২৬ নভেম্বর, ২০২০ | ১:৫৩ অপরাহ্ণ
স্পোর্টস ডেস্ক
পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে বিদায় নেওয়া ফুটবল ইশ্বর দিয়াগো ম্যারাডোনার দুঃসময়ের বন্ধু ছিলেন কিউবার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ফিদেল কাস্ত্রো। ২০১৬ সালে ২৫ নভেম্বর প্রয়াত হন কাস্ত্রো। কী অদ্ভুত! চার বছর পর একই দিনে মারা গেলেন ফুটবলের কিংবদন্তি।
১৯৮৬ সালে প্রথমবার কিউবা গিয়েছিলেন ম্যারাডোনা। ওই সময় বিপ্লবী কাস্ত্রোর সঙ্গে পরিচয় হয়। সেই শুরু। তার পর অনেকবারই কিউবা গিয়েছেন তিনি। বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসেবে ১০ নম্বর জার্সি উপহারও দিয়েছেন।
একবার মাকদাসক্ত হয়ে জীবন সংকটে পড়েন ম্যারাডোনা। তখন রীতিমতো বিপর্যস্ত অবস্থা তার, পাশে নেই কেউ। সেই সময় পাশে দাঁড়িয়েছিলেন কাস্ত্রো। সেই সময় ম্যারাডোনাকে নিজ দেশে আশ্রয় দেন কাস্ত্রো।লা পেড্রেরা ক্লিনিকে ব্যবস্থা করে দেন ম্যারাডোনার রিহ্যাবের।
ম্যারাডোনার ঘনিষ্ঠদের মতে, কাস্ত্রো এগিয়ে না এলে প্রাণ বাঁচানোই মুশকিল হয়ে যেত আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়কের। শরীর এতটাই খারাপ ছিল তার। কিউবার স্বাস্থ্য সেবার সুনাম ছিলই। ক্রমশ সুস্থও হতে থাকেন কিংবদন্তি ফুটবলার।
সেই সময় ৪ বছর কিউবায় কাটিয়েছিলেন ম্যারাডোনা। মাঝে মাঝেই সকালে ম্যারাডোনার কাছে আসত প্রধানমন্ত্রী কাস্ত্রোর ফোন। খেলা থেকে রাজনীতি, কিছুই বাদ পড়ত না আলোচনায়। নেশায় আসক্তি কাটিয়ে ফেলতে ম্যারাডোনাকে উৎসাহ জোগাতেন কাস্ত্রো।
ম্যারাডোনা একবার বলেছিলেন, “এমনকি রাত দুটোর সময়ও ফোন করতেন কাস্ত্রো। আমিও সব সময় কথা বলতে প্রস্তুত থাকতাম। কোনো ইভেন্ট থাকলে জানতে চাইতেন, আমি যেতে চাই কি-না। এগুলো আমি ভুলব না।”
কাস্ত্রো একবার বলেছিলেন, “ডিয়েগো আমার সেরা বন্ধু। কোনো সন্দেহ নেই যে ও অসাধারণ এক এথলেট। আর কিউবার সঙ্গে ম্যারাডোনা বন্ধুত্ব রেখে গেছে কোনো পার্থিব লাভ ছাড়াই।”
কাস্ত্রোর মৃত্যুর পর ম্যারাডোনা তখন কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলেন, “আমার কাছে উনি ছিলেন দ্বিতীয় বাবার মতো। আর্জেন্টিনায় যখন আমার সামনে দরজাগুলো বন্ধ হচ্ছিল, তখন উনি কিউবার দরজা খুলে দিয়েছিলেন।”
ওই সময় জাতীয় শোকে যোগ দিতে কিউবা যান ম্যারাডোনা। তখন বলেছিলেন, “আমি এই সময় কিউবার মানুষের পাশে থাকতে চাই। আর বিদায় জানাতে চাই আমার বন্ধু ফিদেলকে।”
ম্যারাডোনা বুধবার হার্ট এটাকে মারা যান। মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচারের পর মাত্র দুই সপ্তাহ আগেই হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছিলেন তিনি।
১৯৮৬ সালে আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ এনে দেওয়া ম্যারাডোনাকে বলা হয় সর্বকালের অন্যতম সর্বশ্রেষ্ঠ ফুটবলার। খেলোয়াড় হিসেবে বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার রয়েছে এই মহাতারকার।
বোকা জুনিয়রস, নাপোলি আর বার্সেলোনার মতো দলের হয়ে খেলে বহু ইতিহাস গড়েছেন তিনি। অসাধারণ ক্রীড়া নৈপুণ্যে হয়ে উঠেছেন গোটা বিশ্বের আইকন।
১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপ টুর্নামেন্টে সেই বিখ্যাত গোল, আর ‘ঈশ্বরের হাত’ বিতর্কে তাকে সব সময় আলোচনায় রেখেছে। তবে বিতর্কিত হয়েছেন মাদক নিয়ে।
পূর্বকোণ/পিআর
The Post Viewed By: 153 People