চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

কবে, কোথা থেকে, কী করে বাংলাদেশে এসে জনপ্রিয় হয়ে গেলো এই মাছ ?

পূর্বকোণ ডেস্ক 

২৫ নভেম্বর, ২০২০ | ১:৩৯ অপরাহ্ণ

সহজলভ্য ও সস্তায় কম আয়ের মানুষের প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে পারে বলে তেলাপিয়া বাংলাদেশে বেশ জনপ্রিয় একটি মাছ। মাছ চাষীরাও তেলাপিয়া চাষ করতে বেশ পছন্দ করেন, ঝামেলাবিহীন স্বল্প পরিসরে চাষ করা যায় বলে। পুকুর ছাড়াও ভাসমান জালের খাঁচাসহ বিভিন্ন পদ্ধতিতে তেলাপিয়া মাছ চাষ করা যায়। স্বাদু পানি ছাড়াও লবণাক্ত পানিতে এবং অন্যান্য মাছের সাথে মিশ্র পদ্ধতিতে এই মাছ চাষ সম্ভব। কম সময়ে বেশি ফলন এবং মুনাফা হওয়ার কারণে চাষিদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে তেলাপিয়ার। অথচ তেলাপিয়া বাংলাদেশের মাছই নয়। ৬৫-৭০ বছর আগে এই ভূখণ্ডের মানুষ চিনতোও না তেলাপিয়া।

কবে কীভাবে এলো? :

মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউট বলছে, আফ্রিকা থেকে ১৯৫৪ সালে বাংলাদেশে তেলাপিয়া প্রথম এসেছিল। এটিকে বলা হত মোজাম্বিক তেলাপিয়া। দেখতে একটু কালো রঙের। পোনার পরিমাণ অনেক। কিন্তু বৃদ্ধি ছিল কম।

১৯৭৪ সালে থাইল্যান্ড থেকে বাংলাদেশে আসে নাইলোটিকা নামে তেলাপিয়ার একটি জাত। এটি মোজাম্বিক তেলাপিয়ার তুলনায় ভাল এবং বৃদ্ধিও ভাল হয়। ১৯৯৪ সালে ফিলিপাইন থেকে বাংলাদেশে আসে গিফট তেলাপিয়া। নাইলোটিকার তুলনায় এই তেলাপিয়ার বৃদ্ধির হার ৬০ শতাংশ বেশি। এই তেলাপিয়াই পরে বাংলাদেশে জনপ্রিয়তা অর্জন করে।

সময়ের হিসাবে বলা যায় যে, ’৯০ এর দশক থেকেই বাংলাদেশে তেলাপিয়া মাছের জনপ্রিয়তা তৈরি হয়। মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেন, এই গিফট তেলাপিয়া আসার পরই বাংলাদেশে তেলাপিয়ার মোমেন্টাম হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে যে তেলাপিয়ার চাষ হচ্ছে সেটি হচ্ছে গিফট তেলাপিয়া মনোসেক্স। জেনেটিক সিলেকশন পদ্ধতির মাধ্যমে গিফট তেলাপিয়ার জাত উন্নত করা হয়েছে। এটি এখন সুপার তেলাপিয়া নামে পরিচিত। গিফট তেলাপিয়ার এই জেনেটিক জাতটি স্থানীয় জাত বা অন্য তেলাপিয়ার তুলনায় ৫০-৬০ ভাগ বেশি উৎপাদনশীল।

মনোসেক্স তেলাপিয়া কী? কিভাবে করা হয়? :

মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের তথ্য মতে, বাংলাদেশে ৬ থেকে ৭শটি হ্যাচারি রয়েছে যেগুলোতে তেলাপিয়া মাছের মনোসেক্স পোনা উৎপাদন করা হয়। এসব হ্যাচারি থেকে বছরে ৬-৭শ কোটি পোনা উৎপাদিত হয়। মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এইচ এম কহিনুর বলেন, হরমোন প্রয়োগ করে তেলাপিয়া মাছের সব পোনাকে মনোসেক্স করা হয়। অর্থাৎ সব পোনাকে পুরুষ পোনায় রূপান্তরিত করা হয়।

তিনি বলেন, পোনার বয়স যখন শূন্য বা একদিন থাকে তখন থেকে পরের ২১-২৩ দিন পর্যন্ত হরমোন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ানো হয়। এই সময় পার হয়ে যাওয়ার পর, সব নারী পোনা পুরুষ পোনায় পরিণত হয়। অর্থাৎ তারা ডিম দেয়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। তখন এই মাছকে মনোসেক্স জাত হিসেবে উৎপাদন করা হয় বলে জানান তিনি। স্ত্রী মাছের তুলনায় পুরুষ মাছের বৃদ্ধি ২৫-৩০% বেশি হওয়ার কারণেও মাছগুলোকে মনোসেক্স করা হয়।

যে কারণে জনপ্রিয় :

বাংলাদেশে বর্তমানে মাছের চাহিদা আছে প্রায় ৪২ লাখ মেট্রিক টন। মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের তথ্য মতে, এর মধ্যে তেলাপিয়া উৎপাদিত হয় বছরে প্রায় ১৩ লক্ষ মেট্রিক টন। এক বছরে প্রতি হেক্টরে ২৫ থেকে ৩০ টন তেলাপিয়া উৎপাদিত হয়।

লাভজনক মাছ :

চাষের ক্ষেত্রে তেলাপিয়া খুবই লাভজনক বলে জানা যায়। তবে সম্প্রতি বাজারে এই মাছের দাম কমে যাওয়ার কারণে লাভের পরিমাণ কিছুটা কমে গেছে বলে জানান মৎস্য কর্মকর্তারা। তবে এখনো এটি অন্যান্য মাছের তুলনায় খরচ ও বিক্রির ভিত্তিতে লাভজনক বলে জানান তারা।

মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি নয় :

বিশেষজ্ঞ ও মৎস্য কর্মকর্তারা বলছেন যে, হরমোন প্রয়োগ করে তেলাপিয়া মাছকে মনোসেক্সে রূপান্তরিত করা হলেও মানবদেহের জন্য এটি আসলে কোন হুমকি তৈরি করে না। সূত্র : বিবিসি বাংলা

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট