চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

আবুধাবিতে করোনায় আরেক বাংলাদেশির মৃত্যু
আবুধাবিতে করোনায় আরেক বাংলাদেশির মৃত্যু

করোনাভাইরাস

করোনায় মৃত ব্যক্তির নামাজে জানাজা পড়তে ভয় নেই

মৃত ব্যক্তি থেকে করোনা ছড়ায় না : সিভিল সার্জন

আল-আমিন সিকদার

৩ এপ্রিল, ২০২০ | ২:৪৪ পূর্বাহ্ণ

  • দূরত্ব বজায় রেখে নামাজে
    জানাজা পড়ার পরামর্শ

পুরো বিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়েছে করোনাভাইরাস। চীনের উহান শহর থেকে জন্ম নিয়ে প্রাণঘাতী এ ভাইরাসটি নিজেকে ছড়িয়ে দিয়েছে বিশ্বের ২০২টি দেশে। মরণ ছোবলে কেড়ে নিয়েছে ৫০ হাজারেরও বেশি প্রাণ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশগুলোর মত বাংলাদেশেও বাড়ছে এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা। মারা গেছেন ৬ জন।
বাংলাদেশে সংক্রমণের পর থেকেই ছোঁয়াচে এ ভয়ংকর রোগটি নিয়ে শুরু হয়েছে নানান গুজব। সম্প্রতি করোনায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের দাফনের বেশকিছু ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। যেখানে মৃতদেহ স্পর্শ না করার পাশাপাশি কোন ধরনের ধর্মীয় আচার-আনুষ্ঠানিকতা না মেনে কবর দিতে দেখা গেছে। যার পর থেকেই বাংলাদেশে একটি গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। বলা হচ্ছে, ‘করোনায় মরলে জানাজা পাওয়া যাবে না, গোসলও করাবে না কেউ’। তবে সাধারণ মানুষের এ কথায় কান না দিয়ে জানাজা পড়ার পাশাপাশি মৃতদেহের সকল ধর্মীয় আচার-আনুষ্ঠানিকতা করে দাফন কাজ সম্পন্ন করতে বলছেন সংশ্লিষ্টরা। এমনকি মৃতদেহ থেকে করোনা ছড়াবে না বলেও মন্তব্য করেছেন তারা। সাজ্জাদ ও দিদার। দুই বন্ধু। দুইজনই নগরীর বন্দরটিলা এলাকার বাসিন্দা। মাগরিবের নামাজ শেষে মসজিদ থেকে বেরিয়ে তারাও আলোচনা করছিলেন করোনা নিয়ে। তাদের আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে দাফন না পাওয়ার প্রসঙ্গটি। একজন আরেকজনকে বলছিলেন, ‘কি রোগ আইলো। মরলে কেউ দেখতেও আসবে না। না পড়বে জানাজা, না করাবে গোসল। আল্লাহ যেন এমন মরণ কাউকে না দেন।’
এর পরপরই এই দুই বন্ধুর সাথে কথা হয় প্রতিবেদকের। তারা এমন কথা কেন বলছেন জানতে চাইলে দুই বন্ধুই বলেন, ‘শুনেছি রোগটা ছোঁয়াচে। এটা খুব ভয়ংকর রোগও। ফেসবুকে ভিডিওতে দেখেছি বিভিন্ন দেশে এ রোগে যারা মারা গেছেন তাদের জানাজা, গোসল না করিয়ে দাফন করা হচ্ছে। এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মরলে আমরাও জানাজা পাবো না’।
অবশ্য এই দুই বন্ধুর এ কথা বলার যথেষ্ট কারণও রয়েছে। সম্প্রতি ফেসবুকে এমনই একটি চিত্র দেখা গেছে। যেখানে দেখা গেছে, ‘প্যাকেটে মোড়ানো একটি মৃতদেহের জানাজা পড়ছেন একজন ইমাম। যার পিছনে রয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর কিছু সদস্য। এমনকি মৃতদেহটিকে কবরস্থান পর্যন্ত কাঁধে করে নিয়ে যেতেও দেখা গেছে পুলিশ সদস্যদের’।
তবে এভাবে আতঙ্কিত হয়ে জানাজা না পড়ার কোন কারণ নেই বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি। তিনি বলেন, ‘করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের জানাজা পড়তে কোন বাধা নেই’। মৃত ব্যক্তির শরীর থেকে করোনা ছড়ায় না বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। তবে জানাজা পড়ার সময় এবং মৃতদেহের গোসল করানোর সময় কিছু পরামর্শ মেনে চলতে বলেছেন তিনি।
সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির জানাজা পড়তে ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই। তবে জানাজা নামাজে হাঁচি, কাশি, জ্বর আছে এমন ব্যক্তিরা যাবেন না। যারা জানাজা নামাজে অংশগ্রহণ করবেন তারা নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখবেন। এছাড়া মৃতব্যক্তির শরীর স্পর্শও করা যাবে। তবে সেক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তির নাক, কান ও চোখে ভালোভাবে তুলো ঢুকিয়ে রাখতে হবে। তবে সম্ভব হলে গোসল না করিয়ে ভেজা কাপড় দিয়ে শরীর মুছিয়ে দেওয়া যেতে পারে। তায়াম্মুমও করানো যাবে। তবে মৃত ব্যক্তির গোসল ও জানাজায় অংশ নেয়ার পর হাত এবং মুখ ভালোভাবে সাবান দিয়ে ধুতে হবে কিংবা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে নিজেকে জীবাণুমুক্ত করতে হবে। মাস্কও ব্যবহার করতে হবে।’ আর এসব নিয়ম মেনে মৃত ব্যক্তির ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান নিরাপদে সম্পন্ন করা যাবে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
এদিকে, গুজবে কান না দিয়ে জানাজা নামাজে অংশগ্রহণ করার আহবান জানিয়েছেন ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মহানগর শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মো. এ এম মইনউদ্দিন চৌধুরী হালিম। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘দেশের এমন পরিস্থিতিতেও গুজব ছড়াচ্ছে’। অন্যান্য গুজবগুলোর মত জানাজা না পড়ার বিষয়টিকেও গুজব বলেছেন তিনি। করোনায় মারা যাওয়া মৃত ব্যক্তিদের জানাজা কেউ পড়াতে না চাইলে ইসলামিক ফ্রন্ট জানাজার দায়িত্ব নিবেন বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘গুজবে কান না দিয়ে আপনারা জানাজায় আসুন। তবে আগের মত বিভিন্ন এলাকা থেকে জানাজায় অংশ নিতে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। পাড়া-মহল্লার মানুষ জানাজায় অংশ নিবেন এবং দূরত্ব বজায় রেখে নামাজ পড়বেন। এতে ভয়ের কোন কারণ নেই। চিকিৎসকরা করোনায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের গোসল ও দাফন পর্যন্ত যে সকল নির্দেশনা দিয়েছেন তা মেনে চললে ভয়ের কোন কারণ নেই’।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট