চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

স্বাস্থ্যসেবা খাতে বিশেষ নজর

ইমাম হোসাইন রাজু

১৮ অক্টোবর, ২০২০ | ৩:৪২ অপরাহ্ণ

চমেক হাসপাতাল কিংবা চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালেই নয়। দীর্ঘদিন ধরেই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকেও ‘স্বাস্থ্যের সিন্ডিকেটটি’ ভাগিয়ে নিয়েছে বিভিন্ন কাজ। যেখানে প্রভাবিত হয়ে এ কাজে সহযোগিতা করেছেন স্বয়ং কলেজেরই টেন্ডার শাখার কর্মচারীরা। এবার স্বাস্থ্যের এই সিন্ডিকেটটির বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য চেয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে (চমেক) চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক।

দুদক চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়-২ এর উপ-সহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে টেন্ডার ছাড়াও প্রায় দশটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে তথ্য চাওয়া হওয়া হয়। যদিও দুদকের বিভিন্ন কর্মকর্তার সাথে কথা বলে জানা যায়, শুধুমাত্র মেডিকেল কলেজ কিংবা চট্টগ্রামের সরকারি হাসপাতালই নয়। পুরো চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য সেবাখাত ঢেলে সাজাতেই অনুসন্ধানে নেমেছে সংস্থাটি। যেখানে অভিযুক্ত ব্যক্তি ও অনিয়মের বিষয়গুলো চিহ্নিত করে শতভাগ সেবা নিশ্চিত করতে চায় সংস্থাটি। ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর থেকে শুরু করে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের চিকিৎসাখাতে দুর্নীতির সাথে জড়িত এমন কর্মকর্তা থেকে শুরু করে কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাসহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করেছে দুদক। এছাড়া অভিযুক্ত বহুসংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যখাতে যুক্ত একাধিকজনের বিষয়ে

অনুসন্ধান কাজ চালিয়ে যাচ্ছে সংস্থাটি। এমনই পরিস্থিতিতে চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য সেবাখাতেও বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতি বন্ধে মাঠে নেমেছে দুদক কমিশন। তবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীরা বলছেন, স্বাস্থ্যখাতটি একটি দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত। কিন্তু এ খাতেই যেন সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি। করোনাভাইরাসের মতো মাহামারীতেই এ চিত্র দেখেছে দেশবাসী। তাই স্বাস্থ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ এ সেবাখাতে শতভাগ সেবা নিশ্চিতে দুদক বড় ভূমিকা রাখতে পারে বলেও মন্তব্য করেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) চট্টগ্রামের সভাপতি এডভোকেট আখতারুল কবির চৌধুরী।

তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘দেরিতে হলেও দুদক দেশের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় নিয়ে কাজ করছে। তবে অনুসন্ধানের এ কার্যক্রমে যেন সঠিক তথ্যটি তারা তুলে আনতে পারে। যেন অভিযুক্ত ব্যক্তিকে বাদ দিয়ে নিরীহ কোন মানুষকে হয়রানি করা না হয়, সেদিকে অবশ্যই নজর দিতে হবে। গভীরে গিয়ে যারা এসব দুর্নীতির সাথে জড়িত, তাদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা খুবই প্রয়োজন। আশাকরে দুদক নিরপেক্ষ থেকে সে কাজটি করে যাবে।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা পূর্বকোণকে বলেন, ‘স্বাস্থ্য সেবাখাত নিয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজর রয়েছে। যার জন্য শুধু চট্টগ্রামেই নয়, দেশের সকল স্বাস্থ্যসেবাকে ঢেলে সাজাতে এবং দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধে এমন কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। অনুসন্ধানে যাদের বিরুদ্ধে এমন কিছু পাওয়া যাবে, তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ এর আগে গত ৪ অক্টোবর চমেক হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের বিভিন্ন তথ্য চেয়ে চিঠিও দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। চমেক হাসপাতালের পরিচালক ও জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের কাছে পৃথক নোটিশ দিয়ে তথ্য তলব করে সংস্থাটি। যাতে বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ) চট্টগ্রাম শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরীর বিরুদ্ধে ‘টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, বদলি, নিয়োগ বাণিজ্য, ক্লিনিক ব্যবসা, কমিশন ব্যবসাসহ জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ’র অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে বেশ কিছু তথ্য তলব করা হয়।

সর্বশেষ গত ১১ অক্টোবর একই বিষয়ে তথ্য চেয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষকে চিঠি দেয় দুদক। দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়-২ এর উপ-সহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিনের স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে ২০১০ সাল থেকে অদ্যাবধি পর্যন্ত কলেজের যাবতীয় কার্যাদেশ যারা পেয়েছেন এবং যারা টেন্ডার শাখায় কর্মরত রয়েছেন। এছাড়া প্রায় দশটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য চাওয়া হয় তাতে।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট