চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪

হাসান আজিজুল হক, সরল জটিল গভীর

গত সংখ্যার পর

হামীম কামরুল হক

১৩ মার্চ, ২০২০ | ২:৫৩ পূর্বাহ্ণ

বলাবাহুল্য হাসানের গদ্যের সরলতায় সর্বত্রই সবলতা প্রবল। এই গদ্য পড়তে যতটা সহজ, আয়ত্ত করা ততটাই কঠিন। সেই বলিষ্ঠ সরল গদ্যেই তিনি লিখে গেছেন তার গল্প-উপন্যাস ও প্রবন্ধ। আরও একটি বিষয় খেয়াল করার ছোটোগল্প ও উপন্যাসে হাসানের গদ্যের আবেদন একজন কবির। অন্যদিকে প্রবন্ধের গদ্যের আবেদন একজন দার্শনিকের। এর পাশাপাশি হাসান আজিজুল হক আরেক শ্রেণির রচনা লিখেছেন যা ওই গল্প বা প্রবন্ধের সঙ্গে যায় না। এর ভেতরে পড়ে ‘চালচিত্রের খুঁটিনাটি’, ‘একাত্তর : করতলে ছিন্নমাথা’র মতো লেখা। সেখানে তিনি যে পরিস্থিতিগুলো হাজির করেছেন তা গল্প-উপন্যাস না হয়েও তার মাত্রা ও অভিঘাতের তীব্রতায় কোনো কমতি নেই। চালচিত্রের খুঁটিনাটির দূরবাসী লেখাটির যেই অংশটি তুলে ধরা যাক, এ নিয়ে শিবনারায়ণ রায়ের মন্তব্যটিও আমরা দেখে নিচ্ছিÑ
‘নিজের দেহের ভিতরটা মনে হয় জংধরা পুরোনো মেশিন খেয়াল করে দেখি ব্যাগ খালি, মাথার ভিতরটা খালি, বুকের ভিতরে কতকগুলো জবরজং যন্ত্র ছাড়া আর কিছুই নেই। অনেকদিন আসা হয় নি। তবু চিনতে পারি। ডোবার কালো পচা পানি স্থির হয়ে আছে।
দরজা খুলে যায় আধময়লা শাদা শাড়ি পরা কোলকুঁজো ছোট মানুষটি কতো দূরে দাঁড়িয়েÑএতদূর এলাম। কিছুতেই মেঝেটুকু পেরিয়ে তাঁর কাছে যেতে পারি না আমি তাঁর নষ্ট ঘোলা চোখ দুটি দেখলাম। মুখের চামড়ায় ধরেছে পোড়া কালো রং, অসংখ্য ভাঁজে জীর্ণ কাগজের মতো রসহীন কপাল, শনে নুড়ির মতো পাকা এলোমোলো চুল।
মা সোজা হয়ে দাঁড়াবার চেষ্টা করেন। সম্ভব হয় না। নিজের বেতো অথর্ব শরীরটা নিয়ে তিনি হাঁজর পাঁজন করে আমার দিকে এগিয়ে এসে প্রথমে দুহাত দিয়ে আমার দুহাত ধরেন। খর্খরে শুকনো হাত একট টুকরা শিরীষ কাগজের মতো আমার হাড়ের উপর দিয়ে চলে যায়। তাঁর মুখের ভাঁজগুলো আরো ট্যারাব্যাঁকা হয়ে ওঠে। আমরা বুকের কাছে তাঁর শাদা মাথাটা ঘনঘন ঝাঁকুনি খেতে থাকে। তারপর কি অসম্ভব ব্যাকুলতার সঙ্গে আমার মাথাটা টেনে নামিয়ে, টেনে অনেকটা নামিয়ে আমার গালে শব্দ করে চুমো খানÑ তারপর অন্যগালেও।
আমি কেন স্তম্ভিত হয়ে যাই? প্রচ- অদৃশ্য চড়ের ভয়ে দুগাল যে আমার সিঁটিয়ে থাকে। মায়ের মুখের লালায় সেই গাল একটু ভিজে যায় আর কানের কাছে আবার ফেটে পড়ে সেই দীর্ঘশ্বাসের শব্দÑমরুভূমির হাওয়ার মতো। যার উপর দিয়ে যায়, শুষে নেয় তার রসটুকু।
কিন্তু আমি কিছুই বোধ করি না। কোথাও নাড়া খাই না। কিছুই জেগে ওঠে না, ব্যাগ কাঁধে জানোয়ারের মতো দাঁড়িয়ে থাকি- কিছুতেই যোগাযোগ হয় না।’
শিবনারায়ণ রায় বলেছিলেন, বর্ণনাতে এই নিস্পৃহতা ও আবেগহীনতায় হাসান এক প্রবল ব্যতিক্রম, সবচেয়ে বড়ো কথা, “ইউরো-আমেরিকান লেখকদের অনুকরণে পশ্চিমবাংলার অনেক সমকালীন কাহিনিকারই ‘অ্যালিয়েনেশন’কে তাঁদের লেখার উপজীব্য করেছেন। কিন্তু হাসানের আট পৃষ্ঠার স্কেচে যে অনতিক্রম মানস ব্যবধানের আভাস দিয়েছেন পশ্চিমবাংলা এখনকার গল্প উপন্যাসে তার তুলনা দেখি না।
যে নাড়িটা দিয়ে আমি তাঁর সঙ্গে বাঁধা ছিলাম, জন্মের পর মুহূর্তেই কেউ তা কেটে ছিন্ন করে দিয়েছে।
কাল সকালে উঠেই ফিরতি বাস ধরতে হবে। আমি হাত-পা টান টান করে দিয়ে আবার ছাদের দিকে চেয়ে থাকি।” শিবনারায়ণের সঙ্গে আমরাও বলতে বাধ্য হই, ‘যেমন নির্মেদ গদ্য তেমনই নিরুচ্ছ্বাস আর্তি। নিঃসর্তকভাবে তারিফ করার মতো লেখক হাসান আজিজুল হক।’’ লক্ষণীয় শিবনারায়ণ রায়ের কথাটি যে, ‘নিঃসর্তকভাবে তারিফ’ না করে পারা যায় না হাসানকে।
ইদানীং হাসানের অনেক লেখা তৈরি হচ্ছে মুখের কথা ধরে। যেগুলো পরে লিখিত আকারে সম্পাদিত। মনে রাখার দরকার, তার সাক্ষাৎকার ও বক্তৃতাতেও এমন এক ভঙ্গি থাকে, তাতেও লেখক হাসান আজিজুল হকের কথক হিসেবে ভিন্ন আমেজ পাওয়া যায়। ফলে ছোটোগল্প, প্রবন্ধ, উপন্যাস, আত্মকথা, আত্মজীবনী, সাক্ষাৎকার, বক্তৃতা থেকে তার নিজস্ব শৈলীর মূল যে দিকটা প্রকটিত সেটি হলো জটিল বিষয়ে তার সরলতা ও গভীরতাময় বিচার বিশ্লেষণ। যেমন এদেশে কয় ধরনের সংস্কৃতি আছে?Ñতিনি উত্তর খুঁজেছেন তিনি এভাবেÑ“এই প্রশ্নের সহজ জবাব হচ্ছে, এ পর্যন্ত বাংলাদেশের ললাটে যতোগুলি সরকার এসেছে, ঠিক ততগুলি সংস্কৃতিও পিছু পিছু এসেছে।’’ এ বিষয়টি স্পষ্ট করে তুলে ধরতে গিয়ে তিনি যা বলেন, বর্তমানেও তা সমানভাবে প্রাসঙ্গিক,Ñ “পাকিস্তানি আমলে প্রধান যে দুটি মশলা দিয়ে সংস্কৃতি রান্না হতো, সে দুটি মশলা হচ্ছে ইসলাম ও সাম্প্রদায়িকতা। এতদিন পরে ঐ দুটি মশলারই তীব্র ঝাঁজ আবার পাওয়া যাচ্ছে। এইখানেই বলে রাখি, যে ইসলামের কথা বললাম তা এদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষের ইসলাম নয়, ধর্মের সঙ্গে প্রকৃতপ্রস্তাবে তার কোনো যোগ নেই। এ ইসলাম হচ্ছে রাজনীতির ইসলাম, যোগ যার ক্ষমতার রাজনীতির সঙ্গে। সোজা কথাটা হচ্ছে, সরকারি সংস্কৃতি ক্ষমতাসীন সরকারের তৈরি করে নেওয়া সংস্কৃতি, সরকারের প্রয়োজনেই তার সৃষ্টি প্রসার ও শ্রীবৃদ্ধি। ক্ষমতাসীন সরকার মাত্রেরই দধির অগ্র ও গোলের শেষ বরাদ্দ, কাজেই সরকারি সংস্কৃতির পক্ষে চর্তুদিকে কাড়া-নাকাড়া বাজতে থাকে, তার উপর পালিশ পড়ে, অগ্রসর বিজ্ঞানযুগের সব সুবিধা তার উপরেই বর্ষিত হয়, রেডিও, টেলিভিশন, কব্জা-করা খবরের কাগজ, ধুলো পড়ার মুখে ফণা-গুটোনো সাপের মতো নিয়ন্ত্রিত বেসরকারি সংবাদপত্র সবকিছুই তার পক্ষে তাল ঠুকে নেমে পড়ে। তখন সাংস্কৃতির আসল প্রশ্নটা চাপা পড়ে যায়- কোনো বিবেচনাই আর সামনে আসতে পারে না।’’১৯৮৪ সালে ‘বাঙালি সংস্কৃতি : গ্রহণ বর্জনের সংকট’ প্রবন্ধে তিনি এই যে কথাগুলো বলেছিলেন তাঁর মোচড় এখনো পাঠক মাত্রই অনুভব করবেন। এমন আরো অসংখ্য দৃষ্টান্ত দেওয়া যায়, প্রতিপদে তিনি আমাদের সমাজ সংস্কৃতি ও রাষ্ট্রের সংকটগুলো চিনিয়ে দিয়েছেন, সহজভাবে তুলে এনেছেন জটিলবিষয়গুলো, সেখানে ফুটে উঠেছে তার বক্তব্যে গভীরতা।
বোধ করি এটি হাসান আজিজুল হকের সবচেয়ে বড়ো দিক যে, তিনি জটিল বিষয়ের বিচিত্র স্তরি খোসল উন্মোচন করে সরলভাবে একে উপস্থাপন করেন এবং তা থেকে আমাদের এক গভীর উপলব্ধির দিকে চালিত করেন। এ কারণেও হাসান আজিজুল হক সরল জটিল ও গভীর।
তাঁর সরল জটিল ও গভীরের সবসময় থাকছে দেশ ও কালের সংকট সম্ভবনা এবং আড়ালে পড়ে থাকা বাস্তবতার উপস্থাপন। দেশ-কাল ও পটভূমি বাদ দিয়ে তো তাকে ভাবা যায় না। দেশের মানুষ ও এর ইতিহাসের চলনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এই তিন মাত্রায় হাসানকে আমরা খুঁজে পাই।
সব দেশের মতো বাংলাদেশের ইতিহাস ও রাজনীতির ভাঙাগড়া আছে। এর সমান্তরালে চলেছে তাঁর লেখালেখি। তাঁর জন্মের সময়ের অবিভক্ত বাংলা থেকে বর্তমান সময় অব্দি তার লেখার সীমানা ক্রমে প্রসারিত। আর তাঁর লেখার অঞ্চল মূল পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান থেকে বাংলাদেশের দক্ষিণ ও উত্তরাঞ্চল। সেই জায়গায় থেকে এসেছে তাঁর দেখা মানুষ ও মানবিক পরিস্থিতির বর্ণনা।
পূর্ববাংলার মানুষ দ্বিজাতিতত্ত্বের আদর্শ ও মতবাদের ভূতে পাকিস্তানের সঙ্গে ভিড়ে গিয়েছিল। পাকিস্তান হওয়ার অব্যবহিত পরেই তাঁরা টের পেল কী ভয়াবহ ভ্রান্তির ফাঁদে তারা পা দিয়েছে, সেখানে থেকে শুরু হল আতঙ্ক এবং একই সঙ্গে নতুন স্বপ্নে দেখা। মনে পড়ে যায় ইউজিন আইনেস্কোর কথাÑ ‘মতবাদ, আদর্শবাদ আমাদের বিভক্ত করে, কিন্তু স্বপ্ন ও আতঙ্ক আমাদের একতাবদ্ধ করে।’ মনে করতে হয় বদরুদ্দীন উমরের কথায়, ভাষা আন্দোলনের ভেতর দিয়েই বাঙালির স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ঘটল। বাঙালি দেখতে পায় ভাষা ও সংস্কৃতিভিত্তিক জাতীয়তায় নিহিত আছে বাঙালির আত্মবিকাশের স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন পূর্ববাংলার মানুষকে নিয়ে এল বাংলাদেশের বাস্তব ভূমিতে। স্বভূমি ও স্বভাষার প্রতি টান বোধ করার সেই মানসকাঠামো থেকে নতুন কৃষ্টি ও সৃষ্টির দৃষ্টিটা তৈরি হয়েছিল।
হাসান আজিজুল হকের নির্মাণভূমিকে এখানটা থেকেও দেখতে হয়। তাঁর গল্পের মূল দিক বাংলাকে তাঁর উচ্চাশার ভূমি ও উচ্চাশার ভাষা করে তোলা (এটা কখনও ভুলে যাওয়া চলবে না যে, তিনি আদতে এক দেশহারা উদ্বাস্তু মানুষ, ফলে বাংলা ভাষাই তাঁর একমাত্র দেশ), বাংলাভাষাকে কাজের ভাষা করে তোলÑকি জীবনে কি সাহিত্যে। এ জায়গা থেকেই তিনি হাজির করেন তার গল্প-উপন্যাস-প্রবন্ধ-আত্মকথায় এদেশের পরিস্থিতি ও মানুষদের। মূলত ঘটনার পাকচক্রে পড়া মানুষের বাহ্যিক ও মনস্তত্ত্বিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াগুলোর দেখা মিলে তাঁর লেখায়। এমনকি প্রান্তিক মানুষের ব্যক্তিসত্তার মনোজগতের গভীরগামী তাঁর গল্পেগুলোর লক্ষ্য বাস্তবতার কুটিল বিন্যাস এবং সেই বাস্তবতা স্থানিক বা আঞ্চলিকতাভিত্তিক করে তাঁর গল্প উপন্যাসকে গড়ন-গঠন দিয়েছে। এজন্য কোনো কোনো সমালোচক মনে করেন, তাঁর ছোটোগল্পের যে-তিনটি পর্ব আছে, সেগুলো মূলত স্থান ও স্থানান্তরের দিক থেকে শনাক্ত করা যেতে পারে। প্রথম পর্বটিতে এসেছে পশ্চিমবঙ্গ তথা রাঢ়বঙ্গের জীবন ও মানুষ; দ্বিতীয় পর্বটি মুক্তিযুদ্ধের অভিঘাতে ও চক্রাবর্তে পড়া বাংলাদেশের মানুষ, তৃতীয় পর্বটি সংকটপন্ন বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে থাকা মানুষের জীবন। প্রথম পর্বে পাই দুটো বই ‘সমুদ্রের স্বপ্ন ও শীতের অরণ্য’, ‘আত্মজা ও একটি করবী গাছ’এবং ‘জীবন ঘষে আগুন’। পরের পর্বের মূল বই ‘নামহীন গোত্রহীন’। এরপরের বইগুলো- ‘পাতালে হাসপাতালে’, ‘আমরা অপেক্ষা করছি’, ‘রোদে যাবো’, ‘মাÑমেয়ের সংসার’ ও ‘বিধবাদের কথা ও অন্যান্য গল্প’য় এসেছে বাংলাদেশে স্বাধীনতা পরবর্তী জটিল পরিস্থিতির অভিঘাতে তৈরি একেরপর এক গল্প। আপাতত ‘বিধবাদের কথা ও অন্যান্য গল্প’ই তাঁর শেষ গল্পগ্রন্থ। তাঁর প্রায় সব গল্পের বইতে পশ্চিমবঙ্গের রাঢ় অঞ্চল ও বাংলাদেশের দক্ষিণ-উত্তরাঞ্চলের মানুষের বাস্তবতা প্রামাণ্য হয়ে আছে।
এর পাশাপাশি তাঁর প্রবন্ধের বইগুলোর দিকে নজর দেওয়া যাক। শুরু হয়েছিল সাহিত্য-জিজ্ঞাসা নিয়ে, মানে প্রথম প্রবন্ধের বই ‘কথাসাহিত্যের কথাকতা’য় সব প্রবন্ধই লেখা ও লেখকদের নিয়ে লেখা। এরপরে ‘অপ্রকাশের ভার’, ‘অতলের আঁধি’, ‘কথা লেখা কথা’, ‘লোকযাত্রা আধুনিকতা সাহিত্য’, ‘সাক্ষাৎকার ও অন্যান্য রচনা’, ‘ছড়ানো ছিটানো’, ‘কে বাঁচে কে বাঁচায়’, ‘বাচনিক আত্মজৈবনিক’এবং ‘চিন্তন-কণা’লিখতে লিখতে তিনি পেরিয়ে এসেছেন বাংলাদেশের মানুষের সংক্ষোভ এবং নিজের ব্যক্তিগত সংকর্ষগুলো। এগুলো থেকে তার চিন্তার ক্রমবিবর্তন স্পষ্টত পড়ে নেওয়া যায়।
‘সক্রেটিসে’র মতো বইও হাসানের আরেক পরিচয়ের স্মারক। ‘চালচিত্রের খুঁটিনাটি’, ‘একাত্তর: করতলে ছিন্নমাথা’এবং ‘টান’ তাঁর প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণী বই; আছে ‘লন্ডন ডায়েরি’র মতো দিনপঞ্জি এবং গ্রন্থকারে অপ্রকাশি চিঠিপত্রের সম্ভার, সেটিও বোধ করি আকারে প্রকারে কম বড় নয়। ‘চন্দর কোথায়’ নামের অনূদিত নাটক ও ‘জি.সি. দেব রচনাবলী’ সম্পাদনা তাঁর ভিন্নধর্মী দুটো কীর্তি। কিশোরদের জন্য ‘লাল ঘোড়া আমি’ও ‘ফুটবল থেকে সাবধান’, আত্মজীবনী ‘ফিরে যাই ফিরে আসি’, ‘উঁকি দিয়ে দিগন্ত’তে এসে হাসানের সেই সরল জটিল গভীরতা ক্রমে সম্পন্ন থেকে সম্পন্নতর হতে থাকে। এবং তাঁর আরো একটি স্রোত আছে যেখানে পটভূমিকে আরো একটু ছড়িয়ে তিনি দেখতে চেয়েছেন দেশ-মানুষ ও দেশ-মানসের সরল জটিল গভীর চলনের পরম্পরা। দৃষ্টান্ত হিসেবে ‘বৃত্তায়ন’, ‘শিউলি’র সঙ্গে এতে যোগ হয় আর যোগ হয় দুটো উপন্যাস- ‘আগুনপাখি’এবং ‘সাবিত্রী উপখ্যান’।
আপাতত ‘সাবিত্রী উপাখ্যান’ তাঁর এখন পর্যন্ত শেষ গ্রন্থ। এছাড়াও তার বেশ কিছু লেখা, বক্তৃতা এখনো গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়নি। কোনো কোনোটা নিয়ে একটা দুটো বই প্রকাশের অপেক্ষায়। তিনি যেহেতু এখানো ক্রিয়াশীল এবং পত্রপত্রিকার কিছুদিন পর পর তার নানান লেখা প্রকাশিত হয়ে চলেছে ফলে তার সম্পর্কে তো শেষ কথা বলার সময় আসেনি। আর তাঁর মতো লেখক সম্পর্কে শেষ কথা বলার কোনো সুযোগ বোধ করি মিলবেও না। কিন্তু তাঁর মূল প্রবণতাটি বোধ করি ওই আমরা যা বলে আসছি তা-ই রয়ে গেছে, এবং সেটি দিনে দিনে তীক্ষè তীব্র এক সরলতার আকার পেয়ে চলেছে।
সমাপ্ত

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট