চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সড়ক দুর্ঘটনায় বাড়ছে মৃত্যু আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করুন

৭ জানুয়ারি, ২০২০ | ২:০৬ পূর্বাহ্ণ

বেসরকারী সংগঠন নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) সড়কদুর্ঘটনা নিয়ে শনিবার যে তথ্য প্রকাশ করেছে তা রীতিমতো উদ্বেগকর। নিসচা’র তথ্য অনুযায়ী দেশে সড়কদুর্ঘটনার সংখ্যা ও মৃত্যুর হার দুই-ই বাড়ছে। কিন্তু বিপরীতে প্রতিকার উদ্যোগ তেমন জোরালো নয়। প্রকাশিত তথ্যে দেখা যাচ্ছে, গত বছর ৪৭০২টি সড়কদুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় মারা গেছে ৫২২৭ জন। এর আগের বছর ৩১০৩টি সড়কদুর্ঘটনায় ৪৪৩৯ জন মারা যায়। দেখা যাচ্ছে, এক বছরে সড়কে দুর্ঘটনা বেড়েছে ১৫৫৯টি এবং প্রাণহানির সংখ্যা বেড়েছে ৭৮৮জন। প্রাণহানি বৃদ্ধির হার ১৮ শতাংশ। প্রতিদিন গড়ে ১৮জনের বেশি মারা গেছে। বছরখানেকের ব্যবধানে সড়কদুর্ঘটনার এভাবে সংখ্যা ও মৃত্যুর হার বৃদ্ধি খুবই উদ্বেগজনক বলতে হবে। প্রসঙ্গত, প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে। কিন্তু সড়কদুর্ঘটনার সব খবর গণমাধ্যমে আসে না। ফলে সড়কদুর্ঘটনা এবং দুর্ঘটনাজনিত হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা আরো বেশি হওয়াটাই স্বাভাবিক।

নিসচার প্রতিবেদন অনুযায়ী, জেলাভিত্তিক হিসাবে সারা দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সড়কদুর্ঘটনা ঘটেছে ঢাকা জেলায়, ৩০৯টি। এতে নিহত হয়েছে ৩৩৫ জন ও আহত হয়েছে ৩২৭জন। সবচেয়ে কম সড়কদুর্ঘটনা ঘটছে খাগড়াছড়িতে ৭টি, যাতে নিহত হয়েছে ২৭জন, আহত হয়েছে ১০জন। অন্যদিকে সড়কদুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি মানুষ নিহত হয়েছে ময়মনসিংহে, ৪৮৮জন। আর সবচেয়ে কম নিহত হয়েছে ঝালকাঠিতে, ৫জন। সড়ক দুর্ঘটনায় পথচারী নিহত হয়েছে ২৬৬১ জন, যা মোট নিহতের অর্ধেক। বলা হয়েছে, পথচারীরা গাড়ি চাপায়, পেছন থেকে ধাক্কাসহ বিভিন্নভাবে দুর্ঘটনায় পড়েছে। এতো বেশি পথচারী নিহত হওয়ার পেছনে রয়েছে, ট্রাফিক আইন সম্পর্কে অজ্ঞতা, চলাচল ও রাস্তা পারাপারের সময় মোবাইল ফোনে কথা বলা, জেব্রাক্রসিং ও পথচারী পারাপার, আন্ডারপাস, ও ফুটওভারব্রিজ ব্যবহার না করা প্রভৃতি কারণ। নিসচা’র তথ্য অনুযায়ী, গত বছর মোটরসাইকেলে ১০৯৮টি দুর্ঘটনা ঘটেছে, যাতে ৬৪৮জন চালক ও আরোহী নিহত হয়েছে। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বাড়ারও এই চিত্র নিশ্চয়ই উদ্বেগজনক। বিআরটিএ’র তথ্য মতে, দেশে মোটরসাইকেলের সংখ্যা ২৭ লাখ ৮৬৯৪টি। কিন্তু বিপরীতে চালকের লাইসেন্স আছে ১৩ লাখ ৬০৯০৩টি। অর্থাৎ সোয়া ১৪ লাখ চালক অবৈধভাবে মোটরসাইকেল চালাচ্ছে। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে এরাই প্রধান ভূমিকা রাখছে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে এ ক্ষেত্রে আইনের কঠোর প্রয়োগ হচ্ছে না। এটি দুঃখজনক।

বিভিন্ন গবেষণা রিপোর্ট বলছে, বিশ্বে সড়কদুর্ঘটনার দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। বাংলাদেশে সড়কদুর্ঘটনায় এক দশকে যত মানুষ মারা যায়, বড় বড় যুদ্ধেও এত মানুষ মারা যায়নি। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সড়কে প্রতি বছর বাংলাদেশে ২১ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটছে। গত এক দশকে সড়কদুর্ঘটনায় বাংলাদেশে লক্ষাধিক মানুষ মারা গেছে। দুর্ঘটনায় নিঃস্ব হয়ে পথে বসে অনেক পরিবার। সড়কদুর্ঘটনার কারণগুলো হচ্ছে- বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, বিপজ্জনক অভারটেকিং, রাস্তা-ঘাটের নির্মাণ ক্রটি, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা, চলন্ত অবস্থায় মোবাইল বা হেডফোন ব্যবহার, মাদক সেবন করে যানবাহন চালানো, মহাসড়ক ও রেলক্রসিংয়ে ফিডার রোডের যানবাহন উঠে পরা, রাস্তায় ফুটপাত না থাকা বা ফুটপাত বেদখলে থাকায় রাস্তার মাঝপথে পথচারীদের যাতায়াত প্রভৃতি। নিসচা’র প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, সড়কে অদক্ষ চালক, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, রাস্তার ত্রুটি, আইনের অমান্য করাই সড়কদুর্ঘটনার মূল কারণ। কিন্তু কারণ শণাক্ত করা হলেও প্রতিকারে বলিষ্ঠ পদক্ষেপের অভাব রয়েছে। ফলে জ্যামিতিক হারেই বাড়ছে দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর মিছিল। কিন্তু টেকসই উন্নয়নের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিতে সড়কদুর্ঘটনা রোধের বিকল্প নেই। আমরা মনে করি, কারণগুলো শণাক্ত করে একে একে সমাধানের চেষ্টা করা জরুরি। আর সরকার একার পক্ষে এই সমস্যার সুচারু সমাধান কঠিন। এজন্য সমন্বিত চেষ্টা প্রয়োজন।

শেয়ার করুন