চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

মালয়েশিয়ার নতুন প্রধানমন্ত্রী মুহিউদ্দিন

১ মার্চ, ২০২০ | ৩:০৯ পূর্বাহ্ণ

এক সপ্তাহ ধরে চলা টালমাটাল রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর মালয়েশিয়ার রাজা সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মুহিউদ্দিন ইয়াসিনকে নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। গতকাল শনিবার রাজার নেওয়া হতবাক করা এ সিদ্ধান্ত পুরনো রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী মাহাথির মোহাম্মদ ও আনোয়ার ইব্রাহিমকে ক্ষমতার দৌঁড় থেকে ছিটকে দিয়েছে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে বয়োবৃদ্ধ সরকার প্রধান ৯৪ বছর বয়সী মাহাথির মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করার পাঁচদিন পর নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের এ সিদ্ধান্তটি এলো।-বিডিনিউজ

মাহাথির ও আনোয়ারের নির্বাচনী জোট ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে জয়ী হয়ে সাবেক ক্ষমতাসীন জোটকে ক্ষমতা থেকে হটিয়ে দিয়েছিল, কিন্তু পদত্যাগ করার পর আনোয়ারের সঙ্গে জোট ভেঙে দিয়েছেন মাহাথির।
গতকাল শনিবার মাহাথির ও আনোয়ার ফের জোটবদ্ধ হওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পরও এক বিবৃতিতে রাজদরবার জানায়, সম্ভবত মুহিউদ্দিন ইয়াসিনের প্রতি পার্লামেন্টের সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন আছে এমন বিবেচনার ওপর ভিত্তি করে রাজা নিজের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। “মহামান্য (রাজা) আদেশ জারি করে বলেছেন, একজন প্রধানমন্ত্রীর নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দেরি করা যায় না। সবার জন্য এটিই সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত,” ওই বিবৃতিতে এমনটি বলা হয়েছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স। এরপর নিজ বাড়িতে এক সংবাদ সম্মেলনে মুহিউদ্দিন বলেন, “আমি শুধু সব মালয়েশীয়কে জাতীয় রাজদরবার থেকে ঘোষিত সিদ্ধান্ত মেনে নিতে বলবো।”

নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের পর মাহাথির অথবা আনোয়ার তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেননি। ৭২ বছর বয়সী মুহিউদ্দিনের প্রতি সাবেক ক্ষমতাসীন দল ইউনাইটেড মালয় ন্যাশনাল অর্গানাইজেশনের (ইউএমএনও) সমর্থন আছে। তার প্রতি ইসলামপন্থি দল পিএএসেরও সমর্থন আছে।
কে এই মুহিউদ্দীন?

মুহিউদ্দীনের পুরো নাম তান শ্রী মুহিউদ্দীন ইয়াসিন। তিনি মালয়েশিয়ার সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও উপ-প্রধানমন্ত্রী। তার বর্তমান বয়স ৭২ বছর। মালয়েশিয়ার রাজনীতিতে বেশ প্রভাব বিস্তার করছেন এই রাজনীতিবিদ।
প্রায় ৯ বছর মালয়েশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য জোহরের পাগোহ থেকে মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন মুহিউদ্দীন। জোহর রাজ্যের একজন জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী ধর্মীয় শিক্ষকের ছেলে তিনি। যে কারণে ছোট বেলা থেকেই স্থানীয়ভাবে সবার দৃষ্টিতে ছিলেন মুহিউদ্দিন। রাজনীতিতে জনপ্রিয় হয়ে উঠতে বাবার প্রভাবও সাহায্য করেছে এ ক্ষেত্রে।

মালয়েশিয়ায় বেশ পরিচিত মুখ মুহিউদ্দীন। দেশটির ইউনাইটেড ইন্ডিজেনাস পার্টির প্রধান ও ক্ষমতাসীন জোট পাকাতান হারাপানের ডেপুটি প্রেসিডেন্ট তিনি।
১৯৭৮ সালে পাগোহ থেকে প্রথম পার্লামেন্টের সদস্য নির্বাচিত হন মুহিউদ্দীন। এরপর থেকে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত মালয়েশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রীছিলেন। ২০১৮ সালে দেওয়ান রাকায়েতের সদস্য হন।
নাজিব রাজ্জাকের দল ইউনাইটেড মালয়স ন্যাশনাল অরগানাইজেশনের ডেপুটি প্রেসিডেন্ট ছিলেন মুহিউদ্দীন। মাহাথির-রাজ্জাক জোট ন্যাশনাল বরিসনের ডেপুটি চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি।

মুহিউদ্দীন ইয়াসিন একজন অর্থনীতি বিশেষজ্ঞও। ইউনিভার্সিটি অব মালায়া থেকে ১৯৭০ সালে অর্থনীতিতে সম্পন্ন করেন মুহিউদ্দীন। এছাড়া মালায় ভাষা নিয়ে স্নাতক রয়েছে তার।
মাহাথির মুহাম্মদকে ফের প্রধানমন্ত্রী না করা হলেও তার উত্তরসূরিকেই এ পদ দেয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্লেষকরা। কারণ মাহাথিরের প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলেরই সভাপতি এই মুহিউদ্দিন ইয়াসিন।
২০১৬ সালে মালয়েশিয়ার জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক দল প্রিবুমি বেরসাতু প্রতিষ্ঠা করেন মাহাথির মুহাম্মদ। আর সে দলেরই সভাপতি মুহিউদ্দীন।
প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে মুহিউদ্দিনের নাম এর আগেই ঘোষণা করেছিল মাহাথিরের দল মালয়েশিয়ার ইউনাইটেড আদিবাসী পার্টি (বারসাতু)। প্রধানমন্ত্রীর পদ পেতে উমনো এবং পিএসএ নামের দুই দলের সমর্থন পেতে হয়েছে মুহিউদ্দিনকে।
জানা গেছে, মুহিউদ্দিনের জন্য উমনোর সমর্থনের সমালোচনা করেছেন খোদ মাহাথির মুহাম্মদ। আজ রবিবার শপথ নিলে মালয়েশিয়ার সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মুহিউদ্দীন হবেন দেশের অষ্টম প্রধানমন্ত্রী

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট