চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সেনাবাহিনীকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ চীনা প্রেসিডেন্টের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

২৭ মে, ২০২০ | ২:৪৮ অপরাহ্ণ

চীনের সেনাবাহিনীকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। মঙ্গলবার এমন নির্দেশনা প্রদানের পাশাপাশি ‘যুদ্ধের প্রস্তুতি রাখতে সেনাদের প্রশিক্ষণ বাড়ানোর’ ওপরেও জোর দেন তিনি। 

বুধবার এনডিটিভি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। সম্প্রতি সীমান্তে ভারত-চীনের মধ্যে সৃষ্টি হওয়া তীব্র উত্তেজনার মধ্যেই সেনাবাহিনীকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হতে বললেন জিনপিং। 

চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে এ মুহূর্তে চলছে পার্লামেন্ট অধিবেশন। এর মাঝেই পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) ও পিপলস আর্মড পুলিশ ফোর্সের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মঙ্গলবার বৈঠক করেন জিনপিং। সেখানে তিনি যুদ্ধের প্রস্তুতি রাখার পাশাপাশি সেনাদের উদ্দেশে বলেন, যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় ও মাতৃভূমিকে রক্ষার জন্য সেনাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। তবে তিনি নির্দিষ্ট করে কোনো হুমকির বিষয় উল্লেখ করেননি।

কোন দেশের কাছ থেকে বিপদের আশঙ্কা করছেন; তা অবশ্য সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেননি চীনা প্রেসিডেন্ট। তবে তার যুদ্ধ প্রস্তুতির নির্দেশের দিনেই নিজ দেশের তিন বাহিনী প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এর আগে গত ২২ মে চীনের সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যেই লাদাখ সফরে যান ভারতের সেনাপ্রধান এম এম নারাভানে।

লাদাখ সীমান্তের কাছে চীনের সামরিক ঘাঁটিতে যুদ্ধবিমান নিয়ে আসা হয়েছে। এই ঘাঁটিতে ব্যাপকভাবে নির্মাণকাজ চলছে। উপগ্রহ থেকে নেওয়া ছবি থেকে দেখা যাচ্ছে, চারটি যুদ্ধবিমান সেখানে রয়েছে। চীন সেখানে যুদ্ধবিমান ওঠানামার জন্য আরও একটি টারম্যাক তৈরি করেছে। এপ্রিল ও মে মাসের দুইটি ছবি থেকে বোঝা যাচ্ছে, চীন সেখানে নির্মাণকাজ কী পরিমাণে বাড়িয়েছে। আরেকটি ছবি থেকে বোঝা যাচ্ছে, চীন জে১১/জে১৬ যুদ্ধবিমান সেখানে রেখেছে। এই যুদ্ধবিমানগুলি ভারতের সুখোই ৩০ বা রাফালের সমগোত্রীয়।

ভারতের অবসরপ্রাপ্ত স্কোয়াড্রন লিডার সমীর জোশি এনডিটিভি-কে বলেছেন, চীনের যুদ্ধবিমানগুলো ওই উচ্চতায় এক ঘণ্টার বেশি উড়তে পারবে না। সেই তুলনায় ভারতের যুদ্ধবিমানগুলো সমতলের এয়ারবেস থেকে তিন থেকে চার ঘণ্টা উড়তে পারবে। অবশ্য তার জন্য এয়ার টু এয়ার রিফুয়েলিং ট্যাঙ্কার ব্যবহার করতে হবে।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত ও চীনের মধ্যে কোনো সুনির্দিষ্ট ও সুচিহ্নিত আন্তর্জাতিক সীমানা নেই। তার বদলে রয়েছে লাইন অব একচুয়াল কন্ট্রোল বা এলএসি। যা ভারতের লাদাখ থেকে অরুণাচল প্রদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত (প্রায় ৩৫০০ কিলোমিটার)।

গত কয়েকদিনে এই এলএসি বরাবর দুই দেশের সেনারা সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছেন। এমনকি কয়েকজন ভারতীয় সেনাকে চীন কিছুক্ষণের জন্য আটকে রেখেছিল বলেও অভিযোগ রয়েছে। লাদাখের গালওয়ান ভ্যালির মতো নতুন স্থানেও চীনা সেনারা ঘাঁটি তৈরি করেছে। তবে কেন দুই প্রতিবেশীর মধ্যে আচমকা সামরিক উত্তেজনা শুরু হলো তা নিয়ে দ্বিধায় পড়েছেন অনেক বিশ্লেষক।

দক্ষিণ চীন সাগর ও তাইওয়ান প্রণালীতে মোতয়েন যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর সঙ্গেও তুমুল সামরিক উত্তেজনা বিরাজ করছে চীনের। ওয়াশিংটন ও বেইজিং অবশ্য তারও আগে থেকে নতুন করোনাভাইরাসের উৎপত্তি নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে।

২২ মে সামরিক বাজেট সংশোধন করে তা ৬ দশমিক ৬ শতাংশ বাড়িয়ে ১৭৯ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করেছে চীন। যুক্তরাষ্ট্রের পর সামরিক খাতে সবচেয়ে বেশি ব্যয় করা দেশ হলো চীন। ভারতের চেয়ে চীনের সামরিক ব্যয় তিনগুণ বেশি।

এদিকে বুধবার ভারতের সামরিক বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। লাদাখ সীমান্তে চীন সেনা ও যুদ্ধাস্ত্র মোতায়েন বাড়ালে ভারতও পাল্লা দিয়ে সেনা মোতায়েন বাড়াবে বলে সে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া সীমান্তে অবকাঠামো নির্মাণ নিয়ে চীনের আপত্তি সত্ত্বেও ভারত তা চালিয়ে যাবে বলেও সিদ্ধান্ত হয় বৈঠকে।

পূর্বকোণ/পিআর

শেয়ার করুন