চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

সর্বোত্তম আদর্শের মহামানব মুহাম্মদ (সা.)

শাহীন হাসনাত

২৩ অক্টোবর, ২০২০ | ১২:৫০ অপরাহ্ণ

মানবতার মুক্তির দূত হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সব মানুষের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের জন্য রাসুল (সা.)-এর আদর্শই সর্বোত্তম আদর্শ।’ সারা বিশ্বে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব যুগের সব মানুষের সেরা মানুষ নবী মুহাম্মদ (সা.)। দুনিয়ার সবচেয়ে আলোচিত ও উচ্চারিত নামও এটা। রবিউল আউয়াল মাসের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে সর্বত্র রাসুল (সা.) সম্পর্কে আলোচনা হয়। তার আদর্শে নতুন করে পথ চলার শপথ গ্রহণ করেন উম্মতরা। বছরের চাকা ঘুরে রবিউল আউয়াল মাস আমাদের সামনে হাজির। তাই নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি দরুদ ও সালাম দিয়ে শুরু করছি আজকের লেখা।

বিশ্বনবী ছিলেন শান্তি, সাম্য, ভ্রাতৃত্ব ও ইসলামি ঐক্যের শ্রেষ্ঠ রূপকার। তিনি ছিলেন মানবজাতির মুক্তি ও সর্বোত্তম আদর্শের দিশারী। বিশ্ববাসীর নৈতিক উন্নয়নসহ সার্বিক উন্নয়নকে পরিপূর্ণতা দিতেই তার আবির্ভাব ঘটেছিল। আমরা জানি, মহানবীর আবির্ভাব ঘটে মানবজাতির এক চরম দুঃসময়ে। যখন বিশ্বজুড়ে বিরাজ করছিল হানাহানি, জাতিগত সংঘাত, কুসংস্কার, অনাচার এবং জুলুম ও বৈষম্যের দৌরাত্ম্য। নারী জাতির ছিল না কোনো সম্মান। শিরক ও কুফরির অন্ধকারে গোটা পৃথিবী ছিল আচ্ছন্ন। কিন্তু নবী করিম (সা.) ইসলামের বাণী দিয়ে অজ্ঞ, কুসংস্কারাচ্ছন্ন এবং সব ধরনের নৈতিক গুণ বিবর্জিত মূর্তি পূজারী বর্বর আরব জাতির মধ্যে বিশাল পরিবর্তন আনেন। ফলে তারা উন্নত ও সভ্য জাতি হিসেবে পরিণত হন। নবী করিম (সা.)-এর দাওয়াত ও সান্নিধ্য অসভ্য ও বর্বর আরব জাতির চরিত্রকে বিস্ময়করভাবে বদলে দেয়।

নবী করিম (সা.) তার শ্রেষ্ঠ চরিত্র ও আদর্শের মাধ্যমে আরব জাতির মধ্যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনেন। ফলে তারা মুসলমান হওয়ার পর যুদ্ধক্ষেত্রে জখম হয়ে চরম পিপাসায় যখন মৃত্যুর সম্মুখীন হতো তখন কেউ তাদের পানি দিতে চাইলে সে বলত, আমার অমুক আহত ভাই সম্ভবত আরও বেশি তৃষ্ণার্ত, তাকে আগে দিন; অন্য আহত আরব মুসলমানও বলতেন একই কথা! এ ধরনের ইসলামি বৈশিষ্ট্যের কারণেই একসময় মুসলিম উম্মাহ বিশ্বকে উপহার দিয়েছিল মানব ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ সভ্যতা। জ্ঞানার্জনের প্রতি ইসলাম ও মহানবীর অশেষ গুরুত্বারোপের কারণে বহু জ্ঞানী, গুণী, দার্শনিক ও মহামনীষী উপহার দিতে সক্ষম হয় মুসলমানরা।

কিন্তু গত কয়েক শ’ বছরে মুসলমানরা নানা দুর্বলতার কারণে, বিশেষ করে ইসলাম শিক্ষাকে জীবনের সবক্ষেত্রে পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে পারেনি বলে; জ্ঞান-বিজ্ঞান ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রসহ নানা ক্ষেত্রে বিপর্যয়ের শিকার হচ্ছে। গোটা বিশ্বের বেশিরভাগ অঞ্চলই শিকার হয় পশ্চিমা উপনিবেশবাদের। ফলে মুসলমানরা বিশ্বের ওপর তার প্রত্যাশিত প্রভাব প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। কিন্তু হতাশার কোনো কারণ নেই, এখনো যদি মুসলমানরা ইসলাম ও কোরআনের পথে ফিরে এসে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রচেষ্টা চালায়; তাহলে সব ধরনের অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা থেকে মুক্ত হয়ে আবারও সব দিকে প্রভাবশালী হতে পারবে এবং গোটা মানবতা পাবে প্রত্যাশিত মুক্তি ও অপার কল্যাণ।

নবী মুহাম্মদ (সা.) যে সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলেছিলেন, সেখানে ভাষা, বর্ণ, গোত্র কিংবা জাতিগত পার্থক্যের কারণে কারও অধিকার কমবেশি ছিল না। রাসুল প্রতিষ্ঠিত সমাজে খোদাভীরুতাকে ধরা হতো মর্যাদার মানদ-। একজন নিঃস্ব কিংবা কালো বর্ণের ক্রীতদাসও পেত অন্য যেকোনো মুসলমানের মতো স্বাভাবিক মর্যাদা। যোগ্যতাবলে তারা সেনাপতি কিংবা মুয়াজ্জিন ও শিক্ষক হয়েছেন। নারী থেকে শুরু করে প্রতিবন্ধীরাও নিশ্চিন্তে রাসুলের কাছে এসে তাদের সমস্যার কথা বলতেন। এ সবই হলো সব ধরনের ঐক্যের মহাসূত্র। যার বাস্তবায়ন মুসলিম সমাজের জন্য অপরিহার্য ও একান্ত জরুরি বিষয়।

পবিত্র কোরআন বলেছে, ‘মুসলমানরা পরস্পরের ভাই।’ ইসলাম দুজন মুসলমানের মধ্যে বিরোধ মিটিয়ে দেওয়া এবং তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব জোরদারকে ব্যাপক গুরুত্ব দিয়েছে। নবী করিম (সা.) তার সহনশীলতা, উদারতা ও ক্ষমাশীলতার মাধ্যমে বহু গোত্র এবং বিবদমান মুসলমানদের মধ্যে শান্তি ও ঐক্য প্রতিষ্ঠা করেছেন। জাতিগত গরিমা ও বংশীয় ভেদাভেদের সীমারেখাকে ভুলে অনাথের পাশে দাঁড়িয়েছেন। শিক্ষার গুরুত্ব, যুদ্ধবন্দিদের মুক্তি, সার্বভৌমত্ব রক্ষা, ভিন্ন রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন এবং ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের নিরাপত্তা দেওয়া থেকে শুরু করে জীবন চলার সবক্ষেত্রে তিনি দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন বিশ্ববাসীর সামনে। এই বিষয়গুলোকে সামনে রেখে, নবীর আদর্শ মতে এখনো যদি মুসলমানরা উদ্যোগী হয় তাহলে বিশ্বে শান্তি, সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের সমাজ প্রতিষ্ঠিত হবে। রবিউল মাসে এটাই হোক আমাদের প্রত্যাশা। সূত্র: দেশ রূপান্তর

লেখক : মুফতি ও ইসলামবিষয়ক লেখক

 

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন