চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

হোটেলে হামলায় উগ্রবাদী হাশিম নিহত

সেনা পাহারায় জুমা পড়লেন শ্রীলংকার মুসলমানরা

পূর্বকোণ ডেস্ক

২৭ এপ্রিল, ২০১৯ | ৩:৫৪ পূর্বাহ্ণ

শ্রীলংকার রাজধানী কলম্বোর বাতাসে যখন আজানের ধ্বনি ভেসে আসছিল, তখন কোলাহলহীন রাস্তা দিয়ে মসজিদে গিয়ে জড়ো হন শত শত মুসল্লি। কিন্তু সেখানে গিয়ে তারা এমন দৃশ্য দেখেন, যেটা সচরাচর ঘটে না। অ্যাসল্ট রাইফেল হাতে সেনা বাহিনীর জওয়ানরা পাহারা দিচ্ছেন মুসলমানদের এবাদতখানা।-খবর রয়টার্সের
ইস্টার সানডেতে একযোগে হামলার পর দেশটির রাজধানীতে ব্যাপক নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। ভারত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্রটিতে মোতায়েন করা হয়েছে ১০ হাজার সেনা। তারা সন্দেহভাজনদের তল্লাশি ও ধর্মীয় স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করছেন। রোববারে আকস্মিক হামলায় ২৫৩ জনের বেশি নিহত ও পাঁচ শতাধিক আহত হয়েছেন। নিহতদের অধিকাংশ দেশটির সংখ্যালঘু খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের লোক। লংকানরা গত এক দশক ধরে শান্তিপূর্ণভাবেই বসবাস করে আসছিলেন। কিন্তু হামলার পর প্রতিশোধমূলক সহিংসতার আশঙ্কা নিয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে মুসলমানদের। গাড়ি বোমা হামলার সতর্কতা জারি করে ইতিমধ্যে মুসলমানদের মসজিদে না যাওয়ার ব্যাপারে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। কিন্তু শহরের নিভৃত অংশেই কল্লপিটিয়া জুমা মসজিদটি। সরকার সবাইকে ঘরে বসে নামাজ আদায় করতে বললেও শত শত মুসল্লি শুক্রবার নির্ভয়ে গিয়ে মসজিদে জমায়েত হন। তারা জামায়াতে নামাজ আদায় করেন। এরপর দেশের সব ধর্মের মানুষের শান্তি কামনা করে মোনাজাত করেন। ২৮ বছর বয়সী বিক্রয়কর্মী রইস উল্লাহ বলেন, এটা সত্যিই দুঃজনক পরিস্থিতি। সেনাবাহিনী নামাজিদের তাড়াহুড়া করে সব সারতে বলছিলেন। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে খানাখন্দকে ভরা রাস্তায় স্নাইপার কুকুর তাদের পথ অনুসরণ করেন। রইস বলেন, আমি খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ, হিন্দুদের সঙ্গে কাজ করি। কিন্তু কয়েকজন লোক যে কা- ঘটাল, তা আমাদের সবার জন্য হুমকি।
বছর দশেক আগে তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে গৃহযুদ্ধের অবসানের পর শ্রীলংকায় তুলনামূলক শন্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছিল। খ্রিষ্টান ও মুসলমানরা পাশাপাশি সৌহাদ্যৃ নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চলমান ধর্মীয় উত্তেজনা থেকে তারা বেশ দূরত্বেই ছিলেন।
জুমা শেষে বের হয়ে আসছিলেন আবদুল ওয়াহেদ মোহাম্মদ। পেশায় এই প্রকৌশলী বলেন, সব মুসলমানরাই সন্ত্রাসী না। প্রতিদিন যেসব হত্যাক- ঘটে, তা থেকে রেহাই পেতে পরিবারসহ আমি আল্লাহ কাছে পানাহ চাই।
শ্রীলংকায় ইস্টার সানডে’র ভয়াবহ বোমা হামলার ঘটনায় মূল পরিকল্পনাকারী এক জঙ্গি ওইদিন রাজধানী কলম্বোর একটি হোটেলে হামলার সময় নিহত হয়েছে। ইস্টার সানডে’র ভয়াবহ বোমা হামলার ঘটনায় সে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বলে ধারণা করা হচ্ছে। শুক্রবার দেশটির প্রেসিডেন্ট এ খবর নিশ্চিত করেন। -খবর এএফপি’র
প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা স্থানীয় একটি জঙ্গি সংগঠনের নেতা জহরান হাশিমের কথা উল্লেখ করে সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ ব্যাপারে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আমাকে জানিয়েছে যে শানগ্রি-লা হোটেলে হামলা চলাকালে জহরান হাশিম নিহত হয়েছে।’
ইসলামিক স্টেট গ্রুপ শ্রীলংকায় বোমা হামলার দায় স্বীকার করার পর ওয়েবসাইটে তাদের দেয়া এক ভিডিও ফুটেজে হাশিমকে দেখা যায়। ফুটেজটি হামলার আগে না পরে তা নিশ্চিত নয়। কিন্তু হামলার পর তাৎক্ষণিকভাবে তার অবস্থানের ব্যাপারে কিছু জানা যায়নি।
শানগ্রি-লা হোটেলে হামলায় হাশিমের কী ধরনের ভূমিকা ছিল সে ব্যাপারে তাৎক্ষণিকভাবে সিরিসেনা কিছু বলতে পারেননি। গত রোববার শ্রীলংকার যে ছয়টি স্থানে বোমা হামলা চালানো হয় সেসব হামলার অন্যতম ছিল শানগ্রি-লা হোটেলে হামলা। এসব হামলায় ২৫০ জনের বেশি লোক প্রাণ হারায়।
এদিকে ভয়াবহ বোমা হামলার পর প্রতিশোধমূলক সহিংসতার আশঙ্কায় মসজিদে বা গির্জায় ধর্মপ্রাণ মানুষের যাতায়ত কমে গেছে। নিজেদের নাগরিকদের শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) মসজিদে বা গির্জায় না গিয়ে বাড়িতে বসে প্রার্থনা করতে আগেই আহ্বান জানিয়েছে শ্রীলঙ্কা। বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) শ্রীলঙ্কার যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের কর্মকর্তারাও
এ আহ্বান জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, আগামী সপ্তাহে উপাসনা করার স্থানগুলো এড়াতে হবে। কেননা, ধর্মীয় কেন্দ্রগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করে আরও বেশি আক্রমণ হতে পারে।
শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) শ্রীলঙ্কান সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ভারতীয় মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্রটির ধর্মীয় কেন্দ্রগুলোতে অনুসন্ধান এবং নিরাপত্তার জন্য প্রায় ১০ হাজার সেনা সদস্য নিয়োজিত ছিল। সংবাদমাধ্যম বলছে, প্রতিবাদমূলক সাম্প্রদায়িক সহিংসতার আশঙ্কা করছে শ্রীলঙ্কা। এ ভয়ে ইতোমধ্যেই দেশটির মুসলমান সম্প্রদায় বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
শ্রীলঙ্কার প্রধান ইসলাম ধর্মীয় সংস্থা অল সিলন জামিয়াতুল উলমা দেশটির মুসলমানদের বাড়িতে নামাজ আদায় করার পরামর্শ দিয়েছে। সংস্থাটি বলছে, নিজের পরিবার এবং সম্পত্তি রক্ষা করার প্রয়োজন আছে। দেশটির কার্ডিনাল মালকলম রঞ্জিতও আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, পরবর্তী নোটিশ না পাওয়া পর্যন্ত দেশের গির্জাগুলোতে প্রার্থনায় না যাওয়া উচিত। তিনি বলেন, নিরাপত্তা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রোববার (২১ এপ্রিল) খ্রিস্টানদের বড় ধর্মীয় উৎসব ইস্টার সানডে উদযাপনের সময় শ্রীলঙ্কায় তিনটি গির্জা ও চারটি হোটেলে ভয়াবহ সিরিজ বোমা হামলা হয়। এরপরই বাড়তে থাকে নিহত সংখ্যা। শেষপর্যন্ত ৩৫৯ এ গিয়ে ঠেকে। যা থেকে পরে গণনায় ভুল হয় বলে ১০৬ জন কমে ২৫৩ তে এসে দাঁড়ায়।
এ ঘটনায় পুলিশ এখন পর্যন্ত তাদের তদন্তে সিরিয়া ও মিশরের বিদেশিসহ অন্তত ৭৬ জনকে আটক করেছে।
এদিকে, মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) হামলাটির দায় স্বীকার করে জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস)। প্রমাণ হিসেবে হামলাকারীদের বেশ কয়েকটি ছবিও প্রকাশ করে সংগঠনটি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট