চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

ভিয়েতনামের সাফল্য, করোনায় মৃত্যু হয়নি কারোই

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

২১ মে, ২০২০ | ১২:০৫ অপরাহ্ণ

মে ২০২০। এই বিশ্বের ‘সবচেয়ে নিরাপদ’ দেশ এখন ভিয়েতনাম। ১০ কোটির দেশে এক তাক লাগিয়ে দেওয়া সাফল্য, শেষ ৩২-দিনে ভিয়েতনামের সমাজতান্ত্রিক সাধারণতন্ত্রে নতুন করে একজনের শরীরেও করোনাভাইরাস ধরা পড়েনি। তাছাড়া করোনায় মৃত্যু হয়নি কারোই।

আক্রান্তের সংখ্যা মাত্র ৩১৪। এর মধ্যে ১৪৮ জন সংক্রমিত হয়েছেন দেশের বাইরে থেকে। আক্রান্ত লোকজনের মধ্যে ২৬০ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। ৫৪ জন এখনো চিকিৎসাধীন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ছয়টি হাসপাতালে।

এই সাফল্যের নেপথ্যে রয়েছে জনমুখী জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও সরকারি তৎপরতা। ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত ভিয়েতনামে স্বাস্থ্য পরিসেবা পুরোপুরি বিনা মূল্যে পাওয়া যেত, সরকারি ভর্তুকিতে। ১৯৮৬ সালে দইমই সংস্কার চালু করে ভিয়েতনাম। তুলে দেওয়া হয় নিখরচায় স্বাস্থ্যব্যবস্থা। জনস্বাস্থ্য নিয়ে শুরু হয় নানা পরীক্ষানিরীক্ষা। সংস্কারের প্রথম দিকের ভুলত্রুটি পরে শুধরে নেওয়া হয়।

কমরেড হো চি মিনের পাঠানো ২৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৫ সালে ৩৬৮-শব্দের সেই চিঠি এখনো ভিয়েতনামের মূল মন্ত্র। সেই চিঠিতে হো চি মিন বলেছেন, সৎ এবং ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে চিকিৎসকদের। ভালোবাসতে হবে রোগীদের এবং উন্নত করতে হবে দেশের স্বাস্থ্য পরিসেবা ক্ষেত্রকে। সেই থেকে ২৭ ফেব্রুয়ারি ভিয়েতনামের চিকিৎসক দিবস হিসেবে পালিত হয়।

মঙ্গলবার ১৯ মে) ভিয়েতনামের মুক্তিযুদ্ধের অবিসংবাদী নেতা কমরেড হো চি মিনের ১৩০-তম জন্মবার্ষিকী ছিল। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে ভিয়েতনামের জনগণের দীর্ঘ বীরত্বপূর্ণ লড়াইয়ের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি। মানবমুক্তির লড়াইয়ে যা হয়ে রয়েছে চিরস্মরণীয়।

কমরেড হো চি মিন থেকে আজকের ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক, প্রেসিডেন্ট নুয়েন ফু চং। আরও একটি যুদ্ধে নির্ণায়ক জয়। এবারে তা করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে।

বর্তমানে ১০ কোটির দেশে ৮৩ কোটি ৬০ লাখ মানুষই সরকারি স্বাস্থ্যবিমার আওতায়। গরিবদের জন্য এই বিমার প্রিমিয়ামের ১০০ শতাংশই দেয় সরকার। প্রায় গরিবদের ক্ষেত্রে এই হার ৭০ শতাংশ।

সর্বজনীন স্বাস্থ্য পরিসেবা নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) এবং বিশ্বব্যাংকের যৌথভাবে প্রকাশিত গ্লোবাল মনিটরিং রিপোর্টের সাম্প্রতিকতম প্রতিবেদন অনুযায়ী, ছয় বছরের কম বয়সী শিশু আর গরিবদের চিকিৎসার জন্য কোনো পয়সাই লাগে না। দেশের ৯৭ শতাংশ শিশুই টিকাকরণের আওতায়, যেখানে মার্কিন মুলুকে এই হার ৯৫ শতাংশ। ১৯৯৫-২০১৫, গড় আয়ু ৭১ থেকে বেড়ে হয়েছে ৭৬। পাঁচ বছরের নিচে শিশুমৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ৫৮ থেকে কমে হয়েছে ১৮। একই সময়ে প্রসূতিকালীন মৃত্যুর হার কমেছে ৭৫ শতাংশ।

২০০০ থেকে ২০১৮, এই সময়ে পাঁচ বছরের অপুষ্টির হার ৩০.১ শতাংশ থেকে কমে হয়েছে ১৩ শতাংশ।

ভিয়েতনামে হাসপাতালের সংখ্যা ১ হাজার ৩৪৬। এর মধ্যে সরকারি ১ হাজার ১৬১। বেসরকারি ১৮৫। আছে জেলা স্তরে ৭০০টির বেশি স্বাস্থ্যকেন্দ্র। এ ছাড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিসেবার দায়িত্বে রয়েছে ১১ হাজার কমিউন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের একটি নেটওয়ার্ক। এই সব কেন্দ্রে থাকেন চিকিৎসক, নার্স, প্রশিক্ষিত ধাত্রী।

তবে ভিয়েতনামের স্বাস্থ্যব্যবস্থা একেবারে ত্রুটিমুক্ত, এমনটা বলা যায় না। বিদেশি পুঁজি আছে। বেসরকারি হাসপাতাল আছে। ধরেই নিতে হবে, সম্পদশালীরা বাড়তি সুবিধা পান। গ্রাম-শহরের মধ্যে পরিসেবা পাওয়ার ফারাক থাকার কথা। তবে বিনা চিকিৎসায় মানুষ মরেন না।

এ বছরের মধ্যে জনসংখ্যার ৯০ শতাংশকেই স্বাস্থ্যবিমার আওতায় আনা সরকারের লক্ষ্য।

একদিন যারা ইতিহাসের বর্বরতম সামরিক আগ্রাসনের অন্যতম যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছিল, যে আগ্রাসনে ব্যবহৃত রাসায়নিক অস্ত্রের প্রভাব এখনো রয়ে গেছে, সেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সাড়ে চার লাখ মাস্ক, সুরক্ষা পোশাক পাঠিয়েছে ভিয়েতনাম।

পূর্বকোণ/ এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট