চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ম্যাক্রোঁ কেন ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামলেন!

পূর্বকোণ ডেস্ক

২৭ অক্টোবর, ২০২০ | ২:৩০ অপরাহ্ণ

‘ম্যাক্রোঁ বলছেন, ইসলাম সংকটে পড়েছে। ফ্রান্সের নির্বাচনী রাজনীতি অবশ্য জানাচ্ছে, তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারকে সংকট থেকে উদ্ধার করতেই ইসলাম বিদ্বেষ নিয়ে মাঠে নেমেছেন তিনি’। ‘দেশটি অর্থনৈতিক দুরাবস্থার মুখে থাকায় আগামী নির্বাচনে দক্ষিণপন্থী লি পেনের বিজয়ের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছিল। লি পেনকে সামাল দিতেই ম্যাক্রোঁ ছদ্ম ‘জাতীয় প্রতিপক্ষ’ হিসেবে হাজির করলেন ইসলামকে’। কথাগুলো লিখেছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক ও দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক ইতিহাস বিষয়ক গবেষক আলতাফ পারভেজ। একটি হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে ফ্রান্সে যা ঘটছে এবং কেন ঘটছে তারই অবতারণা করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দেন এই বিশ্লেষক। পোস্টটির পরের অংশে তিনি লেখেন- ‘বিশ্বজুড়ে দেশে-দেশে প্রকৃত সংকট থেকে ভোটারদের দৃষ্টি সরানোর নব নব আয়োজন আছে। ফ্রান্সে ম্যাক্রোঁর আগেই ইসলামকে দানব হিসেবে দেখানোর প্রকল্প নিয়ে বসে আছেন লি পেন। গত নির্বাচনে তাকে সামাল দিতে ফ্রান্সের মধ্যপন্থীরাও ম্যাক্রোঁকে সমর্থন দিয়েছিল। ফল হিসেবেই ওই নির্বাচনে তিনি রেকর্ড ৬৬ ভাগ ভোট পান। কিন্তু দেশটির অর্থনৈতিক সংকট সামাল দিতে ব্যর্থতার কারণে ম্যাক্রোঁর প্রতি জনসমর্থন কমছিল। কিছুদিন আগে সেটা ২৯ শতাংশের নিচে চলে আসে’।
‘১৬ অক্টোবর একজন চেচেন মুসলমান শরণার্থীর হাতে একজন স্থানীয় শিক্ষক খুনের ঘটনা অনিবার্যভাবে লি পেনের জন্য একটা সুর্বণ উপলক্ষ হিসেবে দেখা দেয়। এই ঘটনার মিডিয়া কাভারেজ ফরাসিদের আন্দোলিত করে। লি পেনের জন্য এটা নিজের মুসলমানবিদ্বেষ ও শরণার্থী ঘৃণাকে ন্যায্যতা দেয়ার ঐতিহাসিক সুযোগ এনে দেয়। সেই সুযোগে ভাগ বসাতেই ম্যাক্রোঁর পরবর্তী সব পদক্ষেপ’।

মাত্র ১৮ মাস আছে ফ্রান্সের পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনের। ম্যাক্রোঁর পক্ষে লি পেনকে আর এগোতে দেয়ার সুযোগ নেই। ১৬ অক্টোবরের ঘটনার ঠিক সাত দিন আগে ৯ অক্টোবর সর্বশেষ যে জনমত জরিপ হয় তাতে স্পষ্ট বার্তা ছিল, এখন নির্বাচন হলে লি পেনে কড়া প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলবেন ম্যাক্রোঁর বিরুদ্ধে। ফলে ম্যাক্রোঁ লি পেনের এতদিনকার অস্ত্র ব্যবহার করেই তার দক্ষিণপন্থী ভোটব্যাংকে ভাগ বসাতে নেমেছেন। তবে হঠাৎ করে নয়, গত কয়েক মাস থেকেই এ রকম প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছিলেন তিনি।

লি পেন, ম্যাক্রোঁসহ ফ্রান্সের রাজনীতির এ মুহূর্তের দক্ষিণপন্থীরা তাদের বর্তমান প্রকল্পের পটভূমি হিসেবে বহুভাবে গত কয়েক বছর মুসলমানদের উত্তেজিত করতে নানান কাজ করেছে। এবং সেসব চেষ্টা সর্বশেষ একটা সফলতা পেয়েছে। এর মধ্যদিয়ে দেশটির রাজনীতির এই শক্তি ক্ষমতার সমীকরণকে আপাতত ‘মধ্যপন্থী বনাম ডানপন্থী’ অবস্থান থেকে ‘ডান বনাম ডান’ অবস্থানে নিয়ে আসতে পারল’।
আলতাফ পারভেজ লিখেছেন, ফ্রান্সে সমাজতন্ত্রীদের শক্তিশালী যে ভিত্তি রয়েছে তাকে মোকাবিলার জন্য এই ব্রহ্মাস্ত্র প্রয়োগ ছাড়া ম্যাক্রোঁ ও লি পেনদের হাতে আর কোনো রাজনীতি ছিল না। বিশেষ করে ২০১৮ থেকে শুরু হওয়া মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্ত মানুষের ‘ইয়েলো ভেস্ট’ আন্দোলনের মধ্যদিয়ে ফ্রান্সের রাজনীতিতে সামাজিক ন্যায়বিচারের দাবিতে দ্রুত শ্রেণিগত মেরুকরণ ঘটছিল। তাকে থামাতে ইসলামভীতির রাজনীতি আনতে হয় সেখানকার শাসক-এলিটদের দক্ষিণপন্থী অংশকে।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট