চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ট্রাইকোটিলোমিয়া চুল ছেঁড়া বাতিক

ডা. প্রীতীশ বড়ুয়া

৩১ অক্টোবর, ২০১৯ | ২:০৫ পূর্বাহ্ণ

আমাদের অনেকের মধ্যেই রাগে কিংবা আনন্দে দু-একটা চুল ছিঁড়ে বা তুলে ফেলার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু চুল তুলতে তুলতে যদি বড় একটা অংশ টাকের মতন করে ফেলে তাহলেই সেটি রোগ। যার ডাক্তারী নাম- ট্রাইকোটিলোমিয়া। রোগটিকে মানসিক অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিজঅর্ডারের একটি অংশ হিসেবে ধরা হয়। যদিও এটি মূলত মানসিক রোগ, কিন্তু এই রোগটি নিয়ে মানুষ চর্ম-চিকিৎসকের কাছেই প্রথম আসে। প্রাথমিক অবস্থায় এই চুল ছেঁড়া বা তুলে ফেলার বিষয়টি খুব একটা আমলে নেওয়া হয় না। কিন্তু এক পর্যায়ে দেখা যায় রোগী ঐ আচরণ থেকে আর বিরত থাকতে পারছে না। জেনে শুনে অথবা অজান্তেই চুল তুলতে থাকে। বিরত থাকার চেষ্টা করলে মনের ভিতর এক ধরনের অস্বস্তি তৈরি হয়। চুল তোলার পর পর
সাময়িক একটু স্বস্তি অনুভব করলেও পরবর্তীতে সেটা কষ্ট ও অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁডায়। সারাবিশ্বে প্রায় ৪% মানুষ এতে আক্রান্ত হয়। যেকোন বয়সী নারী পুরুষের মধ্যে এটি দেখা দিতে পারে। তবে উঠতি বয়সী শিশু-কিশোর সহ যৌবনে পা রাখা মেয়েদের মধ্যে এর হার একটু বেশী। ট্রাইকোটিলোমিয়া রোগটির কারণ এখনও নিশ্চিত নয়। তবে বংশগতির একটা প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে। পাশাপাশি রয়েছে-

মনো-চাপ, দুশ্চিন্তা ও স্নায়ুরোগ। আবার যাদের দাঁতে নখ কাটা,

চামড়ায় খোঁটাখুটি, ঠোঁট কামড়ানোর অভ্যেস আছে কিংবা যারা অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিজঅর্ডারের মত মানসিক রোগে ভূগে তাদের মাঝেও এটি বেশী দেখা যায়। চুল টেনে ছেঁড়ার এই প্রবণতা মাথার ক্ষেত্রে বেশি প্রযোজ্য হলেও চোখের পাপড়ি-ভ্রু সহ চুলযুক্ত যেকোন অঞ্চলে দেখা যায়। চুল তুলে ফেলার এই প্রক্রিয়াটি কিন্তু একদিনে হয় না, দীর্ঘদিন পর বোঝা যায়- স্থানটি চুলশুন্য বা টাকে পরিণত হয়েছে। তবে জায়গাটি টাকের মত তেলতেলে হয় না। কেননা ছেঁড়া সুষম থাকে না বলে খোঁচাখোঁচা চুলের গোড়া অনুভব করা যায়। অনেকটা ইঁদুরে কাটার মতন অসামঞ্জস্য-পূর্ণ। কিন্তু বারবার প্রক্রিয়াটি চলতে থাকলে অনেক সময় চুল একেবারে গোড়াহীন হয়ে যেতে পারে। চুল তুলতে ব্যথা হয়তোবা একটু লাগে কিন্তু আক্রান্ত মানুষের কাছে তা বেশ প্রশান্তির। চুল ছেঁড়ার মাধ্যমে তারা আনন্দ বেদনার উত্তেজনা প্রশমিত করে বলে ধারণা করা হয়। আবার কেউ কেউ ছেঁড়া চুল খেয়ে ফেলে আরো জটিল অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে। রোগটি সাধারণভাবে চোখে দেখেই নির্ণয় করা যায়। তবে মাঝে মধ্যে হেয়ার পুলিং টেস্ট, উডস লাইট, ডারমোস্কোপি বা বায়প্সি পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে। চিকিৎসার প্রথমেই রোগী ও তাদের অভিভাবককে মানসিকভাবে আশ্বস্ত ও স্বাস্থ্য-শিক্ষা সহ কাউন্সিলিং করতে হয়। বিহেভিয়াল্যাল থেরাপিতে আচরণ বা বাতিকগুলি পরিহারের পরামর্শ দেওয়া হয়। বেশী জটিল অবস্থায় মুখে খাবার ট্রাইসাক্লিক এন্টি-ডিপ্রেসেন্ট বা সিলেক্টিভ সেরোটিনিন আপটেক ইনহিবিটর দেওয়া হয়ে থাকে। সুখের কথা হচ্ছে রোগটি অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভাল হয়ে যায়।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট