চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

করোনাভাইরাস ঠেকাতে দেশে তিন ধাপে প্রস্তুতি

২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ২:০৭ পূর্বাহ্ণ

একের পর এক দেশে কভিড-১৯ রোগ ছড়িয়ে পড়ায় নভেল করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সতর্ক বাংলাদেশ। প্রাণঘাতী এই ভাইরাস এখনও বাংলাদেশে না ঢুকলেও তা প্রতিরোধে তিন ধাপের প্রস্তুতি নেওয়ার কথা জানিয়েছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও আইইডিসিআরের সমন্বয়ে এই প্রস্তুতির খসড়া তৈরি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইইডিসিআরের পরিচালক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। তিনি গতকাল বুধবার করোনাভাইরাস নিয়ে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “বাংলাদেশে এবার অনেক আগে থেকেই করোনাভাইরাসের পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করছিলাম আমরা। যে প্রস্তুতি নিয়ে আমরা কাজ করছি এবং যদি রোগী পাওয়া যায় তখন কী করা হবে, সেসব প্রস্তুতির খসড়া আমরা তৈরি করেছি। সেটা চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া চলছে।” তিন ধাপে পরিকল্পনার বিষয়ে ডা. ফ্লোরা বলেন, “একটা হচ্ছে এলার্ট লেভেল- যখন কোন রোগী নেই, এখন সেই কর্মসূচি আমরা পালন করছি। যখন বিদেশ থেকে রোগী পাওয়া যাবে,

অল্প সংখ্যায়- সেটা আরেকটা লেভেল। আর শেষটা হল যদি অনেক রোগী হয়ে যায়, সেই লেভেল।” তবে বাংলাদেশে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে না বলে আশা করলেও প্রতিরোধের প্রস্তুতিতে কোনো ঘাটতি রাখা হচ্ছে না।
ডা. ফ্লোরা বলেন, “সম্মিলিতভাবে আমরা যে কার্যক্রম নিচ্ছি, তাতে আশঙ্কা করি না যে এ রোগটা দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে।” করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরীক্ষার উপকরণের কোনো সমস্যা নেই বলে জানান তিনি। “কিট পাইপলাইনে আছে, কিট আসতেই থাকেবে। চীন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে আসছে। আমরা নমুনা পরীক্ষার ক্ষেত্রে তো কাউকে ফিরিয়ে দিইনি এখনও।”
ডা. ফ্লোরা বলেন, “আর যদি ১০০ বা ২০০ জন আক্রান্ত হন, সেক্ষেত্রে পরীক্ষার প্রয়োজন নেই বলে নির্দেশনা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। প্রাথমিক উপসর্গ দেখা দিলে ধরে নিতে হবে যে, করোনাভাইরাসের রোগী তারা। সেই অনুযায়ী চিকিৎসা দিতে হবে।”
চিকিৎসার বিষয়ে তিনি বলেন, “করোনার তো কোনো আলাদা চিকিৎসা নেই। কমন কোল্ডের চিকিৎসা দিতে হবে, এদেরকে আইসোলেশনে রাখতে হবে যেহেতু রোগটা ছোঁয়াচে।”

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বরাত দিয়ে আইইডিসিআরের পরিচালক বলেন, “করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের ৮০ ভাগের বেশি মৃদু, ১৪ শতাংশের হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হয়েছে এবং ৬ শতাংশ জটিল অবস্থা নিয়ে আইসিইউ সাপোর্টে চিকিৎসায় রয়েছে।” তিনি জানান, বাংলাদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন চারজনের নমুনা পরীক্ষাসহ সর্বমোট ৮৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হলেও তাদের কারও মধ্যে করোনাভাইরাসের জীবাণু পাওয়া যায়নি। “আমরা প্রত্যেককেই হোম কোয়ারেন্টিনে রেখে ১৪ দিনের নজরদারিতে রেখেছি, তাদের সাথে যোগাযোগ রেখেছি। আর উহান থেকে যারা এসেছে, তাদের ১৪ দিনের বাইরেও আরও ১০ দিন নজরদারিতে রেখেছি কোনো লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা যায় কি না, তা দেখার জন্য। সেই ১০দিনও গতকাল শেষ হয়েছে, কিন্তু তাদের কোনো উপসর্গ দেখা যায়নি।” করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সিঙ্গাপুরে ৫ জন ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে একজন বাংলাদেশির অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে বলে জানান তিনি।
বছরের শুরুতে চীনের উহানে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের পর তা ইতোমধ্যে ৩৯টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়েছে। এতে আক্রান্ত হয়েছে ৮০ হাজারের বেশি মানুষ, মারা গেছেন দুই হাজার সাতশর বেশি মানুষ।

আফগানিস্তান, ওমান, বাহরাইন ও ইরাকেও সংক্রমণ ঘটেছে বলে জানান ডা. ফ্লোরা। তিনি বলেন, চীনের বাইরে সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, ইরান ও ইতালিকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে সেসব দেশে থাকা বাংলাদেশিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। যে দেশগুলোতে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি এবং সুস্থ রোগীদের আক্রান্ত হওয়ার ইতিহাস রয়েছে, সেসব দেশে ভ্রমণের ক্ষেত্রে সতর্কতা এবং ভ্রমণ শেষে স্ক্রিনিংয়ের মধ্য দিয়ে আসার অনুরোধ করেন আইইডিসিআর পরিচালক।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট