চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

ডাকের অপেক্ষায় ঢাকিরা

মরিয়ম জাহান মুন্নী

২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০ | ৩:১৯ অপরাহ্ণ

দুর্গাপূজার দিন দশ-পনেরো আগে কাঁধে ঢাক নিয়ে বেরিয়ে পড়তেন তাঁরা। ফিরতেন পূজা শেষ হাওয়ার পরে। কেউ যেতেন শহরে, কেউবা গ্রামে। যার যেখানে ডাক পড়ত। কিন্তু এ বার ভিন্ন চিত্র। দুর্গাপুজোর যদিও কিছুদিন দেরি, কিন্তু এখনও কোনও ঢাকিই বায়না পাননি।
অন্যান্য বছর এই সময় ঢাকের ‘ফিটিং’ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন ঢাকিরা। অনেকে ঢাকের খোল তৈরি করেন। নিয়মিত রেওয়াজ হয়। কিন্তু করোনা সবকিছু বদলে দিয়েছে। বাশঁখালীর সাধনপুরের প্রবীণ ঢাকি অজিত জলদাস বলছিলেন, “বাইরের কোনও পূজা থেকে এখনও ফোন আসেনি। সবই অনিশ্চিত। কী হবে, বুঝতে পারছি না।”
বৃহত্তর চট্টগ্রাম জেলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে তিন-চার হাজার ঢাকি আছেন। দুর্গাপূজার সময়ে তাঁদের মধ্যে দেড়-দুই হাজার শিল্পী চট্টগ্রামসহ দেশের নানা প্রান্তের মন্ডপে ঢাক বাজাতে যান। অনেকে জেলার বড় বড় ম-পে থাকেন। উদ্যোক্তাদের সঙ্গে অনেকের চুক্তি থাকে। কেউ কেউ শুধু পূজার সময়েই বরাত পান। কেউ আবার প্রবীণ ঢাকিদের সঙ্গী হয়ে বেরিয়ে পড়েন। দুর্গাপূজার সময়ে যাতায়াত বাদ দিয়ে ম-পে কমবেশি পাঁচ দিনের বরাত থাকে ঢাকিদের। খুব কম হলেও জন পিছু ৫-১০ হাজার টাকা রোজগার হয়। কিন্তু এ বার কী হবে?
দেবেন দাস নামে চন্দনাইশের এক ঢাকি বলেন, “দুর্গাপূজার মউসুমেই আমাদের প্রায় সারা বছরের রোজগার হয়। কিন্তু এ বার এখনও কোনও ফোন আসেনি।” শীতল দাস নামে বোয়ালখালীর আরেক ঢাকি বলেন, “আমরা একসঙ্গে আটজন চট্টগ্রাম শহরের বড় পুজোগুলোতে যাই। কিন্তু এবার তিন জনকে ডেকেছে। বাকিদের এবার যেতে হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে পূজা কমিটি।”
পূজা কমিটি করোনা পরিস্থিতিতে জেলার বড় বড় পূজাতেও কাটছাঁট হয়েছে। সেখানেও কমছে ঢাকির সংখ্যা। পটিয়ার বাশিমোহন জলদাস বলছিলেন, “ঢাক, কাঁসি নিয়ে এক-একটা দলে পাঁচ-সাত জন করে থাকি। স্থানীয় ম-পগুলি থেকেও আমরা ডাক পেতাম। এবার তাও কম আসছে।”
বোয়ালখালীতে বিনয়বাশী জলদাসের ১০টি পরিবার মওসুমী ঢাকি। দুর্গাপূজার মওসুমে ঢাক বাজান। করোনা আবহে এবার ভিন্ন। ফলে রোজগারে টান। তারপরে পূজায় কী হবে তাও নিশ্চিত নয়।
নগরীর পাথরঘাটার দুলাল ও রাজকুমার জানান, পূজামন্ডপে পাঁচদিন বাজালে জনপ্রতি ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা পাওয়া যায়। খাওয়া-থাকার ব্যবস্থা উদ্যোক্তারাই করেন। এবার সেটা অনিশ্চিত। কোন পূজা কমিটি অগ্রিম বায়না করেননি। তবে এখনই হতাশ হতে রাজি নন তাঁরা। ঢাকিরা মনে করিয়ে দিয়েছেন, “ঢাকের বোলে মা দুর্গার বোধন হয়, বিসর্জনও হয়।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট