চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

এখনই রাজপথের আন্দোলনে নেতাদের ‘না’

খালেদা জিয়ার জামিন নিয়ে হতাশ নেতাকর্মীরা

শিবুকান্তি দাশ হ ঢাকা অফিস

২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ৪:৩০ পূর্বাহ্ণ

জিয়া চ্যারিটেবল টুাস্ট দুর্নীতি মামলায় ফের খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। বিএনপির শীর্ষ নেতারা আশা করছিলেন, সরকার অন্তত এবার খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য জামিন দেবেন। কিন্তু কোন আশায় কাজে আসেনি। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দলের শীর্ষ নেতারা দলীয় কার্যালয়ে বসে বার বার হাইকোর্টে আইনজীবীদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করেছেন। কি হচ্ছে। আগের দিন বুধবারও গুলশানের দলীয় কার্যালয়ে স্থায়ী কমিটির নেতারা নিজেদের মধ্যে দীর্ঘ আলোচনা করেছেন। সূত্র বলেছে, লন্ডনে অবস্থানরত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমানও শীর্ষ নেতাদের সাথে বার বার কথা বলেছেন। তিনিও আশায় ছিলেন অন্তুত উন্নত চিকিৎসার কারণে হলেও সরকার খালেদা জিয়ার জামিন দেবেন। সরকারের একটি ঘনিষ্ঠ মহলের সাথেও বিএনপির শীর্ষনেতারা নানা ভাবে কথা বলেছিলেন বলে দলীয় একটি সূত্র জানায়। যে কারণে সবাই আশায় ছিলেন জামিনের। কিন্তু কাংক্সিক্ষত ফল না আসায় নেতাকমীরা ভীষণভাবে হতাশ হয়েছেন।

জানা গেছে, দলের চেয়ারপারসনের জামিন না হওয়ায় নেতারা ‘শকড’ হলেও এ ব্যাপারে নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই থাকতে চায় বিএনপি। দলের সাংগঠনিক সক্ষমতা অর্জনের আগ পর্যন্ত প্রয়োজনে বারবার জামিনের জন্য আদালতে যাওয়া হবে। পাশাপাশি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিও পালন করবে বিএনপি। তবে কোন অবস্থায় হরতালের মতো গরম কোন কর্মসূচিতে যাওয়া যাবে না। দলীয় একটি সূত্র বলেছে, মাঠ নেতাদের প্রবল দাবীর প্রেক্ষিতে নেতারা আজ শনিবার সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে তাদের সান্ত¡না দেয়ার জন্য।
দলটির সিনিয়র কয়েকজন নেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, বিএনপি আপাতত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে যাবে। ইস্যু সৃষ্টি হলে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমে পড়বে। হঠকারী কোন সিদ্ধান্তে যাবে না। তবে গতকাল শুক্রবার সকালে স্থায়ী কমিটির সদস্য জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনায় ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, আইনি প্রক্রিয়ায় না হলে লাগাতার আন্দোলনেই বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। মওদুদ আহমদ বলেন, সম্পূর্ণ যৌক্তিক কারণে বেগম খালেদা জিয়ার জামিন চাওয়া হয়েছিল কিন্তু দেয়া হয়নি। এতে করে তাঁকে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে বলেও মনে করেন মওদুদ। বিএনপির নেতারা বলেন, বেগম জিয়ার মুক্তির জন্য নেতাকর্মীদের কঠিন ত্যাগের প্রস্তুুতি নিতে হবে।
শুক্রবার নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে জামিন না দেয়া অমানবিক।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আইনি প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে শুরুতে একটা শঙ্কা ছিল। বারবার জামিন বাতিলের মধ্যে দিয়ে সেটা আরও পাকাপোক্ত হলো। এরপরও আমরা আপিল বিভাগ পর্যন্ত যাবো।’
তিনি বলেন, ‘আইনি প্রক্রিয়ায় যেহেতু খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে শঙ্কা রয়েছে, ফলে আমাদের এখন অন্য পথে যেতে হবে। সেটা রাজপথসহ অন্য সবগুলো পথে চেষ্টা করে তাকে মুক্ত করতে হবে।’
বৃহস্পতিবার দুপুরে খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন বাতিল করেন হাইকোর্ট। এর প্রতিবাদে এদিন বিকালে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি। আজ শনিবার ঢাকাসহ সারাদেশের জেলা ও মহানগরে সমাবেশ ডাকা হয়েছে।

বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, হাইকোর্টে জামিন আবেদন বাতিলের পর দলের সিনিয়র নেতাদের মধ্যে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। নেতারা ভেবেছিলেন, আদালত থেকে অন্ততপক্ষে একটি গাইডলাইন দেওয়া হবে। সূত্রগুলোর ভাষ্য, এই মুহূর্তে খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে যেতে চায় না বিএনপি। দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসা করা। আর সে বিষয়ে আদালত তার সম্মতির ওপর নির্ভর করতে বলেছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় অভিযোগ করে বলেন, ‘দেশের আদালতগুলো তো স্বাধীনভাবে রায় দিতে পারেন না। তাই খালেদা জিয়ার ন্যায়বিচার পাওয়ার সম্ভাবনা সবসময় ক্ষীণ ছিল।’
তিনি বলেন, ‘আইনিভাবে বেগম জিয়ার মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু আছে, সেটা আইনজীবীরাই ভালো বলতে পারবেন।’
আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হাইকোর্টের আদেশ বিষয়ে আপিল বিভাগে আপিল করতে হবে ৩০ দিনের মধ্যে। তবে এর মধ্যে খালেদা জিয়ার সম্মতি পেলে প্যারোল আবেদনের প্রস্তুুতি শুরু করা হবে। যদিও প্যারোল নিয়ে সিনিয়র আইনজীবী থেকে নেতাদের অনেকেরই সন্দেহ, বিএনপি চেয়ারপারসন এ থেকে বিরত থাকবেন। কোনও কোনও নেতা অবশ্য এখনও প্যারোলের পক্ষেই আছেন।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, ‘এখন অ্যাপিলেড ডিভিশনে যেতে হবে। সম্ভবত নিয়ম রয়েছে ৩০ দিনের মধ্যে যাওয়ার। আমরা বারবার চেষ্টা করবো। রাজপথেও আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।’

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘এখন আমাদের করণীয় কী হবে, সেটা তো আমি একা বলতে পারবো না। আমি একা কিছু করতেও পারবো না। কারণ, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার বিষয়টি আমার একক সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে না। দলকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে কীভাবে তাকে আমার মুক্ত করবো।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরামের একজন সদস্য বলেন, ‘এখন হয় প্যারোলে তাকে মুক্ত করতে হবে, আর অন্য পথ হলো রাজপথের আন্দোলন। কিন্তু দলের সাংগঠনিক অবস্থা এবং দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা এই মুহূর্তে আন্দোলন যাওয়ার বিপক্ষে। কারণ, সরকারের এখনও ৪ বছরের মতো মেয়াদ আছে। ফলে এই দীর্ঘ সময় আন্দোলনকে টেনে নেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্যারোলে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে দল থেকে কোনও উদ্যোগ নেওয়ার চিন্তা নেই। সেটা করতে হবে তার পরিবার ও ছেলে তারেক রহমানকে। এছাড়া প্যারোলে মুক্তি নেবেন কিনা, এ ব্যাপারে খালেদা জিয়ার রাজি হওয়ারও বিষয় আছে।’
দলের একাধিক সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি নিয়ে আইনি ও রাজনৈতিক উভয় প্রক্রিয়াতেই চলবে। তবে এর মধ্যে সবচেয়ে কার্যকরভাবে সাংগঠনিক সক্ষমতা অর্জনের চেষ্টা করা হবে। একই সঙ্গে রাজনৈতিকভাবে সাধারণ মানুষ এ দাবিকে কীভাবে দেখে, তাও বিবেচনায় নেওয়া হবে। এক্ষেত্রে মানুষের নিত্যদিনের সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত করে অন্যান্য দলের সঙ্গে দাবি ও ইস্যুর সমন্বয়ের চেষ্টা করবে বিএনপি।
জানতে চাইলে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘এখন আমরা স্থায়ী কমিটির পরবর্তী বৈঠকে করণীয় নিয়ে আলোচনা করবো।’ তিনি বলেন, সরকার তো একের পর এক অন্যায় করে যাচ্ছে। আবারও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি করেছে। মানুষ বুঝছে এ সরকার জনগণের নয়। মানুষ এভাবেই একদিন ফুসে উঠবে। রাজপথে নিজের স্বার্থেই নামবে জনগণ। সেদিন আর বেশি দুরে নয়।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট