চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

আবুধাবিতে করোনায় আরেক বাংলাদেশির মৃত্যু
আবুধাবিতে করোনায় আরেক বাংলাদেশির মৃত্যু

করোনার দিনগুলোতে চীনের গ্রামগুলো যেভাবে কাজ করেছে

অনলাইন ডেস্ক

১০ এপ্রিল, ২০২০ | ৬:০৭ অপরাহ্ণ

সমাজের অঙ্গ হিসেবে গ্রামাঞ্চল এ মুহূর্তে খুব গুরুত্বপূর্ণ। যদিও আমি গ্রামাঞ্চলে বাস করি না, তবে প্রায়ই গ্রামে যাই এবং আমার শৈশবের অনেক স্মৃতি ওই গ্রামের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে আছে। এ নিবন্ধে আমি করোনাভাইরাস প্রকোপের সময় চীনের পল্লী পরিস্থিতি এবং গ্রামীণ অঞ্চলের গুরুত্ব সম্পর্কে সংক্ষেপে বলতে চাই। সরকারি তথ্য অনুসারে, ২০১৮ সাল পর্যন্ত চীনের পল্লী জনসংখ্যা মোট জনসংখ্যার ৪০.৮৫%। চীনের গ্রামীণ আধুনিকায়নের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এখন আধুনিকতা ও ঐতিহ্যবাহী উপাদান সহাবস্থান করে। উদাহরণস্বরূপ, আমার দাদা-দাদির বাড়ি গ্রামাঞ্চলে অবস্থিত এবং তারা হলেন কৃষক। আগে তাদের গ্রামে ছিলো গরু, মুরগি, কুকুর ও অন্যান্য গৃহপালিত প্রাণী।

তবে বর্তমানে গবাদি পশু, ভেড়া ও অন্যান্য প্রাণী শুধু বিশেষায়িত সংস্থাগুলোতে দেখা যায়। কারণ এ জায়গাগুলো আরও পেশাদার, পরিষ্কার এবং আরও দক্ষ। আর একই সময়ে, এয়ার কন্ডিশনার ও টেলিভিশনের মতো আধুনিক যন্ত্রগুলো গ্রামাঞ্চলে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। গ্রামের প্রায় প্রত্যেকেরই একটি করে মোবাইল ফোন রয়েছে। চীনের গ্রামে তুলনামূলকভাবে সুবিধাজনক চিকিৎসা বীমা ব্যবস্থার প্রচলন করা হয়েছে। ২০০৩ সালে চীন নতুন ধরণের গ্রামীণ সমবায় চিকিৎসা বীমা প্রয়োগ করতে শুরু করে, আর ২০১০ সালে এটি ধীরে ধীরে দেশের পল্লী বাসিন্দা পর্যন্ত বিস্তার লাভ করে। এটি চীনের সামাজিক সুরক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়বস্তু এবং অর্থনৈতিক নির্মাণের অন্যতম প্রধান সূত্র।

চীনের সরকার একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে বিভিন্ন ধরণের রোগ অনুযায়ী গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর চিকিৎসা ব্যয়গুলো প্রদান করে। যদি মহামারী আসে, প্রথমে তাদের রোগ নির্ণয় করা হয় এবং বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়। দ্বিতীয়ত, যদি অন্য পরিস্থিতিও থাকে তারা চিকিৎসা বীমাও যথারীতি প্রদান করতে পারেন। মহামারীর সময় ভাসমান জনসংখ্যার অবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চীনের গ্রামীণ জনসংখ্যায় প্রচুর অভিবাসী শ্রমিক রয়েছে, তারা তথাকথিত ‘অভিবাসী শ্রমিক’। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই ভাসমান জনসংখ্যা, মানে অনেক লোক গ্রামাঞ্চল থেকে নগর অঞ্চলের মধ্যে চলে আসে। তাদের কর্মজীবন শহরে, কিন্তু তাদের শিকড় গ্রামাঞ্চলে রয়েছে। করোনাভাইরাস মহামারী ছড়িয়ে পড়লে শহরের বেশ কয়েকটি কারখানা আর সুপারমার্কেট বন্ধ হয়ে যায়। শহরে কর্মরত গ্রামীণ জনগোষ্ঠী তাদের গ্রামে ফিরে আসে। চীনের জনগোষ্ঠীর এত বড় সংখ্যার জন্য মহামারী প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এর জন্য প্রাসঙ্গিক কর্মীদের দ্রুত মহামারী ছড়িয়ে পড়া রোধ করার জন্য কার্যকর সিদ্ধান্ত নিতে হয়। মহামারী পরিস্থিতিতে কঠোর ও সুশৃঙ্খল কমান্ড এবং নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন। চীনা গ্রামগুলোর সংগঠন এবং পরিচালনা কঠোর। শহরগুলোর তুলনায় গ্রামাঞ্চলে প্রতিরক্ষামূলক উপকরণ এবং চিকিৎসা যত্নের অভাব রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে গ্রামীণ কর্মী, কমিউনিস্ট ও অন্যান্যরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। উর্ধ্বতনদের পাঠানো নির্দেশনা অনুযায়ী, গ্রামকর্মীদের সহযোগিতা দিয়ে ভাসমান লোকজনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। গ্রামবাসীদের শরীরের তাপমাত্রা এবং ঠান্ডার লক্ষণগুলোর মতো নিয়মিত স্বাস্থ্য পরিস্থিতির প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।

ভাসমান জনগোষ্ঠীর জন্য চিকিৎসা-সেবা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি যদি কোনও ব্যক্তির জ্বর ও সর্দি লাগার লক্ষণ না থাকে তবে তিনি এখনও ভাইরাসটি বহন করতে পারেন। যদিও এ নিয়ে আমাদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তবে আমাদের সতর্ক হতে হবে। আমার মনে হয় যে, যদিও এখন অনেক দেশ নগরীকরণের কাজ চালাচ্ছে, তবে বিভিন্ন দেশকে তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী এসব আলাদাভাবে করতে হবে। ‘নগরায়ন’ বলতে কখনও গ্রামকে শহরে রূপান্তরিত করা বোঝায়, তবে এটিও বলা হয় যে গ্রামের নতুন বিকাশের মডেলে উন্নয়নও নগরায়ন হতে পারে। তুলনামূলকভাবে কিছু দেশের গ্রামীণ সংস্থানগুলো অত্যন্ত মূল্যবান এবং এর প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। তারা একদিকে যেমন গ্রামের বৈশিষ্ট্য ধরে রাখতে পারে, অন্যদিকে নিজেদের পরিস্থিতি অনুযায়ী তাদের জীবন স্বাস্থ্য সুবিধাজনক করা দরকার। এটি বিস্তারিতভাবে কীভাবে করা যায় এমন একটি পথ খুঁজে নেওয়া দরকার যা তাদের নিজস্ব বিকাশের জন্য উপযুক্ত। চীনের মহান নেতা মাও সেতুং একবার বলেছিলেন, ‘জুতো আপনার পায়ে ফিট হয় কিনা তা কেবল আপনি নিজে পরে জানবেন’। সুতরাং মহামারী মোকাবিলায় বা সাধারণ জীবনে নাগরিকদের এ বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা উচিত। আমরা যা নির্মাণ করছি তা হলো ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য মূল্যবান সম্পদ। তাই সময়ের দ্রুত বিকাশ সত্ত্বেও এ পৃথিবীতে কেউ অবহেলিত থাকতে পারে না। অনলাইন ক্লাস চলাকালীন শিক্ষক আমাদের সবসময় সংবাদে মনোযোগ দিতে বলেছিলেন। কারণ আমরা ইতিহাসের সাক্ষী হচ্ছি। প্রতিটি বিপর্যয় শুধু একটি চ্যালেঞ্জ নয়, একটা ইতিহাসও। এটি আমাদের সমাজ ও মানবকে স্পষ্টভাবে বিশ্লেষণে উদ্বুদ্ধ করে। মহামারীর সময় প্রত্যেকের একটি দায়িত্ব আছে, প্রত্যেকেরই চিন্তা করা দরকার এবং প্রত্যেকেরই অস্তিত্বের তাৎপর্য রয়েছে। এ তাৎপর্য কেবল ব্যক্তির জন্যই নয়, সমষ্টি আর সমগ্র মানবসমাজের জন্য। বসন্ত ইতোমধ্যে এসেছে, ফুল ফুটেছে। বিপর্যয় হলো নিষ্ঠুর, তবে মানুষের মনে সহানুভূতি আছে। আশা করি সবাই একসঙ্গে থাকবেন। আমরা শিগগিরই সাধারণ শত্রু হিসেবে করোনাভাইরাসকে পরাস্ত করব।

লেখক ওয়াং জিয়াও ইআং

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট