চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

হাম-রুবেলার ঝুঁকিতে শিশুরা !

ইমাম হোসাইন রাজু 

১৭ অক্টোবর, ২০২০ | ১:৩৩ অপরাহ্ণ

চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের আতঙ্ক এখন বিশ্বজুড়ে। বাংলাদেশেও ক্রমশ বাড়ছে এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যবিভাগ যখন এ ভাইরাস নিয়ে চিন্তিত, ঠিক তখনই স্বাস্থ্যবিভাগের রোগ নিরীক্ষণের তথ্য বলছে, টানা অগ্রগতির পরও গেল তিন বছর ধরে হাম রোগের প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পেয়েছে। যা এখনও বিদ্যমান। ফলে শিশুরা হাম ও রুবেলা রোগজনিত মৃত্যুর ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

স্বাস্থ্য বিভাগের মতোই এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছে শিশুদের সুরক্ষা নিয়ে কাজ করা ইউনিসেফও। সংস্থাটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ২০১৭ সালের পর থেকে হাম নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়েছে। দ্রুত এ রোগ নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হলে দক্ষিণ এশিয়াকে স্বাস্থ্যখাতে আরেকটি জরুরি অবস্থার মুখোমুখি হতে হবে। স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যে জানানো হয়, ২০১৫ সালে প্রতি দশ লাখে হাম রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ দশমিক ৬ জন। যা ২০১৯ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭ দশমিক ১ জনে। এরমধ্যে ওই বছর দেশে ৮২ টি হাম-রুবেলার প্রকোপ হয়েছে। অর্থাৎ বিগত কয়েক বছরে আবারও দেশে হাম-রুবেলার প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে পোলিওর পর এ বার দেশকে ২০২৩ সালের মধ্যে হাম ও রুবেলা মুক্ত করতে উদ্যোগী হল কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য বিভাগ। লক্ষ্য ছুঁতে প্রায় পাঁচ বছর পর হাতে নেয়া হয়েছে দেশ জুড়ে টিকাদান কর্মসূচি। ন’মাস থেকে ১০ বছর বয়সী শিশুকে টিকার আওতায় আনার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যেই জাতীয় হাম রুবেলা ক্যাম্পেইন-২০২০ বাস্তবায়নে প্রস্তুতিও শেষ করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এরমধ্যে শুধুমাত্র চট্টগ্রাম জেলার ১৫ উপজেলায় প্রায় সাড়ে ১৫ লাখ শিশুকে আনা হচ্ছে হাম-রুবেলা টিকার আওতায়। বিষয়টি পূর্বকোণকে নিশ্চিত করেছেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি। তবে এ কার্যক্রম কবে শুরু হবে, তা এখনও পরিষ্কার করেনি স্বাস্থ্য বিভাগ। যদিও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরিস্থিতি ঠিক থাকলে আগামী মাসেই এ কার্যক্রম শুরু হবে।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যে জানা যায়, চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলার প্রায় ৫ হাজার স্কুলে পরিচালিত হওয়ার কথা ছিল টিকা কার্যক্রম। তবে বর্তমান পরিস্থিতির বিবেচনায় এনে স্কুল বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবর্তে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দেয়া হবে এ টিকা। এরমধ্যে চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলায় কেন্দ্র রয়েছে ৪ হাজার ৮শ। ইতোমধ্যে শিশুর লক্ষ্যমাত্রাও নির্ধারণ করেছে সিভিল সার্জন কার্যালয়। এরমধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে ১৫ উপজেলার প্রায় সাড়ে ১৫ লাখ শিশুকে এ টিকা দেয়ার লক্ষ্যমাত্রাও প্রস্তুত করেছে সংশ্লিষ্ট বিভাগ। তবে সিটি কর্পোরেশন এলাকার লক্ষ্যমাত্রা তৈরি করা হলেও এ হিসাব পাওয়া যায়নি।
চিকিৎসকরা বলছেন, হাম-রুবেলা রোগ সব বয়সী মানুষের মধ্যেই হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে সাধারণত শিশুদের মাঝে এ রোগের প্রকোপ বেশি। এতে আক্রান্ত শিশুদের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং মৃত্যু ঝুঁকি বেশি হতে দেখা যায়। তারা নিউমোনিয়া, অপুষ্টি, ডায়রিয়া, অন্ধত্ব, এনকেফালাইটিস এবং বধিরতার মতো জটিল সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারে। তাই শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিতে ন’মাস বয়স থেকে দশ বছর বয়সী সকল শিশুকে টিকা দেয়া জরুরি।

সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি পূর্বকোণকে বলেন, হাঁচি ও কাশির মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এ রোগ। আক্রান্ত হওয়ার পর বেশিরভাগ শিশুই নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, অপুষ্টিসহ যক্ষ্মার মতো মারত্মক রোগে ভুগে থাকে। অনেক সময় তাদের মৃত্যুও হয়। তবে টিকা দেয়া হলে হাম-রুবেলা রোগের প্রাদুর্ভাব বহুলাংশে হ্রাস পাবে।’

এদিকে, চলতি বছরের ১৮ মার্চ হতে ১১ এপ্রিল তারিখে প্রস্তাবিত হাম রুবেলা ক্যাম্পেইন ২০২০ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা কোভিড-১৯ এর কারণে স্থগিত করে স্বাস্থ্য বিভাগ। তবে গেল ১৩ অক্টোবর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডাইরেক্টর ডা. মো. শামসুল হকের স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, শীঘ্রই স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্থগিত হওয়া হাম-রুবেলা ক্যাম্পেইন পুনরায় চালু করা হবে। এ বিষয়ে সকল সিভিল সার্জন ও সংশ্লিষ্ট বিভাগকে প্রস্তুতি নেয়ার কথাও উল্লেখ করা হয় ওই চিঠিতে। তাতে বলা হয়, ‘বিভিন্ন সময়ে হাম ক্যাম্পেইন ও হাম-রুবেলা ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা সত্ত্বেও রোগ নিরীক্ষণ তথ্য অনুযায়ী ২০১৭ সাল থেকে দেশব্যাপী হাম রোগের প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পেয়েছে এবং তা এখনও বিদ্যমান আছে। ফলে উদ্দিষ্ট শিশুরা হাম ও রুবেলা রোগজনিত মৃত্যুঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।’ তবে এ ক্যাম্পেইন প্রতিবারের মতো এবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে না হয়ে ছয় সপ্তাহব্যাপী কমিউনিটি টিকাদান কেন্দ্রের মাধ্যমে পরিচালিত হবে।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট