চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

ছেলেবেলায় স্টিফেন হকিং

ফরহাদ হোসেন মাসুম

৩ মার্চ, ২০২০ | ১:৫০ পূর্বাহ্ণ

তিনি একজন তাত্ত্বিক পদার্থবিদ, মহাবিশ্ববিদ, লেখক, বিজ্ঞান জনপ্রিয়কারী, কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের তাত্ত্বিক মহাকাশবিদ্যা বিভাগের পরিচালক, এবং প্রফেসর। পড়াশোনা করেছে, কিন্তু তার নাম জানে না, এমন মানুষ মনে হয় গোটা দুনিয়াতে একজনও পাওয়া যাবে না। জীবনের বেশির ভাগ সময় মোটর নিউরন রোগে আক্রান্ত হয়ে হুইলচেয়ারে কাটিয়েছেন।

জন্ম ও শৈশব
তার বাবা-মা দুজনেই অক্সফোর্ডে পড়াশোনা করতেন। মেধাবী পরিবারেই জন্ম হয়েছিলো তার, এবং মা-বাবা ছেলেমেয়ের পড়াশোনার দিকে বেশ মনযোগও দিয়েছিলেন। প্রাইমারি স্কুলে অনেকদিন পার করার পরেও হকিং পড়তে পারতেন না, এজন্য তিনি স্কুলকেই দোষ দিয়েছেন। অবশ্য সেটা কেটে গিয়েছিলো কয়েক বছরের মধ্যেই, ইন্টারমিডিয়েটও পাশ করে ফেলেছিলেন অন্যদের চেয়ে এক বছর আগেই, প্রধান শিক্ষকের বিশেষ অনুমতি নিয়ে।
বাবা চেয়েছিলেন নামকরা ওয়েস্টমিনস্টার স্কুলে পড়াতে, কিন্তু বিধি বাম! স্কলারশিপের জন্য একটা পরীক্ষা দিতে হয়, আর সেই পরীক্ষার দিন হকিং অসুস্থ হয়ে পড়লেন, পরীক্ষা আর দেয়া হলো না।
আগেই বলেছি, তার বাবা-মা অক্সফোর্ডে পড়েছিলেন। ইউরোপ-আমেরিকাতে একটা জিনিস খুব বেশি চলে। বাবা-মা চায়, তাদের সন্তান তাদেরই ইউনিভার্সিটিতে পড়ুক; তারা যে হাউজে থাকতেন, সেই হাউজেরই সদস্য হোক। নিজ নিজ হাউজের জন্য অনেকে অনেক অনুদানও দেয়।
বাবা চাইলেন, “তুমি আমার ছেলে, তুমি আমার মত ডাক্তারি পড়বে”।
ছেলে বললো, “গণিত পড়বো”।
বাবা বললেন, “গণিত পড়লে খাবে কী? তাছাড়া তুমি অক্সফোর্ডে পড়বে, এটা নিয়ে কোনো ওজর আপত্তি শোনা হবে না। অক্সফোর্ডে গণিত বলে কোনো বিষয় নাই”। হুম, ঐ আমলে অক্সফোর্ডে ম্যাথামেটিক্স ছিলো না।

ছেলে বললো, “আচ্ছা, অক্সফোর্ডে পড়বো, কিন্তু ডাক্তারি পড়বো না। ফিজিক্স-কেমিস্ট্রি পড়বো। পড়াশোনা নাকি পানিভাত ছিলো তার কাছে। তাকে পদার্থবিজ্ঞানে একাডেমিক কোনো সমস্যা দিলেই সমাধান হাজির- এটা তার তৎকালীন প্রফেসর রবার্ট বারম্যানের মন্তব্য। অনার্স জীবনের তৃতীয় বছরে পড়াশোনা বলতে প্রায় বাদ দিয়ে টোটো করে ঘুরে বেড়াতে লাগলেন, চতুর্থ বছরে, ফাইনাল পরীক্ষার ফলাফল এমন হলো যে ফার্স্ট ক্লাস নাকি সেকেন্ড ক্লাস- সেটা নির্ধারণের জন্য ভাইভা প্রয়োজন হলো। ভাইভাতে গিয়ে তিনি সেটার সুযোগ নিলেন। তিনি ভাইভা বোর্ডের শ্রদ্ধা অর্জন করলেন, ফার্স্ট ক্লাস পেলেন, ইরান থেকে ঘুরে এলেন, শুরু করলেন কেম্ব্রিজের পিএইচডি জীবন।
কেম্ব্রিজে পিএইচডির দিনগুলি

বিখ্যাত জ্যোতির্বিদ ফ্রেড হয়েল তখন কেম্ব্রিজে পড়াচ্ছেন। হকিং চেয়েছিলেন, তার সাথে কাজ করতে। কিন্তু তাকে সুপারভাইজার হিসেবে পাওয়া গেলো না। তার সুপারভাইজার ছিলো ডেনিস সিয়ামা, আধুনিক মহাবিশ্বতত্ত্বের জনকদের একজন। তার সাথে কাজ করতে গিয়ে, প্রথমদিকে নিজের গণিতজ্ঞান নিয়েও ঠোকর খাচ্ছিলেন হকিং। আগেই বলেছি, তিনি অক্সফোর্ডে ছিলেন, আর সেখানে গণিতের জন্য উৎসর্গীকৃত বিভাগও ছিলো না তখন। তবু সাধারণ আপেক্ষিকতা আর মহাবিশ্বতত্ত্ব নিয়ে কাজ শিখে নিতে লাগলেন । তিনি মোটর নিউরন রোগে ভুগছিরেন এ রোগে পেশী নাড়ানো যায় না, শারীরিকভাবে অথর্ব হয়ে পড়ে রোগী । এই রোগে আক্রান্ত রোগী মারা পড়ে কয়েক বছরের মধ্যেই।
মহাবিশ্বতত্ত্ব নিয়ে গবেষণা
ঠিকমত কলমটাও ধরতে পারতেন না তিনি, যখন আবার গবেষণায় ফিরেছিলেন। তখন তিনি একটা বিষয়ে আগ্রহ খুঁজে পেলেন। রজার পেনরোজ তখন বেশ বিখ্যাত গবেষক ছিলেন। কৃষ্ণগহ্বর নিয়ে তিনি চমৎকার কিছু কাজ করেছিলেন। হকিং ভাবলেন, একই কাহিনী যদি গোটা মহাবিশ্বের ক্ষেত্রে কাজে লাগানো যায়, তাহলে কেমন হয়? সেই সময়টাতে চলাচলের জন্য হুইলচেয়ার ছাড়া আর কোনো উপায় ছিলো না তার।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট