চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

ফাঁকা জায়গায় মসজিদ তৈরি হয়নি, বলল সুপ্রিম কোর্ট

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

৯ নভেম্বর, ২০১৯ | ১২:১৯ অপরাহ্ণ

ভারতের বহুল আলোচিত বাবরি মসজিদ মামলার রায় পড়ছেন প্রধানবিচারপতি রঞ্জন গগৈয়। রায় পড়তে গিয়ে তিনি বলেন, কোনও ফাঁকা স্থানে এই মসজিদ নির্মিত হয়নি। পুরাতাত্ত্বিক খননে পাওয়া নিদর্শন অনুযায়ী সেখানে অনৈসলামিক উপাদান পাওয়া গেছে। তবে সেই উপাদানগুলো যে রামমন্দিরের তা, নিশ্চিত নয়।

 স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টায় মামলার রায় দিতে শুরু করেন দেশটির সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ। রায় ঘোষণার পর সবাইকে শান্তি বজায় রাখতে আহ্বান জানিয়ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এ রায় ঘোষণাকে ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ২০ অক্টোবর থেকে অযোধ্যা শহরে জারি রয়েছে ১৪৪ ধারা। রবিবার থেকে শহরে জারি হচ্ছে কারফিউ।

আজ শনিবার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ রায় ঘোষণার সময় বলেছেন, হিন্দুরা মনে করে এখানে রামের জন্মভূমি ছিল। তবে পুরাতাত্ত্বিক খননে পাওয়া নিদর্শন অনুযায়ী সেখানে অনৈসলামিক উপাদান পাওয়া গেছে। তবে সেই উপাদানগুলো যে রামমন্দিরের তা, নিশ্চিত নয়।

তিনি আরও জানালেন ঐক্যমতেই পুরো রায়। মসজিদের নীচে কোনও নির্মাণ ছিল, তবে তা নির্দিষ্ট করে জানায়নি অর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া। শেষবার নমাজ হয়েছিল ১৯৪৯ সালের ডিসেম্বরে, বললেন প্রধানবিচারপতি। তিনি জানান, প্রমাণের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। 

শুক্রবার সন্ধ্যায়, প্রধানবিচারপতি রঞ্জন গগৈসহ বাকি চার বিচারপতি সিদ্ধান্ত নেন, রায়দান করা হবে শনিবার। ঘটনাকে কেন্দ্র করে যাতে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, তারজন্য কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা মোতায়েন করা হয়েছে। সকাল ১০.৩০টায় রায় দান করা হবে। শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্তও ঠিক ছিল না, কবে রায়দান করা হবে। তবে ১৭ নভেম্বর প্রধানবিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের অবসরগ্রণের আগেই রায়দান করা হবে বলে ঠিক ছিল। ৪০দিন শুনানির পর, ১৬ অক্টোবর রায়দান স্থগিত রাখে প্রধানবিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ। বেঞ্চের অন্যান্য বিচারপতিরা হলেন, বিচারপতি এসএ বোবদে, ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি অশোক ভূষণ, এবং বিচারপতি এস আব্দুল নাজির।

হিন্দু এবং মুসলিম, উভয় পক্ষের বিভিন্ন সংগঠনের তরফে শান্তিরক্ষার আবেদন করা হয়েছে, রায়দানের আগে শান্তিরক্ষার আবেদন জানিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও। সমস্ত রাজ্যকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক, শুক্রবার রাতে উত্তরপ্রদেশ পুলিশের শীর্ষ আধিকারিকদের সঙ্গে লখনউতে পর্যালোচনা বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। দুটি হেলিকপ্টার প্রস্তুত রাখতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী, তারমধ্যে একটি লক্ষ্ণৌতে এবং অপরটি অযোধ্যায়, কোনওরকম পরিস্থিতির জন্য এই ব্যবস্থা করতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

অযোধ্যায় ২.৭৭ একর জমির দাবি জানিয়েছে হিন্দু এবং মুসলিম উভয়পক্ষই, ১৯৮০ থেকেই এই ইস্যুটি রাজনৈতিক বিষয় হয়ে উঠেছে। ১৯৯২-এ ১৬ শতকের বাবরি মসজিদ গুঁড়িয়ে দেয় দক্ষিণপন্থী সংগঠন, তাদের বিশ্বাস, ভগবান রামচন্দ্রের জন্মভূমির ওপর তৈরি পুরানো মন্দিরের ভগ্নাবশেষের ওপর করা হয়েছে সেটি। সেই সময়ে হিংসার ঘটনায় সারা দেশের ৩,০০০ এর বেশী মানুষের মৃত্যু হয়।

সেই জায়গায় মন্দির তৈরি করতে চায় হিন্দুরা, মুসলিম সংগঠনের তরফে দাবি করা হয়েছে, মসজিদের ধ্বংসাবশেষের ওপর মসজিদ তৈরির কোনও প্রমাণ নেই।

অযোধ্যা রায়দানের আগে, বিশিষ্ট মুসলিম ধর্মগুরু এবং বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে বৈঠক করেন আরএসস এবং বিজেপি নেতারা, দিল্লিতে কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু উন্নয়নমন্ত্রী মুক্তার আব্বাস নাকভির বাড়িতে ওই বৈঠকে সুপ্রিম কোর্টের আদেশ অনুসারে, না কোনও “অতি উৎসাহিত উদযাপন” হবে না “পরাজয়ের হাহাকার” হবে।

বৈঠক উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয়মন্ত্রী শাহনেওয়াজ হোসেন, তিনি বলেন, ঐক্যমতের সঙ্গে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, সবার কাছেই গ্রহণযোগ্য হবে সুপ্রিম কোর্টের অযোধ্যা মামলার রায়। সূত্র: এনডিটিভি 

পূর্বকোণ/পিআর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট