চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

খুনের মামলায় খাগড়াছড়িতে একজনের  যাবজ্জীবন

অপর্যাপ্ত প্রস্তুতি : ঝুঁকিতে প্রায় ৯০ হাজার কারাবন্দি

পূর্বকোণ ডেস্ক

২১ মার্চ, ২০২০ | ৮:০২ অপরাহ্ণ

দেশের ৬৮টি কারাগারের মধ্যে মাত্র পাঁচটিতে স্থাপন করা হয়েছে থার্মাল স্ক্যানার। নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রাথমিক উপসর্গ হিসেবে শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হলেও দেশের কারাগারগুলোতে তা উপেক্ষিতই রয়ে গেছে।

কারাগারগুলোতে দেশি-বিদেশি বন্দি থাকলেও তাদের সুরক্ষায় নিয়োজিতদের জন্য ব্যক্তিগত সুরক্ষা উপকরণ নিশ্চিত করা হয়নি। পাশাপাশি স্বল্প জায়গায় অধিক বন্দির অবস্থান ও স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাতের ক্ষেত্রে সতর্কতামূলক ব্যবস্থার অপ্রতুলতায় সংক্রমণের ঝুঁকিতে রয়েছে প্রায় ৯০ হাজার বন্দি।

কারা অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, প্রতিটি বন্দিকে করোনাভাইরাস আছে কিনা তা পরীক্ষার জন্য পাঁচটি কেন্দ্রীয় কারাগারে বসানো হয়েছে পাঁচটি থার্মাল স্ক্যানার। কিন্তু জেলা পর্যায়ের ও নতুন নির্মিত কারাগারগুলো এখনো এ সুবিধার বাইরে রয়েছে। প্রাথমিকভাবে এসব কারাগারে ইনফ্রারেড থার্মোমিটার দিয়ে শরীরের তাপমাত্রা মেপে বন্দিদের প্রাথমিক উপসর্গ শনাক্তের কাজটি করা হচ্ছে।

তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, বিশ্বে মহামারী আকার ধারণ করা নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবেলায় এরই মধ্যে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থা অবলম্বন করা হয়েছে। বন্দির সর্বোচ্চ সুরক্ষায় নেয়া হয়েছে বিশেষ উদ্যোগও।

অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল আবরার হোসেন বলেন, কারাবন্দিদের মধ্যে করোনাভাইরাস নিয়ে যাতে আতঙ্ক তৈরি না হয়, সে বিষয়ে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কারা ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নতুন কোনো বন্দি কারাগারে প্রবেশের পর সন্দেহজনক উপসর্গ দেখা গেলে তাকে পরবর্তী ১৪ দিন বিশেষ পর্যবেক্ষণ বা কোয়ারেন্টিনে রাখার বিশেষ নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তাদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। এছাড়া বন্দিদের সুরক্ষায় নিয়োজিতদের জন্য হাত জীবাণুমুক্ত রাখতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও হ্যান্ডওয়াশ প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

জেল কোড অনুযায়ী, কারাবন্দিরা প্রতিবার তাদের দুজন করে স্বজনের সঙ্গে সাক্ষাত্ কক্ষে গিয়ে আধঘণ্টা কথা বলতে পারেন। একেক শিফটে সাক্ষাত্ কক্ষে কারাগারভেদে হাজির হন ৫০ থেকে ১৫০ বন্দি। প্রতি বন্দির জন্য দুজন করে স্বজন সাক্ষাত্ কক্ষে যেতে পারেন। সব মিলিয়ে একেক শিফটে কারা সাক্ষাত্ কক্ষে হাজির হন কয়েকশ বন্দি ও তাদের স্বজনরা। যদিও সাক্ষাতের আগে বন্দির স্বজনদের মধ্যে করোনা সংক্রমণ শনাক্তের কোনো উদ্যোগ এখনো নেয়া হয়নি। এছাড়া স্বজনদের পাঠানো বিভিন্ন সামগ্রী থেকেও কারা অভ্যন্তরে ভাইরাসটির সংক্রমিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

দেশের কারাগারগুলোয় চীনা, ভারতীয়সহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশের অপরাধীরা বন্দি হিসেবে রয়েছেন। প্রতিটি কারাগারেই বন্দিদের সুরক্ষায় নিয়োজিত রয়েছেন কারারক্ষীরা। দায়িত্ব পালনের জন্য প্রতিদিন নির্ধারিত সময়ে কারা অভ্যন্তরে প্রবেশ করেন তারা। তবে এসব কারাগারে দেশি-বিদেশি বন্দি থাকলেও কারারক্ষীদের ব্যক্তিগত সুরক্ষায় দেয়া হয়নি কোনো উপকরণ। এখন পর্যন্ত শুধু স্যানিটাইজার ও সাবান দিয়েই সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে হচ্ছে তাদের।

কারা সূত্র জানায়, করোনা মোকাবেলায় বন্দিদের আদালতে যাওয়ার সময় সতর্কতা হিসেবে মাস্ক ব্যবহার করা, বন্দি করোনা আক্রান্ত হলে করণীয় ও প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে প্রতিদিনই সচেতনতা তৈরি করতে আলোচনা করা, কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ও বন্দিদের নিয়মিত হাত ধোয়া, কারাগারের কর্মীদের সুরক্ষার জন্য হ্যান্ডওয়াশ ও স্যানিটাইজারের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কারা অধিদপ্তর।

তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নানা সীমাবদ্ধতার কারণে এসব সিদ্ধান্তের অধিকাংশই কেবল ঘোষণার মধ্যেই আটকে রয়েছে। কেন্দ্রীয় কারাগারগুলোতে বন্দিদের সুরক্ষায় হাত ধোয়ার জন্য হ্যান্ডওয়াশ সরবরাহের কথা থাকলেও দেয়া হয়েছে সাবান। আর জেলা পর্যায়ের কারাগারগুলোতে বন্দিদের জন্য এখনো হ্যান্ডওয়াশ বা সাবান পৌঁছেনি। আর স্যানিটাইজার কেবল নতুন বন্দিদের ক্ষেত্রেই দেয়া হচ্ছে। অথচ প্রতিদিনই কারাগারের বন্দিরা তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতে যান।

এদিকে, সংকট রয়েছে কারাবন্দিদের চিকিত্সায় নিয়োজিত লোকবলের ক্ষেত্রেও। মাত্র দুজন চিকিত্সক, একজন নার্স ও একজন ফার্মাসিস্ট দিয়ে দেশের সবগুলো কারাগারের বন্দিদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হয়। অথচ এখনো তাদের ব্যক্তিগত সুরক্ষায় কোনো উপকরণ সরবরাহ করা হয়নি।

কারা চিকিত্সক ডা. মাহমুদুল হাসান শুভ বলেন, কারাগারগুলোতে দেশী বন্দির পাশাপাশি বিদেশী বন্দিও রয়েছে। কেউ অসুস্থ হলে আমরা তাদের চিকিত্সার বিষয়টি নিশ্চিত করে থাকি। করোনা সংক্রমণ মোকাবেলায় আমরা ব্যক্তিগত সুরক্ষা উপকরণ চেয়ে আবেদন করেছি, কিন্তু এখনো তা পাইনি। এখন শুধু মাস্ক আর স্যানিটাইজার দিয়েই আমাদের ও কারারক্ষীদের সংক্রমণ মোকাবেলা করতে হচ্ছে।  তথ্যসূত্র : বণিক বার্তা।

 

 

 

পূর্বকোণ-আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট