চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

পমফোলিক্স বা সুঁচ-বাত

ডা. প্রীতীশ বড়ুয়া

৩ অক্টোবর, ২০১৯ | ২:১৪ পূর্বাহ্ণ

পমফোলিক্স বা সুঁচ-বাত নামে পরিচিত এই চর্মরোগটি মূলত একপ্রকার একজিমা। হাতে কিংবা পায়ে এটি হয়ে থাকে। প্রাপ্ত বয়স্ক যে কেউ এতে আক্রান্ত হতে পারেন। তবে মহিলাদের মধ্যে এর হার বেশী। এই জাতীয় একজিমাটি নানানবিধ কারণে হতে পারে। সুনির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা গেছে- অতিরিক্ত হাত-পা ঘামলে, বেশী গরম ও ভেজা পরিবেশে, মানসিক চাপে কিংবা এটোপিক একজিমার বংশগত ইতিহাস থাকলে এটি বেশি আক্রমণ করে থাকে। এছাড়াও রয়েছে কিছু অনূঘটক, যেমনঃ সাবান, ছাই, ডিটারজেন্ট, কেমিক্যাল ইত্যাদি কারণে সরাসরি ইরিট্যান্ট ডারমাটাইটিস বা অনান্য স্পর্শ জনিত এলার্জি ও একজিমা, পায়ের আংগুল মধ্যস্থানে ছত্রাক সংক্রমণ, কিছু ঔষধের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া ইত্যাদি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা গেছে এই সমস্ত কারণ বা অনূঘটকগুলি সবসময় এড়িয়ে চলা সম্ভব হয়না, আর তাই রোগটিও বার বার আক্রমণ করতে থাকে।
রোগের প্রথম ভাগে হাত পায়ের যেকোন স্থানে দলবদ্ধ ভাবে সাগুর দানার মত গুটি গুটি বিচি দেখা দেয়- যা কিনা চামড়ার গভীরেই থাকে। বিচিগুলি পরে ফুসকুড়ি বা ফোসকায় পরিণত হয়। প্রচন্ড চুলকানির সাথে মাঝারী থেকে তীব্র ব্যথা থাকতে পারে। ঐ ফুসকুড়ি বা ফোসকাগুলি পরে শুকিয়ে গিয়ে খসখসে ঘায়ে পরিণত হতে পারে। খসখসে চামড়া উঠে গিয়ে উপরিতল নস্ট করে ফেলে। আবার কখনো কখনো মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা এর মতন ব্যাকটেরিয়ার সহ-অবস্থানে পেকে পঁচে যাচ্ছেতাই অবস্থা সৃষ্টি করতে পারে। নখের পাশে হলে খাঁজ ও গর্ত হয়ে নখ নষ্ট হয়ে যায়।

প্রতিরোধক চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে, পানির অতিরিক্ত ব্যবহার বন্ধ করা, সাবান-ছাই-ডিটারজেন্ট সহ অনান্য এলার্জিক স্পর্শ থেকে বিরত থাকা, প্রয়োজনে গ¬্যাভস পরা, এড়িয়ে চলা সম্ভব এমন সব কারণ বা অনূঘটকগুলি থেকে দূরে থাকা ইত্যাদি। পাশাপাশি হাতে পায়ে নিয়মিত ভেসিলীন বা ইমোলিয়েন্ট মাখা বা ঘাম-নিরোধকের ব্যবহার ত্বককে অনেকখানি সুরক্ষিত রাখতে পারে। প্রতিকারক চিকিৎসার জন্যেও কিন্তু উপরের নির্দেশনা মেনে চলা জরুরী। এগুলি মেনে না চললে রোগটির প্রতিকারক চিকিৎসা অর্থহীন হয়ে যায়। স্থানীয়ভাবে পটাশিয়াম পারমাংগোনেট, এলমুনিয়াম এসিটেট বা এসিটিক এসিডের দ্রবনের পাশাপাশি মাঝারী থেকে তীব্র মাত্রার স্টেরয়েড মলম দেওয়া যেতে পারে। প্রয়োজনে মুখে খাবার এন্টিবায়টিক, স্টেরয়েড বা এন্টি-ফাংগাল দেওয়া হয়। তীব্রতা অনুযায়ী ইমিউনো-মডিউলিটিং বা এলিওটেট্রিনয়েন জাতীয় ঔষধও ব্যবহৃত হতে পারে। শেষ অস্ত্র হিসেবে রয়েছে, রেডিওথেরাপি, বটুলিনাম ও পুভা থেরাপি। তবে মনে রাখতে হবে- এত কিছু সত্বেও রোগটি কিন্তু বার বার হতে পারে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট