চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪

আজ বিদ্রোহী কবির ১২১তম জন্মবার্ষিকী

অনলাইন ডেস্ক

২৫ মে, ২০২০ | ১১:৩৯ পূর্বাহ্ণ

মহাবিদ্রোহী রণ-ক্লান্ত আমি সেইদিন হব শান্ত,

যবে উৎপীড়িতের ক্রণ্দন রোল, আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না,

অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না

‘বিদ্রোহী’ জাতীয় কবির সৃষ্ট এক অসাধারণ কবিতা। ১৯২১ সালে তৎকালীণ বৃটিশ শাসিত বিশাল ভারতবর্ষে এই একটি কবিতা সকলকে বিস্ময়কর ভাবে নড়ে-চড়ে বসতে বাধ্য করেছিল। মাত্র একুশ বছর বয়সে রচিত এই কবিতার মাধ্যমে ভারতবর্ষে ধূমকেতুর মতো বিস্ময়কর আত্মজাগরণ হয় এক মহান কবি কাজী নজরুল ইসলামের। তারপর থেকে পাদ-প্রদীপে আসা এই কবি লিখেছেন দেশের স্বাধীনতার পক্ষে আর গণমানুষের নিপীড়ন, বৈষম্য, শোষণ ও পরাধীনতার বিরুদ্ধে।  ভারতবর্ষের মুক্তি দাবির পাশাপাশি তার লেখনীতে অসাম্প্রদায়িক চেতনা, বিশ্বমানবমুক্তি কবিতা-গান উঠে এসেছে। আজ ১১ জ্যৈষ্ঠ। বিশ্বমানবতার উপর নিপীড়ন, বৈষম্য, শোষণ ও পরাধীনতার বিরুদ্ধে অগ্নিকণ্ঠে সোচ্চার কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২১তম জন্মজয়ন্তী।

বিশেষ এ দিনটিকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর জাতীয় পর্যায়সহ সারাদেশে উদযাপন করা হয় নানান অনুষ্ঠান। তবে ঈদ ও করোনার মহামারির কারণে এ বছরটা অন্য বছরের চেয়ে আলাদা।

কবির এবারের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিদের্শনা অনুসরণ করে করোনাভাইরাস সংক্রমন এড়াতে জনসমাগম না করে ডিজিটাল পদ্ধতিতে জাতীয়ভাবে এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান নানা কর্মসূচি গ্রহন করেছে। এর মধ্যে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২১তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে সংস্কৃতিমন্ত্রণালয় নির্মাণ করেছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘জাগো অমৃত পিয়াসী’। সকাল এগারোটা হতে বিটিভিসহ বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে একযোগে এই অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হবে।

এর আগে সকাল ১১টায় স্বাস্থ্যবিধি ও শারীরিক দূরত্ব মেনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন জাতীয় কবির সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্যে শুরু হবে দিনের আনুষ্ঠানিকতা। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি সচিব ড. মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল।

এছাড়াও অসাম্প্রদায়িকতা ও মানবতার তূর্যবাদক কবি কাজী নজরুলের এ জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে দেশের ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট আয়োজন করেছে ‘নব যুগ ঐ এল ঐ’ শিরোনামের বিশেষ অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানটি আয়োজন সম্পর্কে ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমেদ লিসা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নিদের্শনা অনুসারে জনসমাগম এড়িয়ে ডিজিটাল পদ্ধতিতে আমরা জাতীয় কবিকে স্মরণ করবো তারই সৃষ্ট গান-কবিতা দিয়ে। অনুষ্ঠানটি শুরু হবে সন্ধ্যা ৭টায়। আয়োজনটি দেখা যাবে ইউটিউব চ্যানেল।

কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬ বঙ্গাব্দে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে। বাবার নাম কাজী ফকির আহমেদ, মা জাহেদা খাতুন। দরিদ্র পরিবারে জন্মের পর দুঃখ-দারিদ্র্য ছিল তাঁর নিত্যসঙ্গী। তাঁর ডাকনাম ছিল দুখু মিয়া। বাবার অকালমৃত্যুতে পরিবারের ভরণপোষণের জন্য তিনি শিশু বয়সেই মক্তবে শিক্ষকতা, হাজি পালোয়ানের মাজারে খাদেম, মসজিদে মুয়াজ্জিনের কাজ করেন। তবে নিজের দুঃখ নিয়ে নয়, তিনি জাতির দুঃখ-ক্লেশ, দৈন্য-লজ্জা ঘোচানোর জন্য ভাবতেন সব সময়।

কাজী নজরুল ইসলাম বিশ শতকের বিশ ও ত্রিশের দশকে উপমহাদেশের অবিভক্ত বাংলার সাংস্কৃতিক জগতে সবচেয়ে বর্ণাঢ্য ব্যক্তিত্ব। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্যর্থ অনুকরণ ও অনুসরণের কৃত্রিমতা থেকে আধুনিক বাংলা কবিতাকে মুক্ত করার ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা ছিল সবচেয়ে সফল। তিনিই রবীন্দ্র-উত্তর বাংলা সাহিত্যে আধুনিকতার পথিকৃৎ। নজরুল তাঁর কবিতা, গান ও উপন্যাসে পরাধীন ভারতে বিশেষ করে অবিভক্ত বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতা, সামন্তবাদ, সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন।

কোমল আর কঠিনে মেশানো এক অপূর্ব ব্যক্তিত্ব কাজী নজরুল ইসলাম। প্রেমে পূর্ণ, বেদনায় নীল। আবার প্রতিবাদে ঊর্মিমাতাল। তিনি আমাদের অনন্ত প্রেরণার উৎসও। বাংলার মানুষের সবচেয়ে কাছের, প্রাণের মানুষ তিনি। স্বাধীনতার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে অসুস্থ কবিকে সপরিবারে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। বঙ্গবন্ধু কাজী নজরুল ইসলামকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করেন। পরে তাঁকে জাতীয় কবি হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

পূর্বকোণ/পিআর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট