলে থাকেন। হাদীসের পরিভাষায় এ রাত্রিকে ‘লাইলাতুন্ নিসফি মিন শা’বান’ বা শা’বান মাসের মধ্যরাত্রি হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। এ রাতের তাৎপর্য ও ফজিলত সম্পর্কে নবী আকরাম (সা.) থেকে বহু হাদীস রেওয়ায়েত হয়েছে। তবে সবচেয়ে বিশুদ্ধতম যে হাদীসটি পাওয়া যায় তা হচ্ছে, ‘হযরত আবু মুসা (রা.) নবী করিম (সা.) থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, ‘আল্লাহ তা’য়ালা শা’বান মাসের মধ্য রাতে এক বিশেষ ভূমিকায় অবতীর্ণ হন এবং মুশরিক ও হিংসুক ব্যতিরেকে সবাইকে ক্ষমা করে দেন’ (মুসনাদ)। ছহীহ হাদীস গ্রন্থ ইবনে মাজার অন্য একটি রেওয়ায়েতে এ রাত্রে আল্লাহ পাক হত্যাকারী ও হিংসুক ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করে দেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আল কুরআনে শিরককে জুলমে আজীম বা জঘন্য অন্যায় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ শিরক আজ আমাদের সমাজের রন্দ্রে রন্দ্রে ঢুকে পড়েছে। তেমনিভাবে প্রতিনিয়ত হত্যা-হিংসা-বিদ্বেষ-জিঘাংসা আমাদের জীবনযাত্রাকে কলুষিত করে তুলেছে। এ পাপগুলো আল্লাহর কাছে এত মারাত্মক ও অমার্জনীয় যে তিনি এমন পূণ্যময় রাতেও এ পাপের বোঝা বহনকারীকে ক্ষমা করবেন না। তাই আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাত পেতে এসব পাপ থেকে তাওবা করে আমাদেরকে খালিছ নিয়্যতে ঈমানের পথে ফিরে আসতে হবে।
আলোচ্য হাদীসে একটি বিষয় সুস্পষ্ট যে মধ্য শা’বানের রাতে ক্ষমা পাওয়ার শর্ত হলো মুমিনের অন্তর-আত্মাকে শিরক ও হিংসা-বিদ্বেষমুক্ত রাখা। তাই কেউ যদি এ রাতের পুরোটাই নফল ইবাদত করে কিন্তু তার অন্তরকে এ দুই পাপ থেকে মুক্ত না রাখে তাহলে সে ক্ষমাপ্রাপ্তদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবে না। অপরপক্ষে কোন মুমিন যদি এ রাতে কোন নফল ইবাদত নাও করে কিন্তু তার অন্তরে শিরক ও হিংসা-বিদ্বেষ-ফাসাদ স্থান না দেয় তাহলে হাদীস অনুযায়ী তার ক্ষমাপ্রাপ্তির প্রত্যাশা রয়েছে। অবশ্য সে নফল ইবাদতের সাওয়াব থেকে বঞ্চিত হবে।
শা’বান মাস রমজান মাসের পূর্ববতী ও সবচেয়ে নিকটতম মাস হিসেবে অত্যন্ত গুরুতবহ ও ফজিলত সমৃদ্ধ। রাসুলে আকরাম (সা.)-এ মাসে প্রায়ই রোজা রাখতেন। হযরত আবু হরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত মুহাম্মদ (সা.) রজব ও শা’বান মাস এলে দু’আ করতেন এভাবে ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফী রাজাবা ওয়া শা’বানা ওয়া বাল্লিগ্না রামাদানা” অর্থ্যাৎ হে প্রভূ! রজব ও শা’বান মাসে আমাদের জন্য বরকত নাজিল করুন আর আমাদেরকে রমজানুল মুবারক পর্যন্ত পৌছিয়ে দিন’।
অন্যান্য মাসের তুলনায় শা’বান মাসের রোজা রাসূলে আকরাম (সা.)-এর কাছে সবচেয়ে বেশি প্রিয় ছিল। নবী করীম (সা.) শা’বান মাস এলে বলতেন, ‘রমজানে সুষ্ঠুভাবে রোজা রাখার মানসে তোমরা শা’বান মাসে রোজায় অভ্যস্থ হয়ে শরীরকে পাক-সাফ করে নাও। যে ব্যক্তি এ মাসে তিনটি রোজা রাখবে তার গুনাহ মাফ করা হবে’ (আবু দাউদ শরীফ)। এক্ষেত্রে আইয়ামে বীজের রোজা তথা চাঁদের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখের ৩টি রোজা রাখার গুরুত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়।
রাসুলুল্লাহর প্রিয় সাহাবী হযরত আনাস বিন মালিক (রা.) সে যুগের মুসলমানদের ইতিহাস-ঐতিহ্যের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘তখন শা’বান মাসের আগমন ঘটলে মুসলমানরা বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াতে মনযোগ দিতো এবং বিত্তশালীরা ফকির-মিসকিনদের কাছে তাদের মালামালের যাকাত-ছাদাকা বিতরণ করতে থাকতো যাতে অভাবগ্রস্ত পরিবারগুলো একটু স্বস্তি ও শক্তি সঞ্চয় করে রমজানের রোজাগুলো ভালভাবে অতিবাহিত করতে পারে’।
আজকাল শবেবরাতকে কেন্দ্র করে ইসলামে জায়েজ না-জায়েজ নানা আয়োজন দেখা যায়, তা থেকে আমাদেরকে সাবধান থাকতে হবে। অনেকে এ রাতে ভোজন বিলাস, খেল-তামাশা, আতশবাজি ও ছুটাছুটি করতে থাকে। এ রাতে কবর বা মসজিদে আলোকসজ্জা এবং বিশেষভাবে হালুয়া-রুটি পাকানো ইসলাম সমর্থন করে না। হালজামানায় দেখা যায়, কেউ কেউ এ রাতে বিধর্মীদের দেখাদেখি নিজের ঘরের দরজায় মোমবাতি প্রজ্বলন করে থাকে, গান-বাজনায় উৎসবে মেতে উঠে। ইসলামে এমন গর্হিত কর্মকা- কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। শা’বান মাসের সকল রাতই গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলত সমৃদ্ধ। তাই অন্যান্য রাতের ধারাবাহিকতায় এ রাতেও তাওবাহ-ইসতিগফার, তাসবীহ-তাহলীল, তিলাওয়াতে কুরআন, সালাতুত তাহাজ্জুদ ও দান-খয়রাত করে মুমিন আল্লাহ পাকের রেজামন্দি হাছিল করতে পারে। মনে রাখতে হবে, কুরআন-সুন্নাহর সঠিক ইলম অর্জন ছাড়া তাকওয়া ও ইখলাস গুণে গুণান্বিত হতে না পারলে আমাদের জন্য কোন রাতই ক্ষমা ও বরকত নিয়ে আসবে না। তাই শিরকমুক্ত ঈমান ও রিয়া বা লৌকিকতা বর্জিত আমলী জিন্দেগী গড়তে আমাদের সবাইকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বাংলাদেশ সারাবিশ্বে বর্তমানে করোনা ভাইরাসের সংক্রমন যেভাবে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে তার থেকে সকলের হেফাজতের জন্য আল্লাহ পাকের দরবারে আন্তরিক দু’আ-প্রার্থনা করতে হবে। আয় আল্লাহ মাবুদ! আমাদের ক্ষমা করুন, আমাদের উপর রহম করুন আর আমাদেরকে আসমান-জমিনের যাবতীয় বালা-মুছিবত থেকে হেফাজত করুন। আমিন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট