চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ফেনী নদীর শূন্যরেখায় বন্দী ভবঘুরে নারী কোন দেশের !

বিজিবি-বিএসএফের নাগরিকত্ব অস্বীকার

রামগড় সংবাদদাতা

৮ এপ্রিল, ২০২০ | ২:৫০ পূর্বাহ্ণ

রামগড়-সাব্রুম সীমান্তবর্তী ফেনীনদীর শূন্য রেখায় বিজিবি-বিএসএফের অস্ত্রের মুখে বন্দি মানসিক ভারসাম্যহীন সেই ভবঘুরে নারীর (৩২) মুক্তি মেলেনি ৬ দিনেও। দুই দেশের কেউই তার নাগরিকত্ব স্বীকার করছে না। গতকাল মঙ্গলবার বিজিবি ও বিএসএফের সেক্টর কমান্ডার পর্যায়ে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় দফার বৈঠকেও কোন পক্ষই ওই নারীর দায়ভার নিতে রাজি হয়নি। ফলে এ বৈঠকও নিষ্ফল হয়। এদিকে প্রচ- রোদ, ঝড়বৃষ্টিতে ও অনাহারে অত্যন্ত অমানবিক অবস্থায় অজ্ঞাত পরিচয়ের ওই নারী এখন নদীর মধ্যবর্তী বালুচরে মৃত্যুর মুখোমুখি। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মানসিক ভারসাম্যহীন ওই নারীকে গত ২ এপ্রিল দুপুরের দিকে বিজিবির রামগড় বিওপি সংলগ্ন এলাকা দিকে বিএসএফ জোরপূর্বক রামগড়ে ঠেলে পাঠায়। এসময় সাব্রুমের কাঁঠালছড়ি ক্যাম্পের বিএসএফকে সেখানকার গ্রামবাসীরাও সহায়তা করে। খবর পেয়ে বিজিবি ওই নারীকে আটক করে পুনরায় ভারতে পুশব্যাক করে। কিন্তু বিএসএফের বাধায় তিনি ফেনীনদী অতিক্রম করতে পারেনি। নদীর মধ্যবর্তী স্থানে বালুচরে ঠাঁই হয় তার। গত বৃহস্পতিবার হতে নদীর ওপারে বিএসএফ এবং এপারে বিজিবি সশস্ত্র প্রহরা বসায়। দু’দেশের সীমান্ত রক্ষীবাহিনীর অস্ত্রের মুখে নদীর শূন্যরেখায় বন্দি হয়ে পড়েন ভবঘুরে নারীটি। নদীর বাংলাদেশের তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা কিছু খাবার দিচ্ছে তাকে। দিনের বেলায় কাঠফাটা রোদে তপ্ত বালুচরে খোলা আকাশের নীচে পড়ে আছেন তিনি। গত ২-৩ দিন রাতের বৃষ্টিতেও ভিজেছে। প্রবল বৃষ্টিপাত হলে তার পরিণামের কথা ভেবে উৎকন্ঠায় আছে তীরবর্তী বাসিন্দারা। এদিকে, মানসিক ভারসাম্যহীন নারীর ইস্যু নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে বিজিবির গুইমারা সেক্টর কমান্ডার কর্নেল জি এইচ এম সেলিম হাছান ও বিএসএফের উদয়পুরের ডিআইজি জামিল আহমেদ দি¦তীয় দফায় বৈঠকে মিলিত হন। ফেনীনদীতে মৈত্রীসেতুর নির্মাণকাজের জন্য স্থাপিত অস্থায়ী সেতুর উপর দাঁড়িয়ে তারা বৈঠক করেন। বৈঠকে অজ্ঞাত পরিচয়ের ওই নারীর ‘পুশব্যাক’ নিয়ে বিজিবি-বিএসএফ একে অপরকে দায়ী করেন এবং তার নাগরিকত্ব দুই পক্ষই অস্বীকার করেন। এ অবস্থায় কোন সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠকটি শেষ হয়। বৈঠকে রামগড়ের ৪৩ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. তারিকুল হাকিম ও সাব্রুমের ৬৬ বিএসএফের কমান্ডিং অফিসার রাজীব কুমার সিং উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে বিজিবির গুইমারা সেক্টর কমান্ডার কর্নেল জি এইচ এম সেলিম হাছান এ প্রতিনিধিকে বলেন, নারীটির পরিচয় খুঁজে বের করতে বিজিবি সারা দেশে প্রচার প্রচারণা করে। কিন্তু কোন হদিসই মেলেনি। তিনি বাংলাদেশে নাগরিক বলে মনে হচ্ছে না। তিনি বলেন, বিএসএফ যে তাকে জোরপূর্বক পুশব্যাক করেছে তার প্রমাণ হিসেবে ছবিও বৈঠকে দেখানো হয়েছে। তিনি বলেন, আজকের বৈঠকেও কোন সিদ্ধান্ত নেয়া যায়নি। তিনি আরও বলেন, এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত চাইবেন তিনি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট