চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

হাত পায়ের তালু ঘামা

ডা. প্রীতীশ বড়ুয়া

১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ১:১৫ পূর্বাহ্ণ

আমরা সবাই কম বেশি ঘামতে পারি। কিন্তু ঘাম যদি মাত্রাতিরিক্ত বা অনিয়ন্ত্রিত হয় তখন তাকে রোগ বলা যেতে পারে। যার ডাক্তারি নাম হাইপার-হাইড্রোসিস। এটিকে প্রাইমারী বা স্থানীয় এবং সেকেন্ডারি বা সর্বদেহ ব্যাপি এই দুইভাগে ভাগ করা হয়। হাত পায়ের তালু ঘামা চর্মরোগটি প্রাইমারী বা স্থানীয় পর্যায়ভুক্ত। হাত পায়ের তালুতে বেশী দেখা গেলেও এই জাতীয় অতিঘামা রোগ- বগল, মুখ বা মাথাতেও হতে পারে। আমেরিকান একাডেমি অফ ডারমাটোলজী জার্নালে প্রকাশিত এক নিবন্ধ অনুযায়ী প্রাথমিক হাইপার-হাইড্রোসিস নির্ধারণ করার জন্য দুটি ধাপ রয়েছে। প্রথমে দেখতে হবে- এই অতিঘাম স্থানীয়ভাবে কোন

দেহগত রোগ বা ঔষধের
পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া ছাড়া কমপক্ষে ৬ মাস ধরে লক্ষ্যনীয় কিনা। উত্তর যদি হ্যাঁ-বোধক হয়, তাহলে দ্বিতীয় ধাপে নীচে বর্ণিত অবস্থাগুলি থেকে অন্তত ২ টি বিদ্যামান থাকতে হবে। ১) শরীরের উভয় পাশে সাদৃশ্যপূর্ণ ভাবে বিরাজমান। ২) স্বাভাবিক জীবন-যাপন ব্যাহত হয়। ৩) সপ্তাহে অন্তত একবার দেখা দেয়। ৪) পঁচিশ বছর বয়সের আগে থেকেই দেখা গেছে। ৫) অতি ঘামার পারিবারিক ইতিহাস আছে এবং ৬) ঘুমের মধ্যে না ঘামা। উপরে বর্ণিত অবস্থাগুলি ছাড়া অন্যান্য অতিঘামাকে সেকেন্ডারি হাইপার-হাইড্রোসিস বলা যেতে পারে- যা দেহগত কিছু সমস্যা বা ঔষধের কারণে হয়ে থাকে। আজকের নিবন্ধ শুধু প্রাথমিক অতিঘামাতেই সীমাবদ্ধ থাকবে।

প্রাথমিক বা স্থানীয় পর্যায়ের এই অতিঘামে ত্বক সর্বদাই ভেজা ভেজা থাকে ফলে ফাংগাস সহ নানান জীবাণুর সংক্রমণ, ডারমাটাইটিস ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। হাতের তালু বেশী ঘামলে- হ্যান্ডশেক করতে লজ্জা, লিখতে বা কিছু ধরতে অসুবিধা হয়। পায়ের তালুর ক্ষেত্রে পিছলে পরার সম্ভাবনা, বাজে গন্ধ ইত্যাদি জড়িত। আবার বগলের অতি ঘাম কাপড়-চোপড়ে দাগ সহ বাইরে থেকে দৃষ্টিকটু দেখায়। এই রোগে যারা ভূগেন তাঁরা এমনিতেই নিজেদের গুটিয়ে রাখেন, কিন্তু জীবন-যাপনের জন্য কারো মুখোমুখি হলে কিংবা কোন টেনশন যুক্ত কাজে আরো বেশি ঘামতে থাকেন।
যেহেতু এই প্রাথমিক অতি ঘামার কোন কারণ জানা থাকে না, তাই এর প্রতিরোধী চিকিৎসা নেই বললেই চলে। তবে একবার দেখা গেলে পরবর্তীতে জীবাণুর সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাবার জন্য পরিচ্ছন্নতা খুব দরকার। প্রতিকারক চিকিৎসার মধ্যে নানান ধরণের এন্টিপারসপিরেন্ট স্থানীয় ভাবে ব্যবহৃত হতে পারে। আয়ান্টোফোরেসিস নামে একপ্রকার বিদ্যুৎ প্রবাহ,
মীরাডাই, লেজার বা বোটক্স ইনজেকশন এর স্থানীয় প্রয়োগ অনেক সময় কার্যকর। অপেক্ষাকৃত নতুন এন্টি-কোলিনারজিক গ¬াইকোপাইরোলেট বা অক্সিবিউটাইনিন জেল বগলের জন্য ভাল কাজ করে। সিমপ্যাথেকটমী বা নার্ভের সার্জারী চিকিৎসাও রয়েছে। আর মুখে খাবার জন্যে রয়েছে, প্রপেনথালিন, অক্সিবিঊটাইনিন ইত্যাদি। তবে মনে রাখতে হবে এই চিকিৎসাগুলি সাধারণত- দীর্ঘ-মেয়াদী, পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া যুক্ত, ব্যয়বহুল, কিংবা দেশে অপ্রচলিত হতে পারে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট