চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ছোট ত্রুটিতেও ঢাকানির্ভর

ইমাম হোসাইন রাজু

২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০ | ১:১৩ অপরাহ্ণ

বছর দু’য়েক আগে চমেক হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগে স্থাপন করা হয় নারীদের স্তন টিউমার ও ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগ নির্ণয়ের ম্যামোগ্রাফি মেশিন। কিন্তু স্থাপনের কিছুদিনের মাথায় মেশিনের ত্রুটির কারণে বন্ধ থাকে কার্যক্রম। নিয়মানুসারে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করা হলেও সাড়া পেতেই সময় গড়ায় প্রায় মাস ছয়েক। ওই সময়ে ইঞ্জিনিয়ার এসে জানতে পারলেন শুধুমাত্র ইউপিএস’র ত্রুটির কারণেই এমন পরিস্থিতি।
অথচ ছোট্ট এ ত্রুটি ধরার মতো বৃহত্তর চট্টগ্রামের সরকারি এ হাসপাতালে নেই কোন বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ার কিংবা ইলোক্ট্রো মেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারও। জনবল তো দূরের কথা, প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ ধরনের কোনো পদই সৃষ্টি হয়নি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে। অথচ স্বাস্থ্যসেবার মানদন্ড অনুযায়ী প্রতি ৫০ বেডের রোগীর চিকিৎসা যন্ত্রপাতি দেখভালের জন্য একজন এমএসসি পর্যায়ের প্রকৌশলীসহ অন্তত চারজন দক্ষ জনবল থাকা দরকার। তাই নিরাপদ ও শতভাগ সফল স্বাস্থ্যসেবার জন্য বায়োমেডিকেলসহ সংশ্লিষ্ট ইঞ্জিনিয়ার পদ সৃষ্টির তাগিদ চিকিৎসকদের। তা না হলে এসব মূল্যবান যন্ত্রপাতির কার্যকারিতা নিয়ে যেমন প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, তেমনি দীর্ঘদিন পড়ে থাকার ফলে সেগুলোর আয়ুস্কালও কমে যায় বলে অভিমত সংশ্লিষ্টদের।
তথ্য মতে, সরকারি হাসপাতালগুলোতে বেশিরভাগ মেশিনই মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সরবরাহ হয়ে থাকে। এর বাইরে হাসপাতালের নিজস্ব বরাদ্দে কিছু মেশিন বা যন্ত্রাংশ ক্রয় করা হয়। অনেক সময় বিভিন্ন ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানও দান করে থাকেন প্রয়োজনীয় কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষার যন্ত্রও। কিন্তু এসব মেশিন ত্রুটি সারাতে নির্ভর করতে হয় সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের ওপরই। তাও চুক্তিপত্র অনুযায়ী কিংবা ওয়েরেন্টির মেয়াদকাল পর্যন্ত। এরমধ্যে অনেকেই সময় মতো সাড়া দিলেও বেশিরভাগই পিছুটানে থাকেন। যাতে দিনের পর দিন পড়ে থাকে ভারী এসব যন্ত্রপাতি।
অন্যদিকে সরবরাহের মেয়াদকাল শেষ হওয়ার পর পুরো সময়জুড়েই দেশের সকল সরকারি হাসপাতালে মেডিকেল যন্ত্রপাতি মেরামত, রক্ষণাবেক্ষণ ও চালু করাসহ যাবতীয় দেখভাল করে থাকেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ন্যাশনাল ইলেকট্রো-মেডিক্যাল ইকুইপমেন্ট মেইনটেন্যান্স ওয়ার্কশপ এন্ড ট্রেনিং সেন্টার (নিমিও এন্ড টিসি)। তাতেও রয়েছে নানান সীমাবদ্ধতার। কারণ, মেশিনের গুরুত্ব, বাজেট বরাদ্দ, মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ও প্রয়োজনে বাইরে থেকে টুলস আনা। আর মেরামতের জন্য প্রকৌশলীর সংকট তো রয়েছেই। এসব কারণেই নতুন কোন মেশিন যুক্ত হলেও ত্রুটি ধরা পড়ার পরই ভোগান্তিতে পড়তে হয় সাধারণ রোগীদের। পাশাপাশি রাজস্ব হারাচ্ছে সরকারও।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের রেডিওলজি এন্ড ইমেজিং বিভাগের প্রধান ডা. সুভাষ মজুমদার পূর্বকোণকে বলেন, ‘যদি স্থানীয় পর্যায়ে বায়োমেডিকেলসহ সংশ্লিষ্ট ইঞ্জিনিয়ার থাকা বেশি প্রয়োজন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক বৃহৎ এ হাসপাতালেই নয় পুরো বিভাগেই তা নেই। যার কারণে ছোটখাটো কোন কাজ করতে হলেও ঢাকা থেকে ইঞ্জিনিয়ারকে আসতে হয়। অনেক সময় মাসের পর মাস অপেক্ষাও করতে হয়। হাসপাতালে না হোক, অন্তত চট্টগ্রাম বিভাগসহ প্রতিটি বিভাগে কিছু ইঞ্জিনিয়ার দিয়ে একটি শাখা গড়লে তাতে কিছুটা হলেও এমন ভোগান্তি লাঘব হবে।’
এ চিকিৎসকের মতোই বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ার পদ সৃষ্টির কথা জানিয়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. শামীম হাসান পূর্বকোণকে বলেন, ‘পদ সৃষ্টি করে জনবল নিয়োগ হলে অবশ্যই তার সুফল আসবে।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের শুধুমাত্র রেডিওলজি এন্ড ইমেইজিং বিভাগেই কয়েক কোটি টাকার মূল্যবান যন্ত্র রয়েছে। এছাড়া রেডিওথেরাপি, প্যাথলজি, হৃদরোগ বিভাগ, সার্জারি বিভাগসহ প্রতিটি বিভাগেই কমবেশি কোটি কোটি টাকা মূল্যের মেশিনারিজ যন্ত্র রয়েছে। তারমধ্যে বছর বছর নতুন করে কোটি টাকার যন্ত্রও যোগ হচ্ছে। তাই এসব মূল্যবান যন্ত্রাংশ পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বায়োমেডিকেলসহ সংশ্লিষ্ট ইঞ্জিনিয়ারের পদ সৃষ্টি করে নিয়োগের মত সংশ্নিষ্ট চিকিৎসকরা।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবীর পূর্বকোণকে বলেন, ‘আমার জানা মতে বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারের কোন পদই নাই। বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ার কোন ডিপার্টমেন্টও নেই। বিষয়টি দেখতে হবে। তবে পদ সৃষ্টির বিষয় মন্ত্রণালয়ে চিন্তা করবে। এটা আমাদের লেভেলে চিন্তা করার বিষয় না।’

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট