চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

হটলাইনে ১৩২০০ কল পেয়েও নিষ্ক্রিয় ছিল ভারতীয় পুলিশ !

দিল্লির সহিংসতা

পূর্বকোণ ডেস্ক

১ মার্চ, ২০২০ | ২:৪০ পূর্বাহ্ণ

ভারতের রাজধানী দিল্লিতে সংঘাত-সহিংসতার ৪ দিনব্যাপী তা-বের সময় দিল্লি পুলিশের কাছে নানা অভিযোগ ও সহযোগিতা চেয়ে জরুরি সেবা লাইনে তের সহ¯্রাধিক ফোন কল গেলেও বিপরীতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থ হয় পুলিশ। শনিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার প্রকাশিত দিল্লি সংঘাত সংক্রান্ত এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্যই প্রকাশ করা হয়েছে। প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, সহিংসতা চলাকালীন দিল্লির বিভিন্ন এলাকা থেকে অভিযোগ জানানো ও সাহায্য প্রাপ্তির আশায় অন্তত ১৩ হাজার ২০০টি জরুরি সেবা লাইনে ফোন কল আসে। কিন্তু সেগুলোর বিপরীতে পুলিশের ব্যবস্থা গ্রহণের কোনো সাক্ষ্য পাওয়া যায়নি।

অভিযোগ সংগ্রহ নথির তথ্য অনুসন্ধানের প্রেক্ষিতে পাওয়া তথ্য সম্পর্কে আনন্দবাজার জানায়, এ সময় কোথাও গুলি চলছিল, কোথাও গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছিল বলে অভিযোগ আসছিল। কিন্তু অভিযোগের প্রেক্ষিতে কোনো পুলিশি পদক্ষেপের রেকর্ড নেই। এমনকি সাধারণ মানুষও অভিযোগ দায়েরের ভিত্তিতে সাহায্য না পাওয়ার কথাই জানিয়েছে। দিল্লি পরিস্থিতি নিয়ে এক দিকে যখন স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, ঠিক তখনই একটি ভারতের একাধিক সংবাদমাধ্যমে এমন তথ্য তুলে ধরে। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ)-এর বিরোধীদের ওপর উগ্রবাদী হিন্দুগোষ্ঠীর আগ্রাসনে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত

কয়েক দফা সহিংসতায় তেতে ওঠে দিল্লি। তাতে এখনও পর্যন্ত ৪২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও প্রায় দুই শতাধিক মানুষ।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর দাবি, চলমান সংঘাতের সময় মানুষের ডাকে পুলিশ যদি যথাযথভাবে সাড়া দিতো তাহলে হয়তো হিংসা এমন চরম আকার ধারণ করতো না।

আনন্দবাজার জানায়, সেই অভিযোগ খতিয়ে দেখতেই পুলিশ কন্ট্রোল রুমের কল লগ খতিয়ে দেখে একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম। তাতে দেখা যায়, ২৩ তারিখ, রবিবার বিক্ষোভের প্রথম দিন সন্ধ্যাতেই ৭০০ ফোন গিয়েছিল পুলিশের কাছে। ২৪ তারিখে একধাক্কায় তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩ হাজার ৫০০ তে। ২৫ ফেব্রুয়ারি ৭ হাজার ৫০০টি ফোন পায় পুলিশ। ওই দিন রাত থেকেই এলাকা পরিদর্শনে বার হন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। পরের দিন অর্থাৎ ২৬ ফেব্রুয়ারি ১ হাজার ৫০০টি ফোন পায় দিল্লি পুলিশ।
প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, শুধুমাত্র যমুনা বিহার থেকেই ভজনপুরা থানায় ২৪-২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার ফোন এসেছিল। ভজনপুরা থানার আট পাতার কল রেজিস্টার খতিয়ে দেখা গেছে, কোন নম্বর থেকে ফোন আসছে, কী অভিযোগ এবং তার প্রেক্ষিতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তার জন্য রেজিস্টারের পাতায় আলাদা আলাদা কলাম থাকলেও, শুধুমাত্র কোথা থেকে ফোন এসেছিল, কী অভিযোগ তা-ই লেখা রয়েছে। এমনকি গুলি চলা এবং আগুন লাগানোর অভিযোগের কথাও লেখা রয়েছে তাতে। কিন্তু অভিযোগের প্রেক্ষিতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তার উল্লেখ নেই। অর্থাৎ অভিযোগ পেয়েও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কোনও ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ।

শুধু সাধারণ মানুষই নন, অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ করেছেন যমুনা বিহারের বিজেপি কাউন্সিলর প্রমোদ গুপ্তও। তার বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে জানানো হয় যে, পুলিশ তার ফোনই ধরেনি।
সংবাদমাধ্যমে প্রমোদ গুপ্ত বলেন, ‘পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দিতে পারেনি। পুলিশ যদি ব্যবস্থা নিত, পরিস্থিতি এতটা খারাপ দিকে মোড় নিত না’।
একই অভিযোগ শিববিহারের ‘রাজধানী পাবলিক স্কুল’-এর মালিক ফয়জল ফারুখেরও। তিনি জানান, সোমবার স্কুলে হামলা চালায় তা-বকারীরা। সমস্ত পড়–য়া এবং শিক্ষক-শিক্ষিকারা বেরিয়ে গেলে বার বার পুলিশকে ফোন করেন তিনি। ফোনে তাঁদের আশ্বাস দিলেও, স্কুল চত্বরে পুলিশ এসেই পৌঁছায়নি।

শেয়ার করুন