অবৈধ অস্ত্র ও মাদকের ব্যবসা, অর্থ পাচারসহ অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে র্যাবের হাতে আটক হওয়া শামিমা নুর পাপিয়াকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছে যুব মহিলা লীগ।
রবিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সংগঠনটির সভাপতি নাজমা আক্তার এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক অপু উকিল স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে- বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক শামিমা নুর পাপিয়াকে সংগঠনের গঠনতন্ত্রের ২২ (ক) উপধারা অনুযায়ী দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হলো।
এর আগে গোপনে দেশ ত্যাগের সময় শামিমা নূর পাপিয়াকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তিন সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। তার বিরুদ্ধে অবৈধ অস্ত্র ও মাদকের ব্যবসা, অর্থ পাচারসহ অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে।
গ্রেপ্তার অন্য তিনজন হলেন- পাপিয়ার স্বামী ও তার অবৈধ আয়ের হিসাবরক্ষক মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী ওরফে মতি সুমন, পাপিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী শেখ তায়্যিবা ও সাব্বির খন্দকার।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাফীউল্লাহ বুলবুল বলেন, গত তিন মাসে তিনি শুধু ঢাকার একটি পাঁচ তারকা হোটেলেই বিল দিয়েছেন এক কোটি ৩০ লাখ টাকা। ওই হোটেলের প্রেসিডেন্ট স্যুট সব সময় তার নামে বরাদ্দ থাকত। হোটেলটির বারে তিনি প্রতিদিন বিল দিতেন প্রায় আড়াই লাখ টাকা। অথচ বৈধভাবে তার বার্ষিক আয় মাত্র ১৯ লাখ টাকা।
র্যাব জানায়, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পাপিয়ার বিষয়ে অনুসন্ধান করছিল একটি দল। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে তড়িঘড়ি করে দেশত্যাগের সময় শনিবার সকালে বিমানবন্দর থেকে তিন সহযোগীসহ তাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১। পরে তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ওই পাঁচ তারকা হোটেল থেকে চার নারীকে আটক করা হয়। মোটা অঙ্কের টাকায় তাদের দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অসামাজিক কাজ করিয়ে আসছিলেন পাপিয়া ও তার স্বামী।
র্যাব-১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাফীউল্লাহ বুলবুল আরো বলেন, গাড়ির ব্যবসার আড়ালে পাপিয়া অবৈধ অস্ত্র, মাদক ব্যবসা ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত। সমাজসেবার নামে তিনি নরসিংদীর অসহায় নারীদের অনৈতিক কাজে লিপ্ত করে আসছিলেন। অধিকাংশ সময় তিনি নরসিংদী ও রাজধানীর বিভিন্ন বিলাসবহুল হোটেলে অবস্থান করেন। সেখানে তার ও তার স্বামীর ব্যবসায়িক অংশীদারদের অসামাজিক কার্যকলাপের জন্য নারী সরবরাহ করাই ছিল তার মূল কাজ। নরসিংদীতে চাঁদাবাজির জন্য তার একটি ক্যাডার বাহিনী আছে।
স্বামীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় অবৈধ অস্ত্র-মাদক ব্যবসা ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে তিনি অল্প সময়ে নরসিংদী ও ঢাকায় একাধিক বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, ফ্ল্যাট, প্লটসহ বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থের মালিক হয়েছেন। তিনি গুলশানের একটি অভিজাত হোটেলের প্রেসিডেন্ট স্যুট নিজের নামে বুক করে নানা ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপ চালিয়ে আসছিলেন। সেখানে তার অধীনে থাকা সাত নারীর কথা জানতে পেরেছে র্যাব। তাদের তিনি প্রতি মাসে ৩০ হাজার করে টাকা দিতেন।
পাপিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী শেখ তায়্যিবা ও সাব্বির খন্দকার জিজ্ঞাসাবাদে জানান, তারা সব সময় পাপিয়ার সঙ্গে থাকতেন। তার ব্যক্তিগত সম্পদের হিসাব ও রক্ষণাবেক্ষণ করতেন। পাশাপাশি তার সব অবৈধ ব্যবসা, অর্থ পাচার ও রাজস্ব ফাঁকি দিতে সহযোগিতা করতেন।
নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি তৌহিদা সরকার রুনা বলেন, ছয় বছর ধরে পাপিয়া যুবলীগের কমিটিতে রয়েছেন। এ ধরনের ঘটনায় জড়িত থাকার তথ্য জানা ছিল না।
এ ব্যাপারে নরসিংদী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মতিন ভূঁইয়া বলেন, অনেক দিন ধরেই পাপিয়া নানা অপকর্মে জড়িত। এলাকার এক এমপি তাকে হঠাৎ যুবলীগে ভিড়িয়েছেন। এর দায় তাকেই নিতে হবে।
র্যাবের অধিনায়ক বলেন, পাপিয়া ও মফিজুর এই দুই স্বামী-স্ত্রী মিলে ঢাকা, গাজীপুর ও নরসিংদীতে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি করেছেন। তাদের নামে একাধিক ফ্ল্যাট, গাড়ি, বাড়ি ও প্লট রয়েছে।
পূর্বকোণ/পিআর