চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

চমেক চিকিৎসকসহ ৪ জনকে দুদকে তলব

দুদকের নজর দুই হাসপাতালে

ইমাম হোসাইন রাজু

৫ অক্টোবর, ২০২০ | ২:৪৭ অপরাহ্ণ

একই ব্যক্তি কিংবা একই প্রতিষ্ঠান। বছর ঘুরে সব টেন্ডারেই রয়েছে তাদের নাম। খাদ্য সরবরাহ, যন্ত্রপাতি ক্রয় এবং জনবল নিয়োগেও ঘুরে ফিরে রয়েছে নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। মনের জোরে টেন্ডারে অংশগ্রহণ করলেও ‘অজানা’ কারণেই বাদ পড়ে যায় নতুন প্রতিষ্ঠানগুলো। মূলত নির্দিষ্ট একটি সিন্ডিকেটই নিয়ন্ত্রণ করতেন এসব যাবতীয় কার্যক্রম।
অভিযোগ আছে, নগর আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ও বিএমএ’র নেতা ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরীর বিরুদ্ধে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। চট্টগ্রামের সরকারি দুই হাসপাতালের সকল প্রকার ‘টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ’ করেছেন তিনি। এ দুই হাসপাতালের সকল নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্যসহ একটি নির্দিষ্ট সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মালিক হয়েছেন বিপুল অর্থেরও। এরমধ্যে শুধুমাত্র গেল ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরেই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের প্রায় অর্ধশত কোটি টাকার টেন্ডার একাই নিয়ন্ত্রণে রেখেছিলেন তিনি। ইতোমধ্যে যার অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক।
এরমধ্যে গতকাল রবিবার অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে চমেক হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের বিভিন্ন তথ্য চেয়ে চিঠিও দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। চমেক হাসপাতালের পরিচালক ও জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের কাছে পৃথক নোটিশ দিয়ে তথ্য তলব করে দুদক। যাতে ‘টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, বদলি, নিয়োগ বাণিজ্য, ক্লিনিক ব্যবসা, কমিশন ব্যবসাসহ ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরীর জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে তলব করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। এরমধ্যে, হাসপাতাল দুটোর ২০০৮ সাল থেকে সকল টেন্ডারের মাধ্যমে যত প্রকল্প বাস্তবায়ন ও সরঞ্জাম সংগ্রহ করা হয়েছে তার নথি তলব করেছে দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা। একই সাথে নোটিশে এ পর্যন্ত আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে দুই হাসপাতালে নিয়োগকৃত জনবলের তালিকা চাওয়া হয়েছে। এছাড়া জমজম এন্টারপ্রাইজ, শাপলা এন্টারপ্রাইজ, সাদমান এন্টারপ্রাইজ, আলী এসোসিয়েট, এম রহমান এন্টারপ্রাইজ, জিসান এন্টারপ্রাইজ, ফৌরদৌস ট্রেডার্স, এস কে ট্রেডার্সসহ বেশ কিছু ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের এ পর্যন্ত পাওয়া সকল টেন্ডারের কমিটি ও যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত চাওয়া হয়। এছাড়া চমেক হাসপাতালের রেকর্ড কিপার মঈন উদ্দিন কীভাবে, কোন যোগ্যতায় টেন্ডারের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং বিনা অনুমতিতে তথ্য গোপন করে বিদেশ ভ্রমণের বিষয়ে জানতে চেয়েছে দুদক। এছাড়া চমেক হাসপাতালের রক্ত পরিসঞ্চালন বিভাগ ও স্টোরের সব নথিও তলব করা হয়। একই দিন পৃথক আরেকটি তথ্য তলবের চিঠিতেও টেন্ডারসহ যাবতীয় ঠিকাদারের তথ্যের পাশাপাশি চট্টগ্রাম সরকারি জেনারেল হাসপাতালের হিসাবরক্ষক মো. ফোরকানের বিষয়ে জানতে চেয়েছে দুদক।
এ বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পরিচালকের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি। তবে চিঠি পাওয়ার বিষয়টি পূর্বকোণকে স্বীকার করলেও এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. অসীম কুমার নাথ।
দুদক সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের শুরুতে বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ) চট্টগ্রাম শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরীর বিরুদ্ধে স্বাস্থ্যখাতকে পুঁজি করে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে জমা পড়ে। পরে তা প্রধান কার্যালয়ের কমিশন কর্তৃক যাচাই বাছাইশেষে গত ২৬ আগস্ট অনুসন্ধানের অনুমতি দিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২ এ পাঠানো হয়। এরপর থেকেই বিস্তারিত অনুসন্ধানে নামে দুদক।
দুদকের অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের কোটি কোটি টাকার খাবার সরবরাহ, আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে জনবল নিয়োগ, যন্ত্রপাতি সরবরাহসহ সকল টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করেন ডা. ফয়সাল ইকবাল। যিনি নিজেকে ক্ষমতাশীন দলের প্রভাব খাটিয়ে নামে বেনামে চট্টগ্রাম-ঢাকা ও নিজ গ্রাম রাঙ্গুনিয়াতে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন। যিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্যাডে প্রভাব খাটিয়ে টেন্ডার বাগিয়ে নেয়াসহ জটিল ও কঠিন শর্ত সংযোজন করে অন্য কোন ঠিকাদারকে টেন্ডারে অংশ নিতেও দেন না তিনি। ফয়সলের নেতৃত্বাধীন সিন্ডিকেট বাজার দরের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি দামে খাবার ও চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ করে থাকেন। একই সাথে আউটসোর্সিংয়ের এক-তৃতীয়াংশ জনবল সরবরাহ করে বাকিগুলোর ভুয়া নাম পরিচয় দিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করেন ওই সিন্ডিকেটটি।
ডা. ফয়সাল ইকবালের বক্তব্য :
দুদকের অনুসন্ধানের বিষয়ে জানতে গেল ২০ সেপ্টেম্বর ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘কে কোন দিকে ব্যবসা করতেছে, সেটাতো আমার সাথে যুক্ত নয়। আমি কোথাও ব্যবসা করি কি না, কোন প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত কি না বা হাসপাতালে গিয়ে কাউকে প্রভাবিত করছি কিনা সেটা অনুসন্ধান করে বের করুক। তাতে আমার কোন সমস্যা নেই।’
পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট