চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

করোনার প্রভাব

বিপাকে লক্ষাধিক পরিবহন শ্রমিক

উপজেলা ভিত্তিক তালিকা তৈরি করছে সরকার

নাজিম মুহাম্মদ

৩ এপ্রিল, ২০২০ | ৮:০৫ অপরাহ্ণ

চরম সংকটে পরিবহন শ্রমিকরা। বিশেষ করে যাত্রীবাহী বাস ও মিনিবাস শ্রমিকরা রয়েছে বিপাকে। করোনার প্রভাবে গত ২৬ মার্চ থেকে আগামী ১১ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ থাকছে যাত্রীবাহী সকল ধরনের যানবাহন। এতে ঘরবন্দি হয়ে পড়েছে বৃহত্তর চট্টগ্রামের প্রায় এক লাখেরও বেশী পরিবহন শ্রমিক। যানবাহন বন্ধের এক সপ্তাহের মাথায় প্রতিটি থানায় পরিবহন শ্রমিকদের তালিকা তৈরির উদ্যোগে নিয়েছে জেলা প্রশাসন। চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে নগরীর গণপরিবহন শ্রমিকদের মাঝে  ভোগ্যপণ্য সামগ্রী বিতরণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নগর ট্রাফিকের উত্তর জোনে উপ-কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ জানান, চট্টগ্রাম মেট্টো এলাকার গণপরিবহন শ্রমিকদের খাদ্য সহযোগিতা করতে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি আমরা চেষ্টা করবো প্রত্যেক পরিবহন শ্রমিক যেন খাদ্য সহায়তা পায়।

দেশের বিভিন্ন ক্রান্তিকালে পরিবহন শ্রমিকরা সড়ক সচল রেখেছে। ২০১৩-১৪ সালে জ্বালাও পোড়াও কর্মসূচি চলাকালিন সময়েও পরিবহন শ্রমিকরা নিজের জীবন বাজি  রেখে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটেছে। পণ্য পরিবহন সচল রাখতে ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান চলাচল সচল থাকলেও করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে গত এক সপ্তাহ ধরে যাত্রীবাহী যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। আগামী ১১ এপ্রিল পর্যন্ত তা পরিবহন শ্রমিকদের (ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান ছাড়া) ঘরবন্দি থাকতে হবে। বৃহত্তর চট্টগ্রামে ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ১৪০টি রুট রয়েছে। এসব রুটে চলাচলরত গণপরিবহনের প্রায় এক লাখেরও বেশী শ্রমিক কর্মরত। নাম প্রকাশে না করার শর্তে বেশ কয়েকজন বাস চালক জানান, তাদের ধারণা  ছিলো ৪ এপ্রিলের পর সড়কে যানবাহন চলাচল শুরু হবে। এখন আরো এক সপ্তাহ গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকার ঘোষণায় তারা চিন্তিত। কালণ তারা দৈনিক মজুরিতে চাকরি করেন। এ অবস্থায় টানা বেকার  থাকলে পরিবার পরিজন বেঁচে থাকা তাদের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়বে।  সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের পূর্বাঞ্চলের কার্যকরি সভাপতি মৃণাল চৌধুরী বলেন, যাত্রীবাহী বাস-মিনিবাস-ট্যাক্সি কিংবা লেগুনায় কর্মরত চালক  ও  হেলপাররা কেউ মাসিক বেতনে চাকরি করে না। তারা দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে চাকরি করে। যতক্ষণ ডিউটি করে ততক্ষণ  কমিশনের টাকা পায়। ডিউটি না করলে টাকা পায় না।   ট্যাক্সি কিংবা টেম্পোর অধিকাংশ চালক দৈনিক ভাড়ায় গাড়ি চালিয়ে থাকে। ট্রাক কিংবা কাভার্ডভ্যান চলাচল সচল থাকায় তাদর তেমন কোন সমস্যা হচ্ছে না। তবে গণপরিবহন শ্রমিকরা পরিবার পরিজন নিয়ে খুবই শোচনীয় অবস্থায় আছে। তারা পারছে না কাউকে বলতে  পারছে না সইতে। পরিবহন শ্রমিক নেতা মৃণাল চৌধুরী বলেন, পরিবহন শ্রমিকদের  সহায়তা প্রদান করতে আমাদের কেন্দ্রিয় কার্যকরি সভাপতি সাবেক মন্ত্রী শাহজাহান খান ইতিমধ্যে  সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করেছেন। প্রত্যেক জেলা প্রশাসকের কাছ  এ বিষয়ে সরকারিভাবে বার্তা এসেছে। উপজেলা পর্যায় পরিবহন শ্রমিকদের তালিকা তৈরির পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। প্রবীণ শ্রমিক নেতা মৃণাল চৌধুরী বলেন, আপদকালিন সময় পরিবহন শ্রমিকদের সহযোগিতার জন্য সরকারের আলাদা বাজেট থাকা খুবই জরুরি।

আরকান সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের চট্টগ্রাম দক্ষিণ জোনের সভাপতি মোহাম্মদ মুসা জানান, শ্রমিক সংগঠনগুলোর নিজস্ব  কোন আর্থিক ফান্ড নেই। কাগজে কলমে থাকলেও মাসিক বেতনে কোন শ্রমিক কাজ করে না বিধায় আপদকালিন সময়ে কোন গাড়ির মালিক চালক কিংবা হেলপারদের সহযোগিতায় তেমন এগিয়ে আসে না। সড়কে গাড়ি চললে পরিবহন শ্রমিকেদর সংসার চলে, না হয় চলে না। চলমান করোনা পরিস্থিতিতে পরিবহন শ্রমিকরা ঘরবন্দি হয়ে আছে। জরুরিভাবে খাদ্য সহায়তা না দিলে প্রায়ে এক লাখ পরিবহন শ্রমিকের পরিবারের দেখা দেবে খাদ্য সংকট।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট