চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

আরটিকেরিয়া ত্বকের এলার্জি

ডা. প্রীতীশ বড়ুয়া

২১ নভেম্বর, ২০১৯ | ৩:৩০ পূর্বাহ্ণ

ত্বকে আরটিকেরিয়া নামক এলার্জিটি এদেশে আমবাত বা পিঁপড়েবাত হিসেবে পরিচিত। প্রায় শতকরা ২০ ভাগ মানুষ জীবনের কোন না কোন সময় এই চর্মরোগে আক্রান্ত হতে পারে। ত্বকে লাল লাল পিঁপড়ের মত গুড়ি বিচি থেকে শুরু করে আমের মত ফোলা,
চাক-চাক কিংবা রেললাইনের মত ফুলে উঠা চর্মচিহ্ন দেখা দিতে পারে। আবার কখনো কখনো এই এলার্জি শরীরের ভেতরেও হতে পারে। যেমন- ঠোঁট বা জিহবা ফুলে যাওয়ার মত জরুরি অবস্থা, যা এনজিওডেমা নামে

পরিচিত। চোখ, শ্বাস বা পরিপাকতন্ত্রের কিছু কিছু অংশও ফুলে যেতে পারে। মারাত্নক চুলকানির পাশাপাশি থাকতে পারে কমবেশি অস্বস্তি। ঠোঁট, শ্বাস বা পরিপাকতন্ত্রে উঠলে হতে পারে শ্বাসকষ্ট, পেট ফাঁপা, বমিভাব ও বমি।
আরটিকেরিয়া সাধারণত দুই প্রকার হয়ে থাকে। একিউট আরটিকেরিয়াতে লক্ষণ উপসর্গগুলি দ্রুত উঠে আবার মিলিয়েও যায় তাড়াতাড়ি। সাধারণত ৬ সপ্তাহের মধ্যে এটি চলে যায় এবং শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। ক্রনিক আরটিকেরিয়া বারবার দেখা দিতে পারে এবং মিলিয়ে যেতে মাস থেকে বছরান্ত সময় লাগতে পারে।

আরটিকেরিয়ার কারণ সুনির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। এদেশে অধিকাংশ মানুষ খাদ্যকেই আরটিকেরিয়ার প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করে। কিছু কিছু খাদ্য, খাদ্য রঙ বা প্রিজারভেটিভ দায়ী থাকলেও অন্যান্য অনেক কিছু কারণে আরটিকেরিয়া হতে পারে। যে কোন ঔষধ- বিশেষত ব্যথানাশক, এন্টিবায়োটিক, এসিই ইনহিবিটর, ভ্যাকসিন ইত্যাদি একিউট আরটিকেরিয়ার জন্ম দিতে পারে। কিছু কিছু রোগ যেমন- সর্দি, কাশি, গলা ব্যথা, থাইরয়েড, ক্যান্সার, লুপাস, আরথ্রাইটিস, হেপাটাইটিস ইত্যাদি এর সাথে সম্পৃক্ত থাকতে পারে। ধুলা, ধোঁয়া, ফুলের পরাগরেণু, রান্নার ঝাঁজ ইত্যাদি থেকেও এটি দেখা দিতে পারে। আবার সূর্যালোক, অতি ঠা-া, ত্বকের উপর ঘর্ষণ ও চাপ, মানসিক চিন্তা, এমনকি পানি, ঘাম ও এলার্জেন বস্তুর সংস্পর্শ থেকেও আরটিকেরিয়ার উদ্ভব ঘটতে পারে। অধিকাংশ আরটিকেরিয়া সাধারণ বা ইডিপ্যাথিক যার কোন কারণ নেই বা কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না।

আরটিকেরিয়ার কারণ চিহ্নিত করা গেলে চিকিৎসা সহজ হয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে চিহ্নিত কারণ বা কারণগুলো এড়িয়ে চলা উচিত। আর রোগের সম্পৃক্ততা পেলে তার যথাযথ চিকিৎসা প্রয়োজন। রোগটি নির্ণয় করতে কোন সমস্যা না হলেও, কারণ বা অন্যান্য রোগের সম্পৃক্ততা নির্ধারণে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে। চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে এন্টি-হিস্টামিন জাতীয় ঔষধ- পাশাপাশি আরেক প্রকার এন্টি-হিস্টামিন; রেনিটিডিন জাতীয় এন্টি আলসার ঔষধও যোগ করা যেতে পারে। ঔষধ সাধারণত দীর্ঘদিন চালিয়ে যেতে হয়। কিছু কিছু এন্টি-হিস্টামিন একটু ঘুম ভাব আনতে পারে, তবে মারাত্নক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ততটা নেই। অনেক সময় হাঁপানির প্রচলিত ঔষধ মন্টিলিউকাস্ট দেওয়া হয়ে থাকে। তীব্র বা মারাত্নক ক্ষেত্রে স্টেরয়েড জাতীয় ঔষধ দেওয়া হয়। কখনো কখনো অতি জরুরি অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ প্রয়োজন হতে পারে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট