বিপদ যেন পিছু ছাড়ছেই না চীনের। ভয়াবহ করোনা আতঙ্কের মাঝেই চীনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় ফুজিয়ান প্রদেশে পাঁচতলা হোটেল ধসে অন্তত ৭০ জন আটকা পড়েছেন। করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের জন্য কোয়ারেন্টাইনে রূপান্তর করা হয় হোটেলটিকে। শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, ৩৪ জনকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। হোটেলটি পুরোপুরি ধসে পড়ে আছে। উদ্ধারকর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে কাজ করছেন। ভেতরে আটকাপড়া লোকজন কোভিড-১৯ রোগী বলে জানা গেছে। সেখানে তাদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছিল। ১৪৭টি দমকল ইঞ্জিন ও ২৬ জন কর্মী ঘটনাস্থলে উপস্থিত রয়েছেন। তবে আচমকাই বিল্ডিংটি ভেঙে পড়ার কারণ জানা যায়নি। প্রাথমিকভাবে কোনো প্রাণহানির খবরও পাওয়া যায়নি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হঠাৎই বিকট আওয়াজ শুনতে পান তারা। বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসতেই দেখেন পাঁচতলা হোটেলটি সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে থাকা মানুষজন সাহায্যের আরজি জানাচ্ছেন। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দারা উদ্ধার কাজে এগিয়ে যাননি। করোনায় আক্রান্ত রোগীরা ওই বাড়িতে থাকায় সংক্রমণের ভয়ে তারা উদ্ধার কাজে হাত লাগাননি।
ওই হোটেলের বিপরীত ভবনে বাস করা এক চীনা নাগরিক বলেন, আমি খাবার খেতে বসছিলাম। এমন সময় একটি বিকট আওয়াজ শুনতে পাই। আমি মনে করেছিলাম কিছু একটার বিস্ফোরণ হয়েছে। কিন্তু বারান্দায় ছুটে গিয়ে দেখি, পুরো হোটেল ভবনটি ধসে গেছে।
শিনজিয়া এক্সপ্রেস হোটেলটি নির্মাণ করা হয় ২০১৮ সালের জুনে। মূলত ব্যবসায়িক ভ্রমণকারীদের জন্যই এই হোটেলটি নির্মাণ করা হয়। হোটেলটিতে মোট ৮০টি রুম রয়েছে। করোনা সংক্রমণের পর হোটেলটিকে বিশেষায়িত হাসপাতালে পরিণত করে স্থানীয় প্রশাসন।
এদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণে ইরানি পার্লামেন্টের নবনির্বাচিত এক নারী সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। ফাতেমেহ রাহবার নামের পার্লামেন্টের এই নারী সদস্য শনিবার মারা গেছেন বলে ইরানের আধা-স্বায়ত্তশাসিত বার্তা সংস্থা তাসনিম জানিয়েছে।
তাসনিম জানায়, পরীক্ষায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ার পর কয়েকদিন আগে রাহবারকে তেহরানের মাসিহ দানেশভারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাকে আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল। সেখানেই তার মৃত্যু হয়। গত মাসে অনুষ্ঠিত ইরানের পার্লামেন্ট নির্বাচনে তেহরান থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন রাহবার। তিনি রক্ষণশীল রাজনৈতিক দল ইসলামিক কোয়ালিশন পার্টির সদস্য ছিলেন।
করোনাভাইরাসে ইরানে কোনো নারী রাজনীতিকের মৃত্যুর জানা প্রথম ঘটনা এটি।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের উৎসস্থল চীনের বাইরে সবচেয়ে বেশি প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়া দেশগুলোর মধ্যে ইরান অন্যতম। শুক্রবার পর্যন্ত দেশটিতে প্রকাশ করা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৪৭৪৭ ও মৃতের সংখ্যা ১২৪ জন। ইরানের প্রশাসন বৃহস্পতিবার দেশটির সব স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখার মেয়াদ ১৯ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে।
২ মার্চ বার্তা সংস্থাটির আরেক প্রতিবেদনে ভাইরাসটির সংক্রমণে দেশটির এক্সপিডিয়েন্সি কাউন্সিলের সদস্য মোহাম্মদ মীরমোহাম্মদীর মৃত্যুর কথা জানানো হয়েছিল। ইরানের উপ-স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইরাজ হারিরচি ও পার্লামেন্ট পাঁচ সদস্য করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে জনগণকে বাসায় অবস্থান করার আহ্বান জানায় দেশটির সরকার।
এদিকে বিশ্বব্যাপী করোনায় ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত শুক্রবার পর্যন্ত মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৪৯৫ জনে। অপরদিকে ৫৭ হাজার ৬১১ জন চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। বিশ্বে মোট আক্রান্তের সংখ্যা লাখ ছাড়িয়েছে। খবর : বিবিসি