চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

দিল্লির সহিংসতা থামেনি নিহত বেড়ে ৩৮ জনে

পূর্বকোণ ডেস্ক

২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ২:৪০ পূর্বাহ্ণ

দিল্লিতে টানা চারদিন ধরে সংঘর্ষের পর গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩৮ হয়েছে। আহত হয়েছেন ২০০ এর বেশি। নিহতদের মধ্যে মুসলমানের সংখ্যাই বেশি বলে জানা গেছে স্থানীয় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে। এছাড়া পুলিশ কর্মী, গোয়েন্দা বিভাগের লোকও নিহত হয়েছেন। দিল্লিতে মুসলিমদের লক্ষ্য করেই হামলার দাবি করেছে মার্কিন কমিশন।

নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) ও নাগরিকত্ব তালিকা (এনআরসি) ভারতজুড়ে যে সহিংসতা সৃষ্টি করেছে, তা ক্রমেই বেড়ে মুসলমানদের কষ্টের বোঝা ভারী করছে। কেননা দিল্লির মুস্তাফাবাদের ব্রিজপুরি এলাকায় আরেকটি মসজিদে আবার হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। শুধু তা-ই নয়, মসজিদে ঢুকে নামাজরত মুসল্লিদের গুলি চালানো এবং রড দিয়ে বেধড়কভাবে পেটানোর ঘটনাও ঘটেছে। এমনকি অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরও চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ করছে এলাকাবাসী। এছাড়া সেখানকার মাদ্রাসা, স্কুলসহ বিভিন্ন স্থাপনায়ও হামলা চালাতে বাদ রাখেনি উগ্রপন্থিরা। মঙ্গলবার সেখানকার অরুণ মডার্ন

পাবলিক সিনিয়র সেকেন্ডারি স্কুলে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। ওই স্কুলের শিক্ষক কাসিম জাহিদ স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, এ দিন বিকেল ৪টার পর স্কুলে একদল দুর্বৃত্ত হামলা চালায়। স্কুলের আসবাবপত্র এবং কম্পিউটার ভেঙে ফেলা হয়েছে। এছাড়া পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে কয়েকটি গাড়ি।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম থেকে জানা গেছে, ওই স্কুলে সাত শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদের মধ্যে হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি। স্কুলটির পেছনেই রয়েছে মসজিদ। বিকেলে স্কুলে হামলা চালানোর পর সন্ধ্যায় পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়।
এরপরও সংঘর্ষ থামেনি। বেশ কয়েকটি ভবনে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর রাত ৮টায় মসজিদে এশার নামাজ শুরু হলে সেখানে ঢুকে মুসল্লিদের রড দিয়ে পেটাতে শুরু করে দুর্বৃত্তরা। একইসঙ্গে গুলিও চালানো হয় মুসল্লিদের ওপর।

১২ থেকে ১৫ জন মুসল্লিকে পেটানো হয়। একইসঙ্গে ইমামকেও গুলি করা হয়। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ইমাম হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এছাড়া ওই মসজিদ আর স্কুলের পাশে থাকা একটি মাদ্রাসায়ও অগ্নিসংযোগ করেছে উগ্রপন্থিরা।

পরে সেখানে সাংবাদিকরা পর্যবেক্ষণে গেলে দেখতে পান, মসজিদে রক্ত পড়ে আছে বেশ। একইসঙ্গে পুড়েও গেছে অনেক। এ থেকে বাদ যায়নি পবিত্র কোরআন শরিফও। মেঝেতে পুড়ে যাওয়া অবস্থায় দেখা গেছে কোরআন শরিফের পাতা।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভারত সফর চলাকালেই দিল্লিতে সিএএ সমর্থক ও বিরোধীদের পাল্টাপাল্টি মিছিল থেকে সংঘর্ষ শুরু হয়। যা একপর্যায়ে ছড়িয়ে পড়ে হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে।
এদিকে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনকে (সিএএ) কেন্দ্র করে ভারতের দিল্লিতে চলমান সংঘর্ষে মুসলিমদের লক্ষ্য করেই হামলা করার দাবি করেছে আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতাবিষয়ক মার্কিন কমিশন (ইউএসসআইআরএফ)। তবে মার্কিন সংস্থার এ অভিযোগকে খারিজ করে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য’ করা থেকে দূরে থাকার আহ্বান করেছে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এ তথ্য জানায়।
ইউএসসিআইআরএফের ওয়েবসাইটে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সফর শেষ হতেই প্রাণঘাতী দাঙ্গায় সহিংস হয়ে উঠেছে উত্তর-পূর্ব দিল্লি। মুসলিমদের লক্ষ্য করে উন্মত্ত জনতা হামলা চালাচ্ছে বলে জানতে পেরেছি আমরা।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আমরা জানতে পেরেছি দাঙ্গায় বেশ কিছু মসজিদ জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে এলাকা ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন বহু মুসলিম। গতবছর ডিসেম্বর থেকে দেশজুড়ে সিএএ বিরোধী আন্দোলন চলা কালে এ অশান্তির শুরু হয়েছে।
ইউএসসিআইআরএফের কমিশনার অনুরিমা ভার্গব বলেন, দিল্লি জুড়ে যে নৃশংস এবং লাগামছাড়া হিংসা বেড়ে চলেছে, তা চলতে দেওয়া যায় না। সব নাগরিককে নিরাপত্তা দিতে অবিলম্বে পদক্ষেপ করা উচিত ভারত সরকারের। অথচ তার বদলে খবর আসছে, মুসলিমদের উপর হিংসাত্মক হামলা রুখতে কোনো ভূমিকাই নেয়নি দিল্লি পুলিশ। নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। যে মুহূর্তে ভারতে বেছে বেছে মুসলিমদের হামলার লক্ষ্য করা হচ্ছে, তাদের অধিকার ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে, ঠিক সেই সময় এই ধরনের ঘটনা অত্যন্ত উদ্বেগের।’

ইউএসসিআইআরএফের চেয়ারপারসন টোনি পারকিন্স বলেন, ‘দিল্লিতে যে হিংসা চলছে, যে ভাবে মুসলিমদের ওপর হামলা এবং তাদের বাডড়, দোকান এবং ধর্মীয় স্থান জ্বালিয়ে দেওয়ার খবর আসছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগের। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রত্যেক নাগরিককে নিরাপত্তা দেওয়াই দায়িত্বশীল সরকারের অন্যতম প্রধান কর্তব্য। তাই মুসলিমদের এবং যারা যারা হামলার শিকার হয়েছেন তাদের সকলের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে ভারত সরকারকে পদক্ষেপ করতে আর্জি জানাচ্ছি আমরা।’

শেয়ার করুন