চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪

সারাদেশে জাল টাকা ছড়িয়ে দিচ্ছে ১৪ টি চক্র !

অনলাইন ডেস্ক

২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ২:৩১ অপরাহ্ণ

সারাদেশে জাল টাকা ছড়িয়ে দিচ্ছে ১৪টি চক্র। উন্নতমানের প্রিন্টার ও অন্যান্য সরঞ্জামের সহায়তায় সূক্ষ্ম এপসের মাধ্যমে এসব চক্রের সদস্যরা তৈরি করছে জাল টাকা। এমনকি আসল টাকায় যে রং পরিবর্তনশীল কালি, অসমতল ছাপা, নিরাপত্তা সুতা ও জলছাপ রয়েছে একইভাবে বিশেষ পদ্ধতিতে জাল টাকায়ও জলছাপ ও নিরাপত্তা সুতার ব্যবহার এবং অনেক ক্ষেত্রে অসমতল ছাপাও দেয়া হচ্ছে। একেক চক্র একেক সিরিজের টাকা জাল করছে। বেশি তৈরি হচ্ছে এক হাজার টাকার নোট। এসব জাল টাকা সহসা যে কারো পক্ষে চেনা কঠিন। চক্রগুলো তাদের বিভাগীয় প্রতিনিধিদের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে দিচ্ছে লাখ লাখ জাল টাকা। এছাড়া কিছু বিদেশি নাগরিকও বাংলাদেশে ডলার ও ইউরোর মতো জাল মুদ্রা তৈরি করছে। এসব চক্রের বেশিরভাগ সদস্যই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তালিকাভুক্ত। তাদের অনেকেই বিগত সময়ে জাল টাকা, রুপি ও ডলারসহ গ্রেপ্তার হলেও জামিনে মুক্তি পেয়ে ফের একই কাজ শুরু করেছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, দেশে জাল টাকা তৈরির গডফাদারখ্যাত জাকির বর্তমানে কারাগারে থাকলেও তার চক্রের অন্যরা সক্রিয় রয়েছে। জাল টাকার কারবারি চক্রগুলো মানভেদে জাল ১ লাখ টাকা বিক্রি করছে ১৫ থেকে ২৫ হাজার টাকায়। আর এসব জাল টাকায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দিনমজুর ও স্বল্প শিক্ষিতরা। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) একাধিক কর্মকর্তা জানান, সারাদেশে সক্রিয় জাল টাকার কারবারি ১৪টি চক্রের হোতারা হলেন বিহারি সুমন, সাইফুল ওরফে রিকশা সাইফুল, সেলিম, জাকির, রাজশাহীর জামান, মো. ইমন, হামিদ, শিহাব, হুমায়ুন কবির, আজাদ, কাওসার, সেলিম ব্যাপারী, খসরু ও সাগর। প্রতিটি চক্রে রয়েছে ২০ থেকে ২৫ জন সদস্য। এদের মধ্যে মঙ্গলবার বিকেলে জাল টাকা তৈরির একটি চক্রের হোতা কাওসার হামিদ খানকে (৪৫) দুই সহযোগীসহ রাজধানীর কদমতলী থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবির সিরিয়াস ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের রোবারি প্রিভেনশন টিম। গ্রেপ্তার অন্য দুজন হলেন মো. হেলালউদ্দিন (৫০) ও বাবু শেখ। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে ৪৫ লাখ জাল টাকা, ৫০ থেকে ৬০ লাখ জাল টাকা তৈরির সমপরিমাণ কাগজ এবং জাল টাকা তৈরির নানা সরঞ্জাম (ল্যাপটপ, ইপসন এল ১৩০ প্রিন্টার ও পেনড্রাইভ)।

ডিবির রোবারি প্রিভেনশন টিমের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার মো. সোলায়মান মিয়া জানান,‘প্রাথমিক অনুসন্ধানে সারাদেশে জাল টাকা তৈরির ১৪টি চক্রের সন্ধান পাওয়া গেছে। এদের অনেকেই ১০ থেকে ১৫ বছর ধরে জাল টাকা তৈরি করে আসছে। বিশেষ ধরনের কাগজে এরা নিখুঁতভাবে জাল টাকা তৈরি করে বিভাগ ও জেলাতে তাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছে। এদের অনেকেই অতীতে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিল। কিন্তু জামিনে মুক্তি পেয়ে আবার একই পেশায় নিয়োজিত হয়।’ তিনি আরো জানান, ‘বর্তমানে এরা বিশেষ ধরনের অ্যাপসের মাধ্যমে এই জাল টাকা তৈরি করছে। যা সাধারণ যে কারো পক্ষেই ধরা কঠিন। উন্নতমানের লাখ জাল টাকা বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ হাজারে। আর নিম্নমানের টাকা বিক্রি হচ্ছে ১৫ হাজারে। এরা বেশিরভাগ সময় পাইকারি দরে জাল টাকা বিক্রি করে। তবে অনেক সময় সাধারণ ক্রেতা সেজে ছোট দোকানে জাল টাকা দিয়ে মালামাল কিনতে যায়। ধরা পড়ে গেলে তারা নিজেরাই প্রতারিত হয়েছে এমন ভাব ধরে।’

ডিবির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত কয়েক বছরে জাল টাকা তৈরি আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। আসল টাকায় যে রং পরিবর্তনশীল কালি, অসমতল ছাপা, নিরাপত্তা সুতা ও জলছাপ রয়েছে একইভাবে বিশেষ পদ্ধতিতে জাল টাকায়ও জলছাপ ও নিরাপত্তা সুতার ব্যবহার এবং অনেক ক্ষেত্রে অসমতল ছাপাও দিচ্ছে। চক্রগুলো রাজধানীর নীলক্ষেত থেকে বিশেষ ধরনের পাতলা কাগজ কিনে দুটি কাগজ আঠা দিয়ে এক করে জাল টাকা ছাপছে। এসব চকচকে টাকায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমানের নকল স্বাক্ষর দিচ্ছে। কিন্তু নতুন টাকায় তার স্বাক্ষর থাকার কথা নয়। ডিবি কর্মকর্তারা বলছেন, জাল টাকার কারবারিরা শুধু যে টাকা জাল করছে তা নয়। প্রতিবেশী দেশ ভারতের রুপি এবং যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস ডলারও জাল করছে। এ পরিস্থিতিতে এসব চক্রের ওপর বাড়তি নজর রেখেছেন তারা। বিশেষ করে যারা জেল থেকে জামিনে বের হচ্ছে তাদের পেছনে সোর্স লাগিয়ে রাখা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় গ্রেপ্তার করা হয় কাওসার হামিদকে। জাল টাকা তৈরির অভিযোগে তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা রয়েছে।

তথ্যসূত্র: দেশ রূপান্তর

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

পূর্বকোণ/এম

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট