চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

থানা হাজতে ‘আসামি’র মৃত্যু, ওসি প্রত্যাহার

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৭ মার্চ, ২০২০ | ১১:৪০ অপরাহ্ণ

বরগুনায় হাজতে সন্দেহভাজন আসামি শানু হাওলাদারের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল বাশারকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। পুলিশের প্রধান কার্যালয়ের এক আদেশে আজ শুক্রবার (২৭ মার্চ) বিকেলে বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি মো. শফিকুল ইসলাম নির্দেশে বরগুনা পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন স্বাক্ষরিত এক পত্রে তাকে প্রত্যাহার করা হয়। ওসি আবুল বাশারকে আমতলী থানা থেকে প্রত্যাহার করে বরগুনা পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

জানা যায়, গত বছর ৩ নভেম্বরে উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়নের পশ্চিম কলাগাছিয়া গ্রামে ইব্রাহিম নামে একজনকে হত্যার ঘটনায় করা মামলায় মিজানুর রহমান হাওলাদার এজাহারভুক্ত আসামি। গত সোমবার রাত সাড়ে এগারোটার দিকে মিজানুরের সৎ ভাই শানু হাওলাদারকে সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে ধরে নিয়ে আসে আমতলী থানা-পুলিশ। পরে অভিযোগ পাওয়া যায়, শানুর পরিবারের কাছে আমতলী থানার ওসি আবুল বাশার ও ওসি (তদন্ত) মনোরঞ্জন মিস্ত্রি তিন লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। শানুর পরিবার টাকা দিতে অস্বীকৃতি দেয়ায় তাকে থানা হাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদের নামে নির্যাতন করে পুলিশ।

নির্যাতন থামাতে আসামির ছেলে সাকিব হোসেন মঙ্গলবার ওসি আবুল বাশারকে ১০ হাজার টাকা ঘুষ দেয়। কিন্তু তাতে ওসি খুশি হননি। এতে তারা নির্যাতনের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়। পরে বুধবার পরিবারের লোকজন এসে শানু হাওলাদারের সাথে দেখা করতে চাইলে পুলিশ দেখা করতে দেয়নি, উল্টো পরিবারের লোকজনের সাথে অশ্লীল আচরণ করে তাড়িয়ে দেয় বলে অভিযোগ করেন নিহতের ছেলে সাকিব। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (২৬ মার্চ) সকালে ওসি (তদন্ত) মনোরঞ্জন মিস্ত্রির কক্ষে ফ্যানের সাথে ঝুলন্ত অবন্থায় শানুর লাশ পাওয়া যায়।

ওসি আবুল বাশারের দাবি, সকাল সোয়া ছয়টার দিকে শানু টয়লেটে যাওয়ার কথা বললে পুলিশ তাকে টয়লেটে নিয়ে যায়। পরে এক ফাঁকে শানু ওসির (তদন্ত) কক্ষে ফ্যানের সাথে রশি পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।

এ ঘটনা তদন্তে জেলা পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ, এসপি পদায়ন) মো. তোফায়েল আহম্মেদকে প্রধান করে তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বরগুনা সদর) মো. মহব্বত আলী ও সহকারী পুলিশ সুপার (আমতলী-তালতলী সার্কেল) সৈয়দ রবিউল ইসলাম।

বরগুনা পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন দায়িত্ব অবহেলার দায়ে তাৎক্ষণিকভাবে আমতলী থানার ওসি (তদন্ত) মনোরঞ্জন মিস্ত্রি ও ডিউটি অফিসার এএসআই আরিফ হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করেন।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, একজন নির্দোষ মানুষকে থানা হাজতে টাকার জন্য শারীরিক নির্যাতন করে হত্যা করা হবে, এটা মেনে নেয়া যায় না। এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।

তদন্ত কমিটির প্রধান বরগুনা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ, এসপি পদায়ন) মো. তোফায়েল আহম্মেদ বলেন, থানায় আসামির মৃত্যুর মূল কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তকাজ শুরু করা হয়েছে। অল্পদিনের মধ্যেই তদন্তকাজ শেষ হবে।

এদিকে, আমতলী থানার ওসি আবুল বাশারকে প্রত্যাহার করায় সাধারণ মানুষের মাঝে আনন্দ বিরাজ করছে। তারা দ্রুত ওসি আবুল বাশারের শাস্তির দাবি করেছেন।

পূর্বকোণ/আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট