চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

ঝুঁকি-আতঙ্ক বাড়াচ্ছেন বিদেশফেরতরা
ঝুঁকি-আতঙ্ক বাড়াচ্ছেন বিদেশফেরতরা

ঝুঁকি-আতঙ্ক বাড়াচ্ছেন বিদেশফেরতরা

ইমাম হোসাইন রাজু

১৪ মার্চ, ২০২০ | ৩:১৫ পূর্বাহ্ণ

করোনাআক্রান্ত দেশগুলো থেকে ফেরত আসা বাংলাদেশিদের ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার বাধ্যবাধকতা থাকলেও অনেকেই তা মানছেন না। চট্টগ্রামে অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছেন বিদেশফেরতরা। স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনা সত্ত্বেও বিদেশফেরত ব্যক্তিদের অসহযোগিতার কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে, অন্যদিকে স্বাস্থ্য বিভাগ পড়েছে বিপাকে। হোম কোয়ারেন্টাইনের তালিকায় যাদের নাম রয়েছে, তাদের অধিকাংশের কাছ থেকে সহযোগিতা পাচ্ছে না স্বাস্থ্য বিভাগ।
এমন পরিস্থিতিতে গতকাল (শুক্রবার) বিদেশফেরতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে না থেকে অবাধে চলাচলের মতো এমন অসহযোগিতা করতে থাকলে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়বে বলে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা।
স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুসারে, চলতি মাসে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে প্রবেশ করা চট্টগ্রাম বিভাগের সর্বমোট ১৭৯ জন বিদেশফেরত হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন। এরমধ্যে ১৯ জনই চট্টগ্রামের। বিমান বন্দর ত্যাগ করার সময় তাদের সকলকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশনা দিয়েছিল স্বাস্থ্য বিভাগ। তাদের কারোরই এখন পর্যন্ত ১৪ দিন পূর্ণ হয়নি। অথচ তদারকি না থাকায় তাদের অনেকেই অবাধে ঘরের বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, নগরীসহ চট্টগ্রামে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা ১৯ জনের মধ্যে ১১ জনেই সম্প্রতি ইতালি থেকে এসেছেন। তাদের নিয়মিত যোগাযোগের জন্য সিভিল সার্জন কার্যালয়ের পাঁচ সদস্যের একটি টিম কাজ করছেন। কিন্তু সবার কাছ থেকে সহযোগিতা পান না স্বাস্থ্য টিম।
সম্প্রতি নগরীর নিমতলা এলাকায় ইতালি থেকে আসা এক ব্যক্তির অবাধে চলাফেরায় আতংঙ্ক ছড়চ্ছে এলাকা জুড়ে। ওই ব্যক্তি ১৪দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার কথা থাকলেও মানছেন না কিছুই। শুধু এই ব্যক্তিই নয়, সীতাকু-ের এক বিদেশফেরত যাত্রী দেশে আসার পর হোম কোয়ারেন্টাইনে না থেকে অবাধে চলা ফেরার বিষয়টি নজরে আসে স্বাস্থ্য বিভাগের। ওই ব্যক্তির সাথে স্বাস্থ্য বিভাগ একাধিকবার যোগাযোগ করেও কোন ফল পাওয়া যায়নি। যদিও একপর্যায়ে স্বাস্থ্য বিভাগ স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতা নিতে বাধ্য হয়।
স্থানীয়রা জানান, হোম কোয়ারেন্টাইনে না থেকে যদি অবাধে ঘোরাফেরা করে তাহলে তারাও আক্রান্ত হতে পারেন। এজন্য স্বাস্থ্য বিভাগের আরেকটু দায়িত্বশীল হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন তারা। যাতে বিদেশফেরত ব্যক্তিরা ১৪ দিন পর্যন্ত হোম কোয়ারেনটাইনে থাকতে পারে।
খবর নিয়ে জানা গেছে, বিদেশফেরত অনেকেই বিমানবন্দর ত্যাগ করার সময় স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের কাছে যে ফোন নম্বর দিয়ে এসেছেন, পরবর্তীতে সেসব নম্বরে কল দিয়ে বন্ধ পাওয়া গেছে।
অভিযোগ করে স্বাস্থ্য দপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর পূর্বকোণ প্রতিনিধিকে বলেন, ‘প্রতিটি ব্যক্তিকেই প্রাথমিকভাবে বলা হয়, আমাদের পক্ষ থেকে নিয়মিত যোগাযোগ করা হবে। একই সাথে তাদেরকেও যোগাযোগ করতে বলা হয়। কিন্তু বেশিরভাগই মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেন। এতে করে তাদেরকে মনিটরিং করার ক্ষেত্রে যেমন সমস্যা হচ্ছে, তেমনি বেড়ে ঝুঁকির মাত্রাও। প্রাসঙ্গিক এক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্য পরিচালক জানান, চট্টগ্রামে এখন পর্যন্ত কোন রোগী শনাক্ত হয়নি। তবুও তারা যদি স্বাস্থ্য বিভাগকে সহযোগিতা করেন, তাহলে এ ভাইরাস ছড়াবে না’।
এদিকে, বাড়ি বা বাসা থেকে বের না হওয়ার নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. শেখ ফজলে রাব্বি পূর্বকোণকে বলেন, ‘একে তো আমাদের জনবল কম। তারমধ্যে এসব ব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগ করতে গিয়েও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এখন থেকে যারা এ আইন মানবে না, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে’।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) তথ্য অনুসারে, সবমিলিয়ে এখন পর্যন্ত ১৮৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এরমধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় পরীক্ষা করা হয়েছে ২৪টি নমুনা। কিন্তু নতুন করে কারও শরীরে কোভিড-১৯ রোগের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট