চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সু স্থ থা কু ন

হাত-পায়ে ঝিঁঝি ধরা : কেন হয়, কী করবেন

১৮ অক্টোবর, ২০১৯ | ১:১৬ পূর্বাহ্ণ

হঠাৎ হঠাৎই হাত-পায়ে ঝিঁঝি ধরে না এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। সাধারণত পা বা হাতের ওপর লম্বা সময় চাপ পড়লে সাময়িক যে অসাড় অনুভূতি তৈরি হয় সেটিকেই আমরা ঝিঁঝি ধরা বলি। বৈজ্ঞানিক নাম ‘টেম্পোরারি প্যারেসথেসিয়া’, ইংরেজিতে বলে ‘পিনস অ্যান্ড নিডলস’। আর আমরা বাঙালিরা তার নাম দিয়েছি ‘ঝিঁঝি ধরা’।

শরীরের যে অংশে ঝিঁঝি ধরে, সেখানে সাময়িক অসাড়তার পাশাপাশি এমন একটি অনুভূতির তৈরি হয় যেন অসংখ্য সুঁই দিয়ে একসাথে ঐ অংশে খোঁচা দেয়া হচ্ছে। তবে সাধারণত কিছুক্ষণের মধ্যেই অসাড়তা এবং খোঁচা লাগার মতো অস্বস্তিকর অনূভুতি চলে গিয়ে স্বাভাবিক অনুভূতি ফিরে আসে। যেভাবে ঝিঁঝি ধরতে পারে : সাধারণত মানুষের হাত বা পায়ে ঝিঁঝি ধরার বিষয়টি সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয়। দীর্ঘক্ষণ বসা বা শোয়ার পর যদি হাত বা পা এমন অবস্থানে বেশ কিছুক্ষণ থাকে যেখানে সেটির ওপর লম্বা সময় ধরে চাপ পড়ে, তখন ঝিঁঝি ধরার সম্ভাবনা থাকে।

সাধারণত আমাদের যে ধরনের ঝিঁঝি ধরার অভিজ্ঞতা হয়, তা সাময়িক এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই ঠিক হয়ে যায়। তবে বিভিন্ন কারণে দীর্ঘসময় ঝিঁঝি ধরার মতো ঘটনাও ঘটে থাকে। বিশেষ করে উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের বা ডায়বেটিস আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে দীর্ঘসময় কোনো একটি অঙ্গে অসাড়তা অনুভব করার ঘটনা ঘটতে পারে। মেরুদ-ে আঘাতজনিত সমস্যা থেকে ‘সার্ভাইকাল ‘স্পন্ডাইলোসিস’ বা ‘লাম্বার স্পন্ডাইলোসিস’ এর ক্ষেত্রে হাতে পায়ে ঝিঁঝি ধরার আশঙ্কা থাকে। এছাড়া হাতে বা পায়ে রক্ত সঞ্চালন কমে গেলে ‘পেরিফেরাল আর্টারাল ডিজিজ’ হিসেবে ঝিঁঝি ধরতে পারে। এরকম ক্ষেত্রে শরীরের ঐ অংশে রক্ত প্রবাহ কমে যাওয়ায় মাংসপেশী দুর্বল হয়ে যাওয়ার কারণে ঝিঁঝি ধরে থাকে। ডায়বেটিসের কারণে ডায়বেটিক নিউরোপ্যাথি নামক একটি রোগ হয়, যার কারণে হাত পায়ে ঝিঁঝি ধরতে পারে।
ঝিঁঝি ধরার কারণ : ঝিঁঝি ধরার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা কিন্তু খুবই সহজ। আমাদের দেহের সব জায়গাতেই অসংখ্য স্নায়ু রয়েছে

যেগুলো মস্তিষ্ক ও দেহের অন্যান্য অংশের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান করতে থাকে। বসা বা শোয়ার সময় সেসব স্নায়ুর কোনো একটিতে চাপ পড়লে দেহের ওই অংশে রক্ত চলাচলকারী শিরার ওপরও চাপ পড়ে। ফলে শরীরের ঐ অংশে রক্ত চলাচল ব্যাহত হয়। এর ফলে ঝিঁঝি ধরতে পারে।

স্নায়ুতে চাপ পড়ার ফলে শরীরের ঐ অংশ থেকে যেসব তথ্য মস্তিষ্কে পৌঁছানোর কথা ছিল, তা বাধাগ্রস্থ হয়। একইসাথে স্নায়ুগুলোও হৃৎপি- থেকে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত পাওয়া থেকে বিরত থাকে যেহেতু রক্ত সরবরাহকারী শিরার ওপর চাপ পড়ে। এরকম পরিস্থিতি থেকে যখন চাপ অপসারিত হয়, তখন একসঙ্গে পরিমাণ রক্ত অঙ্গ প্রত্যঙ্গে প্রবাহিত হয় এবং একসাথে প্রচুর তথ্য মস্তিষ্কে প্রবাহিত হতে শুরু করে।

ঝিঁঝি ধরা সাধারণত কিছুক্ষণের মধ্যেই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে, তবে বিশেষ ক্ষেত্রে এই একই ধরণের অনুভূতি লম্বা সময় স্থায়ী হতে পারে। এবার জেনে নিই যেসব ক্ষেত্রে দীর্ঘক্ষণের জন্য ঝিঁঝি ধরা অনুভূতি হতে পারে : ১. কেমোথেরাপির মত চিকিৎসার ক্ষেত্রে, ২. এইচআইভি’র ওষুধ, খিঁচুনির ওষুধ বা বিভিন্ন ধরণের অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ফলে, ৩. সীসা বা রেডিয়েশনের মতো বিষাক্ত বস্তুর সংস্পর্শে এলে, ৪. পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবারের অভাব হলে, ৫. স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হলে, বিশেষ করে কোনো অসুস্থতা বা আঘাতের পর, ৬. অতিরিক্ত মদ্যপানের ফলে, ৭. বিশেষ ক্ষেত্রে চেতনানাশক ব্যবহারের পর। ঝিঁঝি ধরার মতো উপসর্গ যদি দীর্ঘসময় ধরে হয় বা কোনো অঙ্গে নিয়মিত ঝিঁঝি ধরার ঘটনা ঘটলে বা বারবার ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলেও চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট