চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

দূষণ ডেকে আনছে অকাল ডিমেনশিয়া

মরিয়ম বেগম

১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ১:১৫ পূর্বাহ্ণ

পারিবারিক আলোচনায় কোনও আত্মীয়কে নিয়ে কথা বলতে গিয়ে হঠাৎই তাঁর চেনা নামটা ভুলতে বসছে মন। বাজারের ফর্দ হোক বা সংসারের খরচ, সহজ হিসেবও গুলিয়ে যাচ্ছে প্রায়ই। কথা অসংলগ্ন তো বটেই, সঙ্গে মনে পড়ছে বহু বছর আগের নিখুঁত ঘটনা। অথচ সকালে কী খেলেন মনে পড়ছে না কিছুতেই। প্রিয় কারও জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকী এ সব মনে পড়ছে সে সব দিন পেরিয়ে যাওয়ার অনেক পরে। স্মৃতি চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে অসুখ। চেনা নাম ডিমেনশিয়া।

আগে ধারণা ছিল প্রৌঢ় বয়সের জন্যই অপেক্ষা করে থাকে এ অসুখ। তবে, সে ভাবনায় জল ঢেলেছে আধুনিক গবেষণা।
স্মৃতির খুঁদকুড়োটুকুও আসলে খেয়ে যাচ্ছে বায়ুদূষণ। তাই আর প্রৌঢ়ত্বে পৌঁছনো অবধি অপেক্ষা করতে হচ্ছে না। তার আগেই স্মৃতির ভাঁড়ারে কোপ বসাচ্ছে ধোঁয়া-ধুলোর কণা। বিজ্ঞান পত্রিকা ‘প্রসিডিং অব ন্যাশনাল অকাডেমি অব সায়েন্সেস’-এ বছর কয়েক আগে প্রকাশিত এমন এক রিপোর্টের সঙ্গে সহমত হয়েছেন এই শহরের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরাও।
বায়ুদূষণে ধুঁকতে থাকা শহরের হাওয়া ক্ষতি করছে বুকের। মস্তিষ্কেরও। সাফ জানালেন স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ সমর চৌধুরী। তাঁর মতে, ‘‘দূষণের প্রত্যক্ষ প্রভাবে শুধু হৃদরোগ, হাঁপানি বা সিওপিডি-ই নয়, বায়ুদূষণ তার ক্ষতি চাড়িয়ে দিচ্ছে মস্তিষ্কের স্নায়ুতে। শব্দ মনে রাখার হার যেমন কমছে, তেমনই মাঝ বয়স পেরলেই কমে যাচ্ছে শব্দবন্ধ ও বাক্য তৈরির স্বতঃস্ফূর্ততা।’’
বিশ্বে সবচেয়ে মানুষের গড় আয়ু কমিয়ে দেওয়ার নেপথ্যে অন্যতম ভূমিকা পালন করে দূষণ। বায়ুদূষণের সূচকে অধিকাংশ সময়েই কলকাতা পিছনে ফেলে দেয় অন্য বড় ও ব্যস্ত শহরগুলোকে। এর ফলে স্নায়ুর নিউরোনগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ও মস্তিষ্কে তথ্য পৌঁছে দেওয়ার কাজে ঢিলেমি আসে। কখনও কখনও স্নায়ু এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয় যে তথ্য আদানপ্রদানে আর অংশ নিতেই পারে না।

শহর হোক অথবা মফস্বল, প্রচুর পরিমাণে যান চলাচলের কারণে এর ধোঁয়া থেকে বেরনো নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড, পার্টিকুলেট ম্যাটার (পিএম), সালফার ডাই অক্সাইড এবং অন্য দূষণপদার্থ সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মির সঙ্গে বিক্রিয়া করে। তৈরি হয় ওজোন গ্যাস। বিশেষত পিএম খুব সূক্ষ্ম হওয়ায় তা আমাদের শ্বাসনালী দিয়ে সরাসরি ফুসফুসে পৌঁছে যেতে পারে। এটাই জমতে জমতে সিওপিডি অর্থাৎ ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ ডেকে আনে। ফুসফুসের কাজকর্ম কমতে শুরু করে। ফুসফুসের অ্যালভিওলাই শুকিয়ে অক্সিজেনের অভাব দেখা যায় শরীরে। ফুসফুসকে যেমন শেষ করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে এই দূষণ, তেমনই নিউরোনের কার্যকারিতাও কমিয়ে দিতে ওস্তাদ এই পিএম।
ডিমেনশিয়া দূরে রাখতে তাই শরীরচর্চা ও ডায়েটে পরিবর্তন আনলেই হবে না।
(আগামী সংখ্যায় সমাপ্য)
[সূত্র : ম্যানস হেলথ]

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট