চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

যুব মহিলা লীগ নেত্রীসহ অনেকেই নজরবন্দী

এবার তল্লাশি হচ্ছে একাউন্ট ধরা পড়বেন বাকি গডফাদার ও গডমাদাররাও

শিবুকান্তি দাশ হ ঢাকা অফিস

১ মার্চ, ২০২০ | ২:৪১ পূর্বাহ্ণ

একজন পাপিয়ার অবৈধ অর্থ-বিত্ত-প্রতিপত্তি, বিলাসী জীবনযাপন আর অনৈতিক কর্মকা-ে ক্ষমতাসীন দল ও সহযোগী সংগঠনগুলো নারী নেত্রীরা এখন প্রশ্নের মুখোমুখি। অনেকেই মনে করছেন, ক্ষমতার ছায়াবৃক্ষে আরও অনেক পাপিয়া আওয়ামী লীগে ঘাপটি মেরে ফায়দা লুটছে। সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের নির্দেশনায় একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা অনৈতিক সুবিধা নেওয়া নারীনেত্রীদের চিহ্নিত করতে তৎপর। অর্ধশতাধিক নারীনেত্রীকে রাখা হয়েছে বিশেষ নজরদারিতে। এদিকে গতকাল শনিবার দুপুরে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনায় নতুন থানা উদ্বোধনের পর সাংবাদিকদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, যুব মহিলালীগের বহিষ্কৃত নেত্রী শামিমা নূর পাপিয়ার ও ইসমাইল হোসেন স¤্রাটকে ধরা হয়েছে। বাকি গডফাদার ও গডমাদাররাও ধরা পড়বেন। মন্ত্রী বলেন, যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেতা শামিমা নূর পাপিয়ার অনৈতিক কর্মকা-ে দল বিব্রত। শুধু পাপিয়া নয়, দুষ্কৃতকারীদের গডফাদারদেরও আইনের আওতায় আনা হবে। কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। গতকাল শনিবার দুপুরে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানম-ি কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, পাপিয়াদের পেছনে যারা আছেন তারাও নজরদারিতে আছেন বলে জানিয়েছেন তিনি বলেছেন, শুধু পাপিয়া নয়, অপকর্ম, সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও মাদকের সঙ্গে যারাই জড়িত তারা নজরদারিতে আছেন। টার্গেট পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত থাকবে। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, দেশের যে কোনো

প্রান্তে হোক অপকর্ম, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ ও মাদকের সঙ্গে দলের লোকজন যদি জড়িত থাকে সেও রেহাই পাবেন না। তারা ইতোমধ্যে নজরদারিতে চলে এসেছেন। থেমে থেমে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে। এছাড়া এই অপকর্মের পিছনে যারা কলকাঠি নাড়ছেন তারাও রেহাই পাবেন না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নজরবন্দী নারীনেত্রীদের তালিকায় রয়েছেন যুব মহিলা লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের শীর্ষপর্যায়ের বেশ কয়েকজন। যারা দীর্ঘদিন করে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন সচিবালয় কিংবা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তরে। তদবির বাণিজ্যসহ নানা অপকর্ম করে গড়ে তুলেছেন বিলাসবহুল বাড়ি আর স্ফীতাকার ব্যাংক ব্যালান্স। রাজধানীর পাঁচ তারকা হোটেলে এবং ঘনঘন বিদেশ যাওয়া-আসাও ছিল এসব নারীর। ইতিমধ্যে কারও কারও ব্যাংক হিসাব খতিয়ে দেখার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তাদের গ্রামের বাড়িতেও খোঁজখবর নিতে শুরু করেছে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। সরকার ও আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের একাধিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

রাজনীতি ও সমাজ বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক নীতি-নৈতিকতার চর্চা না থাকায় দলগুলোয় এমন অনেক পাপিয়া ঘাপটি মেরে রয়েছেন। কিছু নেতা-নেত্রীর ছত্রচ্ছায়ায় তারা সর্বত্র দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। সচিবালয়ে মন্ত্রী ও সচিবদের রুমে দেখা মেলে অনেক নেত্রীর। এর মধ্যে উঠতি ও মধ্য বয়সী নেত্রীদের একচেটিয়া দাপট। আওয়ামী লীগ যখন ‘বিরোধী দল’ ছিল তখন এদের অনেকেই দলের কোথাও ছিলেন না। গত ১১ বছর দল একটানা ক্ষমতায় থাকায় প্রভাবশালী নেতানেত্রীদের তদবিরে কেন্দ্রে কিংবা জেলা পর্যায়ে পদ-পদবি বাগিয়ে নিয়েছেন। ক্ষমতার দাপটে অথবা নানা ছলাকলায় হাতিয়ে কাজ বাগিয়ে নিয়ে রাতারাতি কোটিপতি বনে যাচ্ছেন কেউ কেউ। অথচ ২০০১ সালের পর দলের দুঃসময়ে পুলিশের বেদম পিটুনি খাওয়া বিবস্ত্র আয়শারা বিনা চিকিৎসায় নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়ায় ভাড়া বাসায় কাতরাচ্ছেন। আর পাপিয়ারা নিজেদের রূপ-জৌলসের উত্তাপ ছড়িয়ে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।

জানা যায়, রাজধানীতে নারী শিক্ষার ঐতিহ্যবাহী একটি প্রতিষ্ঠানের কমপক্ষে এক ডজন নারী নেত্রীর গতিবিধি নজরদারিতে এনে হঠাৎ বিত্তশালী হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার পর যাদের মেস ভাড়ার টাকার সংকট ছিল তারা এখন কেউ কেউ কোটি টাকার মালিক। হল বাণিজ্য, বড় ভাইদের কাছে ‘সাপ্লাই’ এবং বিভিন্ন মন্ত্রী ও নেতার কাছে তদবির বাণিজ্য করে টাকার মালিক হয়েছেন। কেউ কেউ গ্রামের বাড়িতে ছনের ঘরের জায়গায় দোতলা/চারতলা বাড়িও করেছেন মাত্র কয়েক বছরেই। এদের অনেকের সঙ্গেই পাপিয়ার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল বলে জানা গেছে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট