চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

ব্রণ বা একনি মূলত বয়ঃসন্ধিকালের রোগ

ডা. প্রীতীশ বড়ুয়া

২৪ অক্টোবর, ২০১৯ | ১:২৪ পূর্বাহ্ণ

ব্রণ বা একনি চামড়ার একটি দীর্ঘমেয়াদী রোগ। বয়ঃসন্ধিকালে সবার কম বেশি হয়ে থাকে। সাধারণত ২০-২২ বছর বয়সের মধ্যে এটি কমে আসে। কিন্তু কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে বেশি বয়সেও এটি দেখা দিতে পারে। পুরুষদের তুলনায় মেয়েদের মধ্যে এর প্রকোপ বেশি। ত্বকে সেবাসিয়াস গ্রন্থি থাকে- যা থেকে নিঃসৃত সেবাম নামক একটি রস চামড়াকে মসৃণ রাখে। কোন কারণে সেবাসিয়াস গ্রন্থির মুখ বন্ধ হয়ে গেলে কিংবা মাত্রাতিরিক্ত সেবাম উৎপন্ন হলে তা নির্গত হবার পথ বন্ধ হয়ে যায়।ফলে ভেতরে সেবামজমে গিয়ে ফুলে উঠে ব্রণ বা একনি সৃষ্টি হয়। সেবাসিয়াস গ্রন্থির মুখবন্ধ ব্রণগুলি সাদাটে থাকে এবং এদের হোয়াইট বা ক্লোজড হেড্স বলে। আবার মুখ ফেটে গেলে মৃত কোষ জমা হয়ে বা ময়লার কারণে কালচে বিন্দু দেখা দিতে পারে, যা ব্ল্যাক বা ওপেন হেড্স নামে পরিচিত। এরপর এই প্রাথমিক ব্রণগুলো চামড়ায় থাকা নানান ব্যাকটেরিয়া দিয়ে আক্রান্ত হতে থাকে। ‘প্রোপাইনি ব্যাকটেরিয়াম একনিসিস’- এর মধ্যে অন্যতম। ব্রণ বা একনি মূলত চামড়ার এক প্রকার প্রদাহ, যা কিনা মৃদু থেকে তীব্রতর হতে পারে। ওপেন বা ব্ল্যাক হেড্স এর পাশাপাশি ছোট ছোট বিচি বা পাপিউল, পুঁজযুক্ত বা পাসটিউল, গোটা বা নডিউল, এমনকি সিস্টিক রূপেও ব্রণ দৃশ্যমাণ হতে পারে। চুলকানি খুব একটা না থাকলেও কম বেশি ব্যথা থাকতে পারে। ব্রণ যে কেবল মাত্র মুখে উঠে তা কিন্তু নয়। বুকে, পিঠে, বাহুতে এটি হতে পারে। ব্রণের দাগ খুব একটা গাঢ় না হলে সাধারণত ধীরে ধীরে মিলিয়ে যায়। কিন্তু গর্ত হয়ে গেলে তা স্বাভাবিক করা বেশ কঠিন।

আগেই বলা হয়েছে মাত্রাতিরিক্ত সেবাম উৎপাদন ও সেবাসিয়াস গ্রন্থির মুখ বন্ধ হয়ে যাওয়া ব্রণ উৎপন্নের প্রধান অনুঘটক। কিন্তু এই অনুঘটককে খুঁচিয়ে দিতে পারে কিছু কারণ। যেমন- এন্ড্রোজেন হরমোন আধিক্য, বংশগত বা জেনেটিক প্রভাব, বয়ঃসন্ধিকাল, কিছু কিছু

প্রসাধনী, প্রাক বা অনিয়মিত ঋতুচক্র, গরম ও আর্দ্র আবহাওয়া, স্টেরয়েড জাতীয় ঔষধ, ব্যাকটেরিয়ার প্রভাব, মানসিক চাপ ইত্যাদি। ব্রণ খাদ্যের সাথে সম্পর্কযুক্ত কিনা এ নিয়ে নানা মত থাকলেও, তৈলাক্ত খাদ্য এড়িয়ে চলাই ভাল। ব্রণের চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদী কিংবা বারবার করাতে হতে পারে। চিকিৎসার মূল

উদ্দেশ্য- নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি মুখের ভবিষ্যৎ বিকৃতির সম্ভাবনা প্রতিরোধ করা।
প্রয়োজন ভেদে মুখে খাবার বা লাগানোর এন্টিবায়োটিক কিংবা
ব্রণ-নাশী নানান ক্রিম লোশন দেওয়া হয়। পাশাপাশি কম ক্ষারযুক্ত ফেসওয়াশ ব্যবহার, রোদ এড়িয়ে চলা, খোঁচাখুঁচি বন্ধ করা, মাথা

খুশকিমুক্ত রাখা, অতিরিক্ত প্রসাধনী ব্যবহার না করা, পর্যাপ্ত ঘুম, মানসিক দুশ্চিন্তা পরিহার, খাদ্যে প্রচুর সবুজ শাক-সবজি গ্রহণ ইত্যাদি নানা ধরণের উপদেশ দেওয়া হয়ে থাকে। তবে মনে রাখতে হবে, নিজে নিজে ঔষধ ব্যবহার কোনভাবেই উচিৎ নয়।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট