নভেল করোনাভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণ ঠেকাতে সারা দেশে ছুটি ঘোষণার পর এবার বাস, লঞ্চ ও ট্রেনসহ সবধরনের গণপরিবহন চলাচল বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। মঙ্গলবার থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ট্রেন ও লঞ্চ। এছাড়া আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে বাসও চলবে না। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মঙ্গলবার এক ভিডিওবার্তায় জানান, আগামী ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সারা দেশে গণপরিবহন লকডাউন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, ওষুধ, জরুরি সেবা, জ্বালানি ও পচনশীল পণ্য পরিবহনে নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবে। পণ্যবাহী যানবাহনে কোনো যাত্রী পরিবহন করা যাবে না।
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীও মঙ্গলবার এক ভিডিওবার্তায় সারা দেশে সবধরনের যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল মঙ্গলবার থেকেই বন্ধ ঘোষণা করেন। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) কর্মকর্তারা জানান, কাঁঠালবাড়ী-শিমুলিয়া এবং পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ঘাটে ফেরি চলাচল মঙ্গলবার দুপুর থেকে বন্ধ করা হয়।
বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক জানিয়েছেন, সারা দেশে নৌপথে যাত্রী পরিবহন বন্ধ ঘোষণার আদেশ মঙ্গলবার দুপুর দেড়টা থেকে কার্যকর হয়। তিনি জানান, গত কয়েক দিন গাদাগাদি করে লঞ্চে যাত্রীরা গ্রামের বাড়িতে ছুটেছে। তাই করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে তারা নৌপথে যাত্রী পরিবহন বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার নৌপথে যাত্রী পরিবহন শুরু হবে। মঙ্গলবার সকাল থেকেই সদরঘাট টার্মিনাল দিয়ে বিভিন্ন রুটে হাজার হাজার মানুষ ঢাকা ছেড়েছে। সূত্র : সময়ের আলো
টার্মিনাল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত সোমবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে টানা ১০ দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর থেকেই যাত্রীদের চাপ বেড়েছে। সেই ধারা মঙ্গলবাার সকালেও অব্যাহত ছিল। যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে লঞ্চমালিকদের যে ১১ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, তা অনেকেই মেনে চলছিলেন না। এজন্য সরকার নৌপথে যাত্রী পরিবহন বন্ধ করে দিয়েছে।
অন্যদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে মঙ্গলবার থেকে ভারতগামী নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে মঙ্গলবার বাংলাদেশ-ভারত আন্তর্জাতিক নৌ-প্রটোকলভুক্ত মোংলা-ঘষিয়াখালী অভ্যন্তরীণ নৌ-চ্যানেল দিয়ে ভারতগামী কোনো নৌযান (কার্গো, কোস্টার) চলাচল করেনি। ৩১ মার্চ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক নৌরুটে জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আশিকুল আলম জানান, বিআইডব্লিউটিএ’র নির্দেশনা অনুযায়ী আপাতত ভারতগামী অর্থাৎ ভারতের কলকাতা, বজবজ ও হলদিয়া বন্দরগামী নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ রেলওয়েও মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে সবধরনের ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। রেলপথ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সবধরনের যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে সবধরনের কন্টেইনার ও জরুরি মালবাহী ট্রেন চলাচল করবে। এছাড়া চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও খুলনাভিত্তিক ট্রেনগুলো সন্ধ্যার পর হলেও মঙ্গলবার ঢাকা থেকে যাত্রী নিয়েই ফিরবে বলে জানান রেলমন্ত্রী।
এর কারণ ব্যাখ্যা করে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোফাজ্জেল হোসেন সাংবাদিকদের জানান, এত ট্রেন আমরা ঢাকায় রাখতে পারব না। এছাড়া যেসব ক্রু, অ্যাটেনডেন্ট রাজশাহী বা খুলনার, তাদের ঢাকায় রাখলে তো সমস্যায় পড়ে যাবে। অনির্দিষ্টকালের জন্য এই সিদ্ধান্ত কার্যকর থাকবে বলে রেলমন্ত্রী জানান।
অন্যদিকে নভেল করোনাভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণ ঠেকাতে বাস, ট্রেন ও লঞ্চের পর অভ্যন্তরীণ রুটের সব ফ্লাইট বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। সংস্থার চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান মঙ্গলবার সাংবাদিকদের জানান, বুধবার থেকে আপাতত ৪ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ থাকবে অভ্যন্তরীণ রুটের সব ফ্লাইট। পরিস্থিতি বিবেচনায় পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
পূর্বকোণ/আরপি