চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সৌদি যুবরাজের বিরুদ্ধে খাশোগির বাগদত্তার মামলা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

২১ অক্টোবর, ২০২০ | ১২:২৫ অপরাহ্ণ

সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে মামলা করেছেন খুন হওয়া সাংবাদিক জামাল খাসোগির বাগদত্তা হাতিস চেঙ্গিস।

বিন সালমানের বিরুদ্ধে খাসোগিকে হত্যার নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন তিনি। 

অভিযোগে বলা হয়েছে, বিন সালমানের নির্দেশেই খাসোগিকে হত্যা করা হয়েছে। এছাড়া খাসোগি এবং হাতিস চেঙ্গিসের প্রতিষ্ঠা করা মানবাধিকার সংস্থার ক্ষয়ক্ষতি করেছেন বিন সালমান।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ওয়াশিংটন ডিসির আদালতে দায়ের করা ওই সিভিল মামলায় আরও ২০ জনকে আসামি করেছেন তুরস্কের নাগরিক হাতিস চেঙ্গিস।

মঙ্গলবার ওয়াশিংটন ডিসিতে দায়ের করা নাগরিক মামলায় তুরস্কের নাগরিক হাতিস চেঙ্গিস ব্যক্তিগত আঘাতের অভিযোগ তুলেছেন এবং খাসোগির মৃত্যুতে হওয়া আর্থিক ক্ষতির ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন।

খাসোগির মানবাধিকার সংস্থা ডেমোক্রেসি ফর দ্য এরাব ওয়ার্ল্ড নাও (ডন) তাদের কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে।

ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকার খবর অনুযায়ী, মঙ্গলবার এক ভিডিও কনফারেন্সে হাতিস চেঙ্গিস ও ডন জানায়, খাসোগি হত্যায় দায়ী যুবরাজ মোহাম্মদকে যেন যুক্তরাষ্ট্রের কোনো আদালতে বিচারের আওতায় আনা হয়, সেই লক্ষ্যেই মামলাটি করেছেন তারা।

এক বিবৃতিতে চেঙ্গিস বলেন, ‘জামাল বিশ্বাস করতো আমেরিকায় যে কোনো কিছু সম্ভব। তাই বিচার ও জবাবদিহিতার জন্য আমিও আমেরিকার নাগরিক আইনের ওপর আস্থা রাখছি।’

জামাল খাসোগি এক সময় সৌদি রাজপরিবারের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ছিলেন। তবে এক পর্যায়ে অবস্থান পাল্টে তিনি রাজপরিবারের কঠোর সমালোচকে পরিণত হন। যুক্তরাষ্ট্রের দ্য ওয়াশিংটন পোস্টে তিনি সৌদি রাজপরিবারের নানা কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে কলাম লিখতেন। 

২০১৮ সালের ২ অক্টোবর বিয়ের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করতে ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে গিয়ে নিখোঁজ হন খাশুগজি। পরে জানা যায়, তাকে কনস্যুলেটের ভেতরেই হত্যা করে লাশ টুকরা টুকরা করে সরিয়ে ফেলা হয়েছে।

খাশুগজি হত্যাকাণ্ডে বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় উঠলে সৌদি যুবরাজের ভাবমূর্তিও দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর পক্ষ থেকেও বলা হয়, ওই খুনের আদেশ স্বয়ং যুবরাজ মোহাম্মদ দিয়েছেন বলে তাদের বিশ্বাস।

অবশ্য সৌদি কর্তৃপক্ষ এ ঘটনায় যুবরাজের জড়িত থাকার অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে এসেছে।

খাসোগি নিখোঁজের পর সৌদি কর্মকর্তারা এই অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেছিল, কনস্যুলেটে প্রবেশের কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি বের হয়ে গেছেন। পরে তারা দাবি করে, এজেন্টদের সঙ্গে ‘হাতাহাতিতে’ খাসোগির মৃত্যু হয়েছে।

সৌদি রাজপরিবারের, বিশেষ করে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের প্রত্যক্ষ মদদে খাসোগিকে ইস্তাম্বুলে হত্যা করার অভিযোগ ওঠে। সৌদি এ দাবি প্রত্যাখ্যান করে। কিন্তু জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো সৌদির এ দাবিতে সন্তুষ্ট ছিল না।

জাতিসংঘের একজন বিশেষজ্ঞ খাশুগজির খুনের ঘটনাটিকে ‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড’ হিসেবে চিহ্নিত করে সৌদি যুবরাজকেও তদন্তের আওতায় আনতে বলেছিলেন। 

আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে সৌদি আরব খাশুগজি হত্যার তদন্ত ও বিচারের উদ্যোগ নেয়। সেই বিচারে গতবছর ডিসেম্বরে পাঁচ সৌদি নাগরিককে মৃত্যুদণ্ড এবং তিন জনকে ২৪ বছর কারাদণ্ড দেয় সৌদি আদালত। এরপর চলতি বছর জুলাই মাসে মৃত্যুদণ্ডের ওই ৫ আসামির সাজা কমিয়ে ২০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

পূর্বকোণ/পিআর

শেয়ার করুন