চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

করোনায় মৃত্যু ঠেকিয়ে বিশ্ব আলোচনায় কম্বোডিয়া

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০ | ১:৪০ অপরাহ্ণ

করোনা মহামারির এই বিশ্বে যখন প্রতিনিয়ত শুনতে হচ্ছে মৃত্যুর কথা তখন তার ব্যতিক্রম কিছু শুনতে কার না ভালো লাগে! দেড় কোটির বেশি জনসংখ্যার দেশ কম্বোডিয়া। করোনার উৎপত্তিস্থল হিসেবে পরিচিত চীন থেকে মাত্র আড়াই হাজার কিলোমিটার দূরত্বের দেশটি এখন সারা পৃথিবীর কাছে বিস্ময়।

পরিসংখ্যানভিত্তিক ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী দেড় কোটির বেশি জনসংখ্যার এ দেশটিতে এখন পর্যন্ত মাত্র ২৭৫ জন মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন! মারা যাননি একজনও!

বিশ্বব্যাংকের স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা বিষয়ক প্রোগ্রামের প্রধান হিসেবে কম্বোডিয়ায় দায়িত্বরত ড. জিয়াউদ্দিন হায়দারের কথায় বোঝা গেল একেবারে শুরু থেকেই করোনাকে হাল্কাভাবে না নেয়ার মানসিকতা এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ ও তার বাস্তবায়নেরই ফসল আজকের এই সাফল্য।

ড. জিয়া কম্বোডিয়ার এ সাফল্য সম্পর্কে বলেন, ‘বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা করোনার জন্য জরুরি ঘোষণা দেয়ার পরপরই দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে থাকে কম্বোডিয়া। রাজনৈতিকভাবেও তারা ছিল প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠক ডেকে সেখান থেকে স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে প্রধান করে করোনা মোকাবিলায় জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটি গঠন করে সরকার। এতে বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টকেও যুক্ত করা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ঘোষিত ৯টি একশনের সঙ্গে সমন্বয় করে কোভিড মাস্টার প্ল্যান ঘোষণা করে। পাশাপাশি ৩টি সিনারিও ঠিক করে তারা। একজন বা দুজন আক্রান্ত হলে কি ব্যবস্থা নেয়া হবে, ক্লাস্টার বা গুচ্ছ সংক্রমণ হলে কি করা হবে, কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হলেই বা কি করা হবে।
মার্চে অর্থ মন্ত্রণালয় মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহে উন্নয়ন সহযোগী যেমন- বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, এডিবি, বিশ্বব্যাংক ইত্যাদির সঙ্গে বৈঠকে বসে এবং জানতে চায় কে কীভাবে সাহায্য করতে পারবে। সরকার জানিয়ে দেয়, মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়নে প্রয়োজন ৭০ মিলিয়ন ডলার। উন্নয়ন সহযোগীদের সহযোগিতার পর যা বাকি থাকবে তা জাতীয় বাজেট থেকে বরাদ্দ দেবে। আমরা বিশ্বব্যাংক থেকে ৩৪ মিলিয়ন ডলার দিয়ে সাহায্য করেছিলাম।

কিন্তু যেকোনো জাতীয় সমস্যা সমাধানে একটি দেশের শুধু সরকারের সদিচ্ছা এবং পদক্ষেপই যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন জনগণের সম্পৃক্ততাও। কম্বোডিয়ার আজকের এ সাফল্যে জনগণেরও সমান সম্পৃক্ততা ছিল।
এছাড়া, দেশের বাইরে থেকে যেনো করোনার আগমন না ঘটতে পারে সেজন্য নেয়া হয় নানা পদক্ষেপ।

কিন্তু অবাক করার মতো বিষয় হলো, কম্বোডিয়া একবারও লকডাউনে না গেলেও ত্যাগ স্বীকার করেছে ভিন্নভাবে। এ বছরের ঐতিহ্যগত খেমার নতুন বর্ষ (বড় এবং জাতীয় উৎসব) উদ্‌যাপন বাতিল করা হয়েছিল।
কিন্তু এতো কিছুর পরেও রয়েছে সমালোচনা। প্রতি দশ লাখ জনসংখ্যার বিপরীতে দেশটিতে মাত্র সাড়ে সাত হাজারের কিছু বেশি টেস্ট করানো হয়েছে।

এ বিষয়ে জিয়া জানান, অকারণে কেন টেস্ট করানো হবে! শুধু যারা সন্দেহভাজন তাদেরই টেস্ট করা হয়েছে এবং হচ্ছে। এখানে সব নাগরিকদের জন্য টেস্ট বিনামূল্যে করা হয়। এমনকি চিকিৎসাও বিনামূল্যে! এরকম হলে কেউ নিজেকে আক্রান্ত মনে করলে লুকোনোরও কারণ নেই। তাছাড়া ২৫টি প্রদেশের সব জায়গাতেই নমুনা সংগ্রহের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। মানুষকে কষ্ট করে দূরে কোথাও যেতে হয় না। সরকারিভাবেই নমুনাগুলো রাজধানীতে পিসিআর টেস্টের জন্য পাঠানো হয়ে থাকে। তবে বিদেশিদের টেস্ট খরচ এবং চিকিৎসা খরচ নিজেদের বহন করতে হয়।

তারপরও কম্বোডিয়ার এই বিস্ময়কর এবং ঈর্ষণীয় সাফল্যের পেছনে তাদের শৃঙ্খলা এবং দক্ষতাই মূল কারণ বলে ড. জিয়া মনে করেন।

 

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট