চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

অজ্ঞাত রোগীর পরিচয় মিলবে বায়োমেট্রিক্সে: প্রস্তাব অনুমোদনে স্মারকলিপি

ইমাম হোসাইন রাজু

২১ অক্টোবর, ২০২০ | ১২:২৮ অপরাহ্ণ

প্রতিদিনই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি হয়ে থাকেন স্বজন পরিচয়হীন কোন না কোন রোগী। যা বছরে কমপক্ষে আড়াইশ’র কোটায় দাঁড়ায় অজ্ঞাত এসব রোগীর সংখ্যা। তারমধ্যে চিকিৎসাধীন ও অজ্ঞাত অবস্থায় ১০ শতাংশ রোগী মৃত্যু বরণ করলেও ভর্তিকৃতদের মধ্যে সুস্থ হয়ে স্বজনদের কাছে ফিরে যেতে পারেন মাত্র ১৫ থেকে ২০ শতাংশ রোগী। কিন্তু অসুস্থ এসব রোগীর সবচেয়ে বড় অংশই তাদের নাম পরিচয় বলতে না পারায় পৌঁছাতে পারেন না নিজ পরিবারের কাছে। যা নিয়ে তৈরি হয় এক বিড়ম্বনাময় পরিস্থিতি। অজ্ঞাত এসব রোগীর যখন এ অবস্থা, ঠিক তখনই রোগীর পরিচয় জানতে এবং তাদের পরিবারের কাছে সহজে পৌঁছে দিতে নতুন এক পদ্ধতি নিয়ে হাজির হয়েছেন গেল ১৪ বছর ধরে চট্টগ্রামে অজ্ঞাত রোগীদের নিয়ে কাজ করা মানবসেবী সাইফুল ইসলাম নেসার। যেখানে বায়োমেট্রিক পদ্ধতির মাধ্যমে খুব সহজেই অজ্ঞাত রোগীর নাম পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হবে। আর এ পদ্ধতি বাস্তবায়ন হলে কমপক্ষে ৮০ শতাংশ স্বজন পরিচয়হীন রোগীই তাদের পরিবারকে খুঁজে পেতে সক্ষম হবে বলেও অভিমত এ স্বেচ্ছাসেবকের। শুধু অজ্ঞাত রোগীই নয়, নাম পরিচয়হীন লাশের পরিচয় পেতেও কার্যকরি ভূমিকা রাখবে এ পদ্ধতি এমন আশা মানবিক এ যুবকের।
এমন পদ্ধতির সম্পর্কে জানতে চাইলে সাইফুল ইসলাম নেসার পূর্বকোণকে বলেন, ‘হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অজ্ঞাত রোগী মানেই বাড়তি বিড়ম্বনা। দায়িত্বরত ডাক্তার, নার্স, পুলিশ বাহিনী সকলকেই অজ্ঞাত রোগী নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। তাছাড়া মর্গে আসা অজ্ঞাত লাশ নিয়েও জটিলতা তৈরি হয়। এটি শুধুমাত্র চমেক হাসপাতালের চিত্র নয়। পুরো দেশের চিত্রই একই। এমন চিন্তা থেকেই একটি ডায়াগ্রাম তৈরি করা হয়েছে। যেটা দিয়ে খুব সহজেই অজ্ঞাত রোগীদের নাম পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব। জরুরি বিভাগে যখন একটা অজ্ঞাত রোগীকে রিসিভ করা হয়, তখন সাথে সাথে ওই রোগীর ফিঙ্গারপ্রিন্ট করা হলেই ওই রোগীর ডাটাবেজ বের করতে সক্ষম হবে।’
এদিকে, নেসারের বায়োমেট্রিক পদ্ধতির বিষয়ে আশার আলো দেখছেন স্বেচ্ছসেবী সংগঠনগুলোর পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনও। তাদের মতেও এমন পদ্ধতি বাস্তবায়ন করা গেলে তা হবে সকলের জন্য আশীর্বাদ। অন্যদিকে ‘অজ্ঞাত রোগীদের বন্ধু’ বায়োমেট্রিক এ সিস্টেম বাস্তবায়নে সর্বাত্মক সহযোগিতার কথা জানিয়েছেন নগর পুলিশের উপ কমিশনার বিজয় বসাকও। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘আমরা এ পদ্ধতিকে সফল করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাব। নেসার যে পদ্ধতির বা ডায়াগ্রামের কথা চিন্তা করেছে, সেটি অবশ্যই সবার জন্য মঙ্গল হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিভিন্ন সড়ক দুর্ঘটনা বা অজ্ঞান পার্টির কবলে পড়ে অথবা কোন না কোন কারণে দেশের সকল হাসপাতালে প্রতিদিনই অজ্ঞাত হিসেবে রোগী ভর্তি করা হচ্ছে। এরমধ্যে শুধুমাত্র চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে এক বছরেই অন্তত আড়াইশ’র অধিক নাম পরিচয়হীন এসব রোগী ভর্তি হয়ে থাকেন। যাদের চিকিৎসায় হাসপাতালের ২৫ ও ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে ‘অজ্ঞাত রোগী কর্নার’ও চালু রেখেছে হাসপাতাল প্রশাসন। কিন্তু এসব রোগীদের সার্বিক দেখাশোনা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করাসহ সঠিক পরিচর্যা নিয়ে বিড়ম্বনার পরিস্থিতি তৈরি হয়। আবার অনেকেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালেই মৃত্যু বরণ করে থাকেন। যাদের অজ্ঞাত হিসেবেই দাফন করা হয়ে থাকে। অন্যদিকে, প্রতি বছর চমেক হাসপাতাল থেকে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ জন রোগী জ্ঞান ফেরার পর তাদের পরিবারের কাছে ফিরে যেতে পারলেও বড় একটি অংশই জ্ঞান না ফেরা কিংবা স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলার কারণে পরিবারকে খুঁজে পাওয়া দুস্কর হয়ে দাঁড়ায়। তবে হাসপাতালে বায়োমেট্রিক সিস্টেম চালু হলে অজ্ঞাত রোগীর আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে খুব দ্রুত পরিচয় শনাক্ত করা যাবে এবং স্বজনরাও হারিয়ে যাওয়া প্রিয় মানুষকে ফিরে পাবে বলে বলে মত সংশ্লিষ্টদের।
সরকারের আন্তরিকতাই এ উদ্যোগ সফল হতে পারে জানিয়ে সাইফুল ইসলাম নেসার আরও বলেন, ‘সরকারের আন্তরিকতাই পারে এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান দিতে। তাই আমি চট্টগ্রাম পুলিশ কমিশনার মহোদয় এর মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আই সিটি মন্ত্রণালয়, নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি বিনীত অনুরোধ করবো, যাতে দ্রুত এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করার জন্য। এতে করে ১৬ কোটি মানুষ উপকৃত হবে। আর সরকারের ভাবমূর্তি আরো উজ্জ্বল হবে।’

 

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট