চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

শিশুদের প্রিয় শামসুর রাহমান

সুমন পালিত

২৮ জানুয়ারি, ২০২০ | ৫:২৩ পূর্বাহ্ণ

শামসুর রাহমান ছিলেন আমাদের যুগের অন্যতম সেরা কবি। স্বাধীনতার কবি বলা হয় তাকে। ছোটদের ভালোবাসতেন। তাদের জন্য অনেক অনেক কবিতা-ছড়া লিখেছেন শামসুর রাহমান। দেশের মানুষের প্রতিও ছিল তার অনেক অনেক ভালোবাসা। সবার প্রিয় এই কবি মওলানা ভাসানীকে নিয়ে লিখেছেন ‘সফেদ পাঞ্জাবি’ নামে এক অসাধারণ কবিতা। মজলুম জননেতাকে নিয়ে লেখা তার এই কবিতায় তিনি কাঙালির মনের কথাও তুলে ধরেছেন। শোষণ-বঞ্চনা থেকে মুক্তির যে আকুতি তা তুলে ধরেছেন সার্থকভাবে। বঙ্গবন্ধু হত্যা নিয়ে লেখা শামসুর রাহমানের কবিতা ‘এ লাশ রাখবো কোথায়’ বাঙালি জাতিকে চিরদিনই ব্যথিত করে। এর আগে ‘আসাদের শার্ট’ কবিতায় তিনি ঊনসত্তরের গণআন্দোলনকে চিত্রিত করেছেন অনন্যভাবে। বলা যায় এই একটি কবিতায় তিনি বাঙালির মুক্তি আন্দোলনের একটি অধ্যায়কে সার্থকভাবে তুলে ধরেছেন।
স্বাধীনতার জন্য বাঙালির আকুতি প্রকাশ পেয়েছে সবার প্রিয় এই কবির ‘তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা’ কবিতায়। শামসুর রাহমান প্রত্যক্ষভাবে মুক্তিযুদ্ধ করেননি। হাতিয়ার তুলে নেননি। কিন্তু তার কলমে মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সাধারণ মানুষের আকুতি প্রকাশ পেয়েছে বিশ্বস্তভাবে। শিশু-কিশোরদের নিয়ে অসংখ্য ছড়া ও কবিতা লিখেছেন শামসুর রাহমান। যেগুলো তিনি লেখার চেষ্টা করেছেন শিশুদের মতো রঙিন কল্পনার তুলিতে। মনে করা যাক তার ‘ট্রেন’ ছড়াটির কথা।
ঝক ঝকাঝক ট্রেন চলছে/রাত দুপুরে অই।/ট্রেন চলেছে, ট্রেন চলেছে/ট্রেনের বাড়ি কই?
শিশু মনের আবেগ শামসুর রাহমানের কবিতায় কিভাবে ফুটে উঠেছে তার একটি নমুনা ‘যদি আমি’ ছড়াটি।
মা মণিটার চোখ এড়িয়ে/গলির মোড়ের পুল পেরিয়ে/রোদের সাথে বুক মিলিয়ে/পাখনা-ভরা রং বিলিয়ে/এখান থেকে অনেক দূরে/যদি আমি যেতাম উড়ে/প্রজাপতির মতো/কেমন মজা হত?
শহরবাসী এই কবি শহুরে শিশু-কিশোরদের কল্পনাকে সম্প্রসারিত করতে মজার মজার যেসব ছড়া লিখেছেন তার অন্যতম হলো ‘এই শহরে’।
এই শহরে সাত সকালে/হঠাৎ কি যে হলো,/ফুটপাতেরই বুকে পড়ে/মাছ রাঙাটা মলো!/কেন যে হায় মাছ রাঙাটা/এত্তো দূরে এলো/নদীর মায়া ছেড়ে এসে/এখানে কি পেলো?/শহর রাঙা আরেক নদী/হয়তো ভেবেছিল।/পাথুরে এই শহরে গাঙে/এভাবে ডুব দিলো।
কবি শামসুর রাহমান সব শিশু-কিশোরের মতোই তার মাকে প্রচ- ভালোবাসতেন। এই মহান কবির শেষ আশা ছিল মায়ের কবরের পাশে শেষ শয্যা পাতা। মাকে নিয়ে তিনি অনেক কবিতা লিখেছেন। তার মধ্যে ‘মাগো তুমি’ কবিতাটির কয়েক লাইন তুলে ধরা যাকÑতোমার কোরান চশমা তোমার/শাড়িগুলো তেমনি আছে।/আলমারিটা কেমন নিঝুম/ কেবল তুমি নেই যে কাছে।
শামসুর রাহমানের ডাকনাম ছিল বাচ্চু। মা তাকে এ নামেই ডাকতেন। ‘মাগো তুমি’ কবিতায় মায়ের আবেগভরা সম্বোধনের স্মৃতি ফুটে উঠেছে অনন্যভাবেÑ
এখন কে আর বলবে আমায়/‘আয়রে বাচ্চু আমার কাছে?’/দমকা হাওয়ায় পর্দা কাঁপে/পাতা নড়ে একলা গাছে।
আগেই বলেছি শামসুর রাহমানকে বলা হতো স্বাধীনতার কবি। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তিনি অনেক কবিতা লিখেছেন। তার একটি হলো-
পাঞ্জাবিরা চেয়েছিলো/বাংলা ভাষা মুছে দিতে/চেয়েছিল এদেশের সব/গায়ের জোরে লুটে নিতে।/
যুদ্ধ এবার মুক্তিযুদ্ধ,/দিকে দিকে মুক্তি সেনা-/মাটি ছুঁয়ে নেয় যে শপথ/জন্মভূমির মান দেবে না।/
আঁধার ছিল ন’মাস জুড়ে/নাচলো শেষে আলোকলতা/রক্ত সাগর সেচে পেলাম/সূর্যোদয়ে স্বাধীনতা।
শামসুর রাহমান স্বপ্ন দেখতেন একটি সুখী সমৃদ্ধশালী দেশের। স্বপ্ন দেখতেন একটি সুন্দর সমাজের। মানুষের সুখী জীবনের এই প্রত্যাশাকে তিনি তুলে ধরেছেন। মহান এই লেখকের নাম উচ্চারিত হলে সবাই শ্রদ্ধায় অবনত হন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট